প্রোটিন জাতীয় খাবার কী কী- প্রোটিন কতটা খাওয়া উচিত?

প্রোটিন জাতীয় খাবার-মানব দেহে প্রোটিনের গুরুত্ব কতটা তা আমরা সবাই জানি। প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ আমাদের একান্ত অপরিহার্য। কারণ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, দেহের বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়পূরণ রোধ করে, এবং দেহে শক্তির যোগান দেয়। তাই আমাদের উচিত খাবার তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখা।

আমরা বর্তমানে অনেকেই প্রোটিন জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করি। তবে আমাদের দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রোটিন জাতীয় খাবার বর্জন করি। কিন্তু এটি আমাদের করা উচিত নয়। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাই আমাদের দেহের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রতিদিন পরিমাণমতো প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।

প্রোটিন জাতীয় খাবার কী কী

আজ আপনাদের জানাবো প্রোটিন কি,প্রোটিন এর কাজ কি, প্রোটিন কতটা খাওয়া উচিত,প্রোটিন এর উপকারিতা,প্রোটিন এর অভাবে কোন রোগ হয়,শরীরে প্রোটিন বেশি হলে কি হয়,প্রোটিন ঘারতি লক্ষণ,প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।

প্রোটিন কি?

প্রোটিন হচ্ছে একটি পুষ্টি উপাদান যা মানবদেহের বিকাশ ঘটায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তবে প্রোটিন কার্বন হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। আমাদের খাদ্যের উপাদান ৬টি। আর এই ৬টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন এর কাজ কি?

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে প্রোটিন থাকে। প্রোটিনের কার্যকারিতা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেরকম নতুন কোষ উৎপন্ন করতে, কোষগুলো কে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং পুনরায় কোষগুলির কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম, হরমোন এবং ইমিউন সেল বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কোষ উৎপন্ন করতে।

ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা

আমাদের শারীরিক গঠন এবং শারীরিক শক্তি কে উন্নত করতে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। বিশেষ করে ছোট শিশু এবং গর্ভবতী মায়ের শারীরিক গঠন উন্নতির জন্য প্রোটিনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন কতটা খাওয়া উচিত?

প্রোটিন কতটা খাওয়া উচিত সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমাদের ওজনের উপর। যেরকম ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের খাওয়া উচিত। তবে সাধারণ হিসেব অনুযায়ী-

১।একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ৫৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

২।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

প্রোটিন এর উপকারিতা

প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শারীরিক গঠনকে উন্নত করতে এবং আমাদের শরীরের মাংসপেশী কে বৃদ্ধি করতে। নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শারীরিক শক্তি বা বল বৃদ্ধি হয়। তাই ক্রীড়াবিদ বা অ্যাথলেটস দের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

১।আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং প্রোটিন এর নির্দিষ্ট কার্যকারিতা রয়েছে। তবে অন্যান্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস এর তুলনায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তার কারণ প্রোটিন থেকে এক প্রকার হরমোন প্রস্তুত হয় যার নাম ঘেরলিন। যা আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। তাই আমরা অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা কমিয়ে যদি প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। তবে ক্যালোরির পরিমাণ আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

২।আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি প্রোটিন প্রস্তুত হয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের সাহায্যে। তাই অনেকের ধারণা আমরা যদি বেশি পরিমাণ প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং আমরা জানি ক্যালসিয়াম এক প্রকার ক্ষার যা ওই অ্যাসিড দ্বারা নিরপেক্ষ অথবা অকেজো হয়ে যাবে। যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করার পরিমাণ কমে যাবে। তবে তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।

৩।প্রোটিনের উপকারিতা আমাদের শরীরের ওজন কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের বিপাকীয় হার বা মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের শরীরে অনেক বেশি পরিমাণ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।

আমরা জানি প্রতিদিন যদি আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরি ক্ষয় হয় তাহলে আমাদের ওজন কমানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যদিও এই বিষয়ে বলে রাখা উচিত বিপাকীয় হার বা মেটাবলিজম রেট একটি সাধারণ অনুপাত যা বর্ণনা করে আমরা যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করছি তার বিনিময়ে কতটা এনার্জি বা শক্তি আমাদের শরীর উৎপন্ন করছে।

৪।আমাদের রক্তের উচ্চচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বিভিন্ন রোগের কারণ যেরকম হৃদয় সংঘটিত রোগ, স্ট্রোক, এমনকি কিডনি সংঘটিত রোগ। কিন্তু যদি আমরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রক্তচাপ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে আমাদের ওই জাতীয় রোগ বা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শুধু তাই নয় বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের এল-ডি-এল ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে বা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৫।বড় শারীরিক অসুস্থতা অথবা কোন দুর্ঘটনা বশত আমাদের যখন কোন শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি হয় তারপর আমাদের নিয়মিত প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত। তার কারণ আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি, প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শারীরিক গঠন এবং মাংসপেশী কে উন্নত করতে। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?

৬।যদিও প্রোটিনের সাথে ক্যান্সার এর কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই তবে ২০১৪ তে একটি পরীক্ষায় পাওয়া যায় যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে তাদের ক্যান্সার হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়। তবে প্রোটিন জাতীয় খাবার বলতে এখানে সেই সমস্ত খাবার কে বোঝানো হয়েছে যাদের মধ্যে প্রোটিন এবং হেলদি ফ্যাট এর পরিমাণ অনেক বেশি যেরকম, বিভিন্ন প্রকার বাদাম, বিভিন্ন প্রকার ডাল, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য।

প্রোটিন এর অভাবে কোন রোগ হয়

আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি প্রোটিন আমাদের শরীরের মাংসপেশী, ত্বক, নখ, চুল, এনজাইম, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে সব থেকে বেশি আফ্রিকা মহাদেশের উষ্ণ অঞ্চলগুলিতে এবং এশিয়া মহাদেশের উত্তর দিকের দেশ গুলির মধ্যে প্রচুর শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রোটিনের অভাব দেখা গেছে। গণনা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে প্রোটিনের অভাব দেখা যায়।

১।বিভিন্ন প্রকার প্রোটিনের অভাবে আমাদের শরীরে কোয়াশিওরকোর নামক একপ্রকার ম্যালনিউট্রেশন রোগ হয়। প্রোটিনের অভাবে আমাদের শরীরের কোষ গুলি তরল পদার্থ ধরে রাখে যাকে এডিমা বলে। অল্প অল্প করে আমাদের পেটের মধ্যে তরল পদার্থ জমতে থাকে এবং আমাদের পেট ফুলতে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরের আকার পরিবর্তন হয়ে যায়।

২।কোয়াশিওরকোর হলে আমাদের ফ্যাটি লিভার বা১ যকৃত সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এমনকি পরবর্তীকালে আমাদের যকৃত বা লিভার সম্পূর্ণরূপে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

৩।প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের ত্বক, চুল এবং নখ কে সৃষ্টি করতে। তাই প্রোটিনের অভাবে আমাদের ত্বক খুব রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। আমাদের ত্বকের রং অনেক বেশি লালচে হয়ে পড়ে। প্রোটিনের অভাবে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আমাদের নখ অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই তা ভেঙে যায়।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

৪।প্রোটিনের অভাবে আমাদের মাংসপেশী গুলি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে যার ফলে আমাদের শারীরিক কর্ম ক্ষমতা অনেক কমে যায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ মাংসের অভাবে আমাদের শারীরিক গঠন ও নষ্ট হয়ে যায়।

৫।প্রোটিনের অভাবে আমাদের শুধুমাত্র মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না আমাদের শরীরের হাড় গুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রোটিনের অভাবে আমাদের শরীরের হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করার সাথে প্রোটিন যুক্ত খাবারও গ্রহণ করা আমাদের শরীরের হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬।প্রোটিনের অভাবে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা তার কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে এবং তাদের শারীরিক উন্নতি খুব ভালো মতো হয়। তবে প্রোটিনের অভাবে শিশুদের শারীরিক বিকাশে সমস্যা হয় এবং তাদের মধ্যে নানান রকমের সমস্যা হয় বিশেষ করে কোয়াশিওরকোর।

৭।প্রোটিন সাহায্য করে আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম সৃষ্টি করতে এবং এই এনজাইম গুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম গঠন করতে সাহায্য করে। তাই প্রোটিনের অভাবে আমাদের ইউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে আমাদের খুব সহজে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়াল ফাংগাল এবং ভাইরাল সংগঠিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

শরীরে প্রোটিন বেশি হলে কি হয়

প্রতিদিন আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের প্রোটিন এর কারণে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক থাকে না। তবে আমরা যদি অত্যাধিক পরিমাণ প্রোটিন পাউডার অথবা হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মধ্যে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেরকম-

১।আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে খুব বেশি পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তার কারণ অত্যাধিক পরিমাণ প্রোটিন আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি রূপে সঞ্চয় হতে থাকে।

২।আমরা যদি অত্যাধিক পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কমতে থাকে যার ফলে আমাদের কার্বোহাইড্রেট ক্ষয় হয়ে শক্তি উৎপন্ন করার পরিমাণ কমতে থাকে এবং আমাদের বিপাকীয় হার বা মেটাবলিজম রেট নিয়ন্ত্রণে থাকে না যাকে আমরা কিটোসিস বলে থাকি। যার জন্য আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর প্রক্রিয়াতে সমস্যা হয়।

৩।যদি আমরা শুধুমাত্র প্রোটিন যুক্ত খাবারের উপর নির্ভর করে থাকি তাহলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে না। যার ফলে আমাদের শরীরে ফাইবারের পরিমাণ কমতে থাকে। যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪।আমাদের শরীরে প্রোটিন এর পরিমাণ বেশি হলে জলের পরিমাণ কমতে থাকে তার কারণ আমাদের শরীরে উৎপন্ন হওয়া অত্যাধিক পরিমাণ নাইট্রোজেন এবং জল রেচনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাই খুব বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে জলের অভাব অথবা ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।

৫।খুব বেশি পরিমাণ প্রোটিন অথবা অ্যামাইনো অ্যাসিড এর কারণে আমাদের শরীরে অত্যাধিক পরিমাণ নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়। এই নাইট্রোজেন আমাদের রেচন এর মাধ্যমে শরীর থেকে বার হয়ে যায় তবে খুব বেশি নাইট্রোজেন আমাদের কিডনি এর জন্য একদমই ভালো নয়। তাই খুব বেশি পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করলে আমাদের কিডনিতে সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।

৬।প্রোটিনযুক্ত খাবার হজম করা আমাদের শরীরের জন্য সামান্য কঠিন তাই খুব বেশি পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের হজম শক্তিতে সমস্যা হতে পারে এবং আমাদের অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং বমি ভাব ইত্যাদি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

প্রোটিনের ঘাটতি লক্ষণ

নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করলে আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। আর এই রোগগুলো আমাদের নিরাময় হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রোটিন জাতীয় খাবার না খেলে আমাদের দেহে যে ধরনের সমস্যাগুলো হয় তা হচ্ছে-

১।দেহে ক্লান্তি ভাব চলে আসে।

২।অধিক পরিমাণে ক্ষুধা বেড়ে যায়।

৩।অল্প বয়সে বার্ধক্য চলে আসে।

৪।অধিক পরিমাণে চুল পড়ে যায়।

৫।চোখ ও হাত-পা ফুলে যায়।

৬।ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়।

৭।নখ সাদা হয়ে যায়।

৮।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৯।দেহের গঠন বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।

এছাড়াও আর অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা

আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কোন না কোন প্রোটিন জাতীয় উপাদান থাকে। আমাদের দেহে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখা একান্ত কর্তব্য। আমাদের দেহে প্রোটিনের ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  প্রতিদিনের খাবার তালিকা প্রোটিন রাখা উচিত। প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলোকে দুটি ভাগে ভাগ যায়। যথা

১।প্রাণীজ জাতীয় প্রোটিনঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা এবং মাছের ডিম ইত্যাদি।

২।উদ্ভিজ্জ জাতীয় প্রোটিনঃ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং ফুলমূল।

প্রাণীজ জাতীয় প্রোটিন

যে সকল প্রাণীজ জাতীয় খাদ্য প্রোটিন পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হল-

১।মাংস

আমরা বিভিন্ন ধরনের মাংস খেয়ে থাকি (যেমনঃ মহিষের মাংস, গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস এবং হাঁসের মাংস ইত্যাদি)। আর মাংস তে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন। যা আমাদের দেহের প্রোটিনের চাহিদ অনেক বেশি মিটিয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের গো-মাংস আমাদের দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা ডায়েট করবেন তারা চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খাবেন, তাহলে আপনাদের দেহের প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে। মুরগির বুকের মাংস রয়েছে ভিটামিন বি। যা আমাদের দেহের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে,  মস্তিষ্ক ভালো রাখে, কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কমায় এবং এলডিএল কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

২।ডিম

অত্যন্ত সহজলভ্য খাবার উপাদান হচ্ছে ডিম।  আর এই ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। যা আমাদের দেহের বিভিন্ন গঠনে সাহায্য করে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ডিমের মধ্য চাহিদার তুলনায় বেশি প্রোটিন থাকে। তাই আমাদের প্রত্যেকের ডিম খাওয়া একান্ত অত্যাবশ্যকীয়।

৩।চিংড়ি মাছ

চিংড়ি মাছ আমরা সকলেই খেতে পছন্দ করি। আর চিংড়ি মাছে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম চিংড়িতে রয়েছে ২৪ গ্রাম প্রোটিন। যা আমাদের প্রতিদিনের জন্য পর্যাপ্ত।

৪।দুধ

প্রোটিনের জন্য দুধ হচ্ছে আদর্শ। আমাদের প্রত্যেকদিন ছোট-বড় সকলের এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত। কারণ ৮ আউন্স দুধে রয়েছে ৮ গ্রাম প্রোটিন।

৫।দই

আপনারা যদি কেউ দুধ খেতে পছন্দ না করেন তবে দই খেতে পারেন। মিষ্টি দই বা টক দই যেকোনো একটি খেলেই হবে। তবে টক দই খাওয়া উচিত। কারন টক দই আপনার হজমে সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম টক দইয়ে  ১৮ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন থাকে।

৬।মাছ

মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে মিঠা পানির মাছের প্রোটিন বেশি পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে ২১ থেকে ২৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। আর মাছ খাওয়ার ফলে আপনার ত্বক, চুল, নখ এবং চোখ ভালো রাখার পাশাপাশি হৃদপিন্ডের কার্য সচল রাখে।

৭।টার্কি মুরগি

আমাদের দেশে প্রচলিত মুরগি হচ্ছে টার্কি মুরগি। এই  মুরগি আমাদের প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে ৫ গ্রাম প্রোটিন দেয়। আর এটি আমাদের দেহে আমিষের চাহিদা অধিকাংশ পূরণ করে।

৯।কলিজা

কলিজা (মুরগির কলিজা, খাসির কলিজা, গরুর কলিজা) ইত্যাদি প্রাণীর কলিজায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। আর এই প্রোটিন আমাদের দেহে অনেকাংশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম কলিজাতে রয়েছে ২০ গ্রাম প্রোটিন যা আমাদের দেহের জন্য পর্যাপ্ত।

১০।শুটকি মাছ

আমরা অনেকেই শুটকি মাছ পছন্দ করি না। তবে আপনি কি জানেন এই শুটকি মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম শুটকি মাছে ৬২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। যা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা পরিপূর্ণ করে তোলে।

উদ্ভিজ্জ জাতীয় প্রোটিন

প্রাণিজ জাতীয় খাদ্য তুলনায় উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্যে প্রোটিন বেশি উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। চলুন জেনে নিই উদ্ভিদ জাতীয় কোন কোন খাদ্যে প্রোটিন রয়েছে।

১।আলু

আলু একটি অতি জনপ্রিয় এবং সাধারণ খাবার। কিন্তু এই সাধারণ খাবারে রয়েছে অসাধারণ প্রোটিনের ক্ষমতা। তাই আপনারা যদি একটি মাঝারি আলুতে প্রায় চার গ্রামের মতো প্রোটিন পাবেন। আলোতে শুধু প্রোটিন নয় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।

২।ডাল

উদ্ভিদ জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম প্রোটিন উপাদান ডাল। ডালে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ভিটামিন বি, খনিজ লবণ এবং আয়রন। ডাল হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ডাল আপনার হৃদযন্ত্র সচল রাখবে।

৩।ওটস

প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হচ্ছে ওটস আর এতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইডেট পাওয়া যায়। আমাদের সকালের নাস্তা বা রাতের খাবারে আমরা ওটস রাখতে পারি। আর ওটসের  সাথে যদি কোন বাদাম বা ফল মিশিয়ে খায় তাহলে আমাদের পুষ্টিগুণসহ সবকিছুই বজায় রাখবে।

৪।বাদাম

বাদামে অধিক পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। বাদামে রয়েছে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। বাদাম নিয়মিত খেলে আপনার শরীরে কোনো ক্ষতি করবে না বরং আপনার স্বাস্থ্যের অনেক সুবিধা করবে। বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে আপনাকে নিরাময় প্রদান করবে। এছাড়াও প্রতিদিন বাদাম খেলে আপনার ত্বক সুস্থ থাকবে।

৫।পেয়ারা

পেয়ারা ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এটিতে ভিটামিন-সি সহ অন্যান্য পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় ল। তাই প্রত্যেকদিন খাবার তালিকা যদি পেয়ারা রাখেন তাহলে মন্দ হয় না।

৬।মিষ্টি কুমড়ার বীজ

মিষ্টি কুমড়া প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে তবে মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রোটিন এবং খনিজ লবণের সমাহার। এটি খেলে আপনার দেহের ওজন দ্রুত হ্রাস করবে এবং মিষ্টি কুমড়ার বীজ শুকিয়ে তেলের সাথে মিশিয়ে দিলে  আপনার চুলের গোড়া শক্ত করবে।

৭।সয়াবিন

সয়াবিন প্রোটিনের অন্যতম উৎস। আর প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৫৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। আপনারা খাবার তালিকায় সয়াবিন অবশ্যই রাখবেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা আপনার প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।

৮।শিমের বিচি

শিমের বিচি আমরা অনেক পছন্দ করে থাকি।  বিশেষ করে শীতকালের শিমের বিচির চাহিদা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। তাই প্রতি ১০০ গ্রাম শিমের বিচি তে রয়েছে ২১ গ্রাম প্রোটিন। যা সুষম খাদ্য তালিকা সম্পূর্ণ করে তোলে।

৯।এভোক্যাডো

বিশ্বজুড়ে এভোক্যাডোর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কারণ পশ্চিমা দেশগুলোতে এভোক্যাডোর চাহিদা ব্যাপক আর এই এভোক্যাডো আপনার শরীরে  প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম এভোক্যাডোতে রয়েছে ৩-৫ গ্রাম এর মত প্রোটিন।

১০।যব

যব একটি প্রাকৃতিক উৎস। যা আমাদের দেহে প্রোটিনের চাহিদা অনেকাংশ মিটিয়ে থাকে। তাছাড়া এটি একটি প্রাচীন যুগের অতি পরিচিত একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম যবে রয়েছে ১৩ গ্রাম প্রোটিন।

প্রোটিন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তরঃ

১।​প্রোটিন কেন প্রয়োজন?

উত্তরঃশরীরের পেশি (Muscle) গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে সবথেকে বেশি। আর এই পেশি হল আমাদের শরীরের অন্যতম ভিত। পেশির সমস্যা হলে নানাভাবে তা জীবনে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।এছাড়া প্রোটিন আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে পারে।

২।প্রতিদিন কতটা প্রোটিন?

উত্তরঃআমাদের প্রতিটি মানুষের শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রোটিন খেতে হয়  এক্ষেত্রে হিসাব হল প্রতি কিলো ওজনে ১ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।

৩।​প্রোটিন যুক্ত খাবার কি কি?

উত্তরঃপ্রোটিন যুক্ত খাবারের ছড়াছড়ি। আমিষ খাবার পছন্দ হলে খেয়ে নিনন ডিম, মাছ, মাংস। এই সব খাবারে ভালো পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে।

৪।​কাদের প্রোটিন মানা?

উত্তরঃনা সেভাবে প্রোটিনে মানা বলা যাবে না। তবে কিডনি রোগীদের (Kidney Disease) প্রোটিন খেতে হয় মেপে। এক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে প্রোটিন খেলে কিডনিকে বেশি খাটতে হয়। এবার কিডনি বেশি পরিশ্রম

করলে শরীরে সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। ফলে কিডনি আরও দ্রুত খারাপ হয়। তাই এই মানুষগুলির প্রোটিন খাওয়া বাধা থাকে।

শেষকথাঃ

প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ আমাদের একান্ত কর্তব্য। নতুবা আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আর এই সমস্যা বেড়ে গেলে আমরা প্রতিবন্ধী বা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারি। তবে আমাদের প্রতিদিন খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় উপাদান রাখতেই হবে। তাহলে আমরা ভাল ফলাফল পাব এবং নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারব।

পোস্ট ট্যাগ

প্রোটিন জাতীয় ফল,প্রোটিন যুক্ত সবজি,কোন খাবারে কত প্রোটিন তালিকা,ডায়েটে প্রোটিন জাতীয় খাবার,প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা,গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাবার,সবচেয়ে বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার।

আরও-

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment