ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা – ভিটামিন এ এর উপকারিতা- অপকারিতা

ভিটামিন জাতীয় খাবার তালিকা – ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন এ এর সহায়তায় আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়। আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে না। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীর ভিটামিন এ এর চাহিদাকে পূরণ করতে পারে।

আজ আপনার জানতে পারবেন ভিটামিন এ কি, ভিটামিন এ এর রাসায়নিক নাম কি, ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজি, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার,ভিটামিন এ এর উপকারিতা,ভিটামিন এ এর অপকারিতা,ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত।ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা

ভিটামিন কি?

ভিটামিন এ হলো একটি Fat Soluble ভিটামিন যা স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গসমূহ সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

এটি প্রাকৃতিকভাবে অনেক ধরনের খাবারে পাওয়া যায় যা গ্রহণ করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চুল পড়া, ত্বকের সমস্যা, চোখের শুষ্কতার সমস্যা, রাতকানা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

Vitamin A এর ​​দুটি প্রাথমিক রূপ রয়েছে-

১। Vitamin A or Retinol & retinyl esters (প্রিফর্মড ভিটামিন এ বা রেটিনল এবং রেটিনাইল এস্টার)

২।Pro-vitamin A Carotenoid (প্রোভিটামিন এ ক্যারোটিনয়েড)

প্রোভিটামিন A এর সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল বিটা-ক্যারোটিন, তবে অন্যান্য রূপও রয়েছে যেমন আলফা-ক্যারোটিন এবং গামা-ক্যারোটিন। এই ক্যারোটিনয়েড গুলো শরীরে Vitamin A তে রূপান্তরিত হয়।

ভিটামিন এর রাসায়নিক নাম কি?

ভিটামিন এ এর রাসায়নিক নাম রেটিনল যা তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল। এই রেটিনল আমরা প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা পশুজাত দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে পেয়ে থাকি যেরকম দুধ, ঘি, পনির, ডিম, মাংস, বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার ইত্যাদি। তবে ভিটামিন এ এর আরেকটি উৎস বেটা ক্যারোটিন যাকে আমরা প্রোভিটামিন বলে থাকি। এই বেটা ক্যারোটিন বিভিন্ন সবজি এবং ফলের মধ্যে থাকে যা গ্রহণ করে আমাদের শরীর ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে।

কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?

যেহেতু ভিটামিন এ জলে দ্রাব্য নয় তাই খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির দিক থাকতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করব ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ করতে। তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা নিয়ে।

ভিটামিন জাতীয় খাবার তালিকা

কোন কোন খাবারে ভিটামিন এ আছে বা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গুলিকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি তার গুণগতমান এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।

মানবদেহ সুরক্ষায় প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে দেহে অবসাদ, ক্লান্তি, মানসিক চাপসহ বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরে বিভিন্ন কোষের স্বাভাবিকতায় সহায়তা করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে দেহের জন্য ক্ষতিকর রেডিকেল ধ্বংস করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে।

১।মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু ‘রাঙা আলু’ নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, মিষ্টি আলুতে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।পাশাপাশি এটি আয়রনের চমৎকার উৎস। এটি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

২।পাতাকপি

অন্য সবুজ সবজির মতো পাতাকপিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। পাতাকপি বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ।পাতাকপি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৩।কিসমিস

কিসমিস লাল রক্তকোষ সংশ্লেষণে সাহায্য করে। কিসমিস ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

৪।ব্রোকলি

ব্রোকলিতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বক সুন্দর করে। শরীরকে বিষমুক্ত করে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে।

৫।ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুম ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ সমৃদ্ধ। এটি দেহে পুষ্টির অভাব দূর করে।

৬।আম

ফলের রাজা আম। পাকা আমে ভিটামিন ‘সি’, ‘বি’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ও বিটা ক্যারোটিন থাকায় চোখ ভালো রাখে। এছাড়া এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি পরিমাণমত খাওয়াই ভালো।

৭।টমেটো

টমেটোতে রয়েছে লিকোফিন ও ভিটামিন ‘সি’-এর মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। প্রতিদিন এটি খেলে চামড়ায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে। টমেটো খেলে রক্তের লাল কণিকা বাড়ে এবং শরীরের ফ্যাকাসে ভাব ও রক্তস্বল্পতা দূর করে।

৮।পনির মাখন

পনির ও মাখন ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি পনির ও মাখন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। এক কাপে দুধ ১৪ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ পূরণ করে। এছাড়া এক টুকরো চিজ ১ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ প্রতিদিনকার ভিটামিন ‘এ’ পূরণ করে। হলুদ পনির শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৯।মিষ্টি কুমড়া

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার মিষ্টি কুমড়া। খেতেও সুস্বাদু। মিষ্টি কুমড়ায় ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’, ক্যারটিনয়েড, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ফলে ত্বককে ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

১০।পেঁপে

পেঁপে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি ফল। প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেলে ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধির কারণে এটি চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

১১।গাজর

গাজরের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিদিনের খাবারে গাজর রাখতে পারলে খুবই ভালো।গাজরের স্যুপ বা সিদ্ধ যা কিছু হতে পারে।

কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার কি কি

১২।পালং শাক

ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে পালং শাকে। ডিটক্স ড্রিংক থেকে স্যুপ, খিচুড়ি যা ইচ্ছে তাই বানিয়ে নিতে পারেন পালং শাক দিয়ে।

১৩।রেড বেলপেপার

বেলপেপার এমনিতেই শরীরের জন্য খুব ভালো। আর তাই রেড বেলপেপার রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এছাড়াও পিৎজা, পাস্তা, স্যালাড রাখুন খাদ্য তালিকায়।

১৪।জাম্বুরায়

জাম্বুরা নামক সিজনাল এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা নানা রকম রোগ থেকে মানুষের দেহকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে, জাম্বরায় ভিটামিন এ এর চেয়ে ভিটামিন সি থাকে বেশি। একটি গোলাপী কিংবা লাল রঙের জাম্বুরাতে ভিটামিন “এ” এর পরিমাণ ২৮৩০ আইইউ আর ভিটামিন সি এর পরিমাণ ৩১.২ মিলিগ্রাম।

এছাড়াও একটি মাঝারি সাইজের জাম্বুরাতে রয়েছে১ ১৩৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৬ গ্রাম ডায়েট্রারি ফাইবার, ৫% ভিটামিন বি-৬ এবং ২% ম্যাগনেশিয়াম।

১৫।কলিজা

কলিজাতে (সেটা যে প্রাণীর কলিজাই হোক) অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন “এ” থাকে। প্রায় ৬৫০০ আইইউ ভিটামিন “এ” পাওয়া যায় ১০০ গ্রাম গরুর কলিজায়।অন্যদিকে প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের কলিজায় ভিটামিন এ রয়েছে ৫৭০০ আইইউ। আর ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজায় ভিটামিন “এ” এর পরিমাণ আরো বেশি।

সুতরাং, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন “এ” পাওয়ার জন্যে খেতে পারেন ভিবিন্ন ধরণের প্রাণীর কলিজা। কলিজায় শুধু ভিটামিন এ’ই নয়, রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ।

 ১৬।দুধ

সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্যে আপনি যখন তাকে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেতে দেন, তখন হয়তো নিজেও এক কাপ দুধ খেয়ে নেন। যদি তাই হয়, তবে তো আপনি সন্তানের শরীরের পাশাপাশি নিজের শরীরকেও দিচ্ছেন ভিটামিন ‘এ’ এর যোগান।

গরুর দুধ হোক আর ছাগলের দুধ, যে কোনও দুধেই রয়েছে যথেষ্ট্য পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’। এক কাপ দুধ আপনার শরীরকে ১১২ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ এর যোগান দেয়। সুতরাং শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সুস্বাধু এই খাবারটি নিয়মিত খান এবং পরিবারের সকলকে খাওয়ান।

ভিটামিন সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার

আমরা অনেক প্রাণীর থেকে বিভিন্ন রূপে খাদ্য পেয়ে থাকি যাদের পশুজাত দ্রব্য বলে যা৭ ভিটামিন এ এর উৎস। পশুজাত দ্রব্য খাবারের মধ্যে ভিটামিন এ অনেক বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় যেরকম,

১।দুধ, পনির, ঘি এবং মাখন।

২।সেদ্ধ ডিম।

৩।বিভিন্ন প্রকার মাংস যেরকম মুরগি, খাসি, গরু ইত্যাদি।

৪।বিভিন্ন প্রাণীর যকৃত বা লিভার।

ভিটামিন এর উপকারিতা

১।আমারা যখন কিছু চোখ দিয়ে দেখি তখন নিউরনের মাধ্যমে কিছু সংকেত আমাদের ব্রেনে পৌঁছায়। যার ফলে আমরা বস্তুটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারি। ভিটামিন এ খুবই সাহায্য করে আমাদের চোখ থেকে ব্রেন পর্যন্ত এই সংকেত টিকে পৌঁছে দিতে।এছাড়াও খুব উজ্জ্বল আলোকরশ্মি আমাদের চোখে পড়লে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হতে পারে।

ভিটামিন এ নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হবার প্রবণতা কমে যায়। তাই ভিটামিন এ এর উপকারিতা আমাদের দৃষ্টি এবং চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ আছে যাদের রাতের বেলায় দেখতে অসুবিধা হয় অথবা দৃষ্টি শক্তি কমে যায় সে সব মানুষদের জন্য ভিটামিন এ এর উপকারিতা অনেক বেশি।

২।ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের উপরে অবস্থিত মৃত কোষ গুলোকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় আমাদের ত্বকের উপর কালো দাগ বা ব্ল‍্যাক স্পট, আঁচিল এবং নানান ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতাকে কম করে। নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে আমাদের ত্বকের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব অনেক কমে যায় এবং আমাদের ত্বক অনেক মসৃণ হয়।

৩।আমাদের শরীরের হাড় কে উন্নত এবং শক্ত করতে ক্যালসিয়ামের ভীষণ প্রয়োজন। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে ভিটামিন ডি এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক একইভাবে আমাদের হাড় কে শক্ত এবং দৃঢ় করতে ভিটামিন এ এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের হাড় শক্ত, দৃঢ় হয় এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।

৪।ভিটামিন এ অনেক সাহায্য করে আমাদের রক্তের শ্বেত কণিকা উৎপন্ন করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নিয়মিত ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের চোখ, ফুসফুস এবং পেটের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়।

৫।প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরে প্রজনন ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। পূর্বের তুলনায় এখন পুরুষদের শরীরে সক্রিয় শুক্রাণু এবং মেয়েদের শরীরে সক্রিয় ডিম্বাণু উৎপন্নের হার কমে গেছে। কিন্তু আমরা যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের বন্ধ্যাত্ব হবার প্রবণতাকে কম করে।

৬।যখন আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং কোনমতেই নিয়ন্ত্রণে আসতে চায় না, তখন আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে অ্যাবনরমাল কোষ উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নতুন কোষ উৎপন্ন হয়। যার ফলে আমাদের ক্যান্সার হবার প্রবণতা কমে যায়। তাই ভিটামিন এ এর উপকারিতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন এর অপকারিতা

যেহেতু ভিটামিন এ তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল তাই অত্যাধিক ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব একটা ভালো নয়। যদি কেউ প্রতিদিন ৩০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ভিটামিন এ গ্রহণ করে তাহলে তার অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে যেরকম,

১।বমি ভাব,

২।মাথা যন্ত্রণা,

৩।অস্পষ্ট দৃষ্টি,

৪।ডায়রিয়া,

৫।শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা যেরকম হাঁটু, কোমর, ঘাড়।

৬। ত্বকের উপর জ্বালাপোড়া ভাব ইত্যাদি।

ভিটামিন এর অভাবজনিত রোগ

১।ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে। আমরা যা দেখছি তা নিউরনের মাধ্যমে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে ভিটামিন এ এর ভূমিকা অসামান্য। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি রাতের বেলা দেখতে অসুবিধা হতে পারে।

২।ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের ত্বকের উপরের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে পুনরায় নতুন কোষ উৎপন্ন করতে যার ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে এবং অনেক বেশি মসৃণ হয়। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। এমনকি আমাদের ত্বকে কালো দাগ বা ডার্ক স্পট, আঁচিল, ব্রন ইত্যাদি বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

৩।ভিটামিন এ সাহায্য করে আমাদের শরীরের নতুন কোষ উৎপন্ন করতে এবং বৃদ্ধিতে যা আমাদের শারীরিক গঠন উন্নত করতে অনেক সাহায্য করে। তাই ভিটামিন এর অভাবে ছোট শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। এমনকি ছোট শিশুদের শারীরিক গঠন খুব বেশি উন্নত হয় না।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

৪।ভিটামিন এ অনেক বেশি সাহায্য করে আমাদের শরীরে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু উৎপন্ন করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে যার ফলে আমাদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভিটামিন এ এর অভাবে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বন্ধ‍্যাত্ব বৃদ্ধি পায় এবং প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে।

৫।ভিটামিন এ আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে এবং নিয়মিত ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভিটামিন এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কমতে থাকে। যার ফলে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন এ এর অভাবে সব থেকে বেশি পরিমাণ সংক্রমণ বা ইনফেকশন আমাদের ফুসফুস, গলা এবং বুকে হয়ে থাকে। যাকে রেসপিরেটরি ট্র্যাক ইনফেকশন বলে।

৬।ভিটামিন এ সহায়তা করে আমাদের শরীরের হাড় কে শক্ত ও দৃঢ় করতে এবং এই ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ভূমিকা সব থেকে বেশি। তবে ভিটামিন এর অভাবে আমাদের শরীরে হাড় দুর্বল হয় এবং খুব সহজে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ভিটামিন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।প্রতিদিন কতটা ভিটামিন খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ

১।একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।

২।একটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত।

২।ভিটামিন কি?

উত্তরঃভিটামিন এ একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। সাধারণত আমাদের শরীরে দুইটি উপায়ে ভিটামিন এ পৌঁছায়। পশু জাতীয় দ্রব্য থেকে রেটিনল অথবা ভিটামিন এ আমরা পেয়ে থাকি আবার বিভিন্ন সবজি বা ফল থেকে আমরা প্রোভিটামিন কেরোটিনয়েড পেয়ে থাকি যা পরবর্তীকালে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তর হয়।

৩।ভিটামিন এর অপর নাম কি?

উত্তরঃভিটামিন এ রেটিনল নামে পরিচিত যা তেলে দ্রাব্য বা ফ্যাট সলিউবল। এছাড়াও আমাদের শরীর ভিটামিন এ উৎপন্ন করতে পারে প্রোভিটামিন কেরোটিনয়েড থাকে।

৪।ভিটামিন এর অভাবে শিশুদের কি রোগ হয়?

উত্তরঃভিটামিন এ এর অভাবে শিশুদের সবথেকে বেশি সমস্যা হয় দৃষ্টি শক্তিতে। ভিটামিন এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে এবং রাতকানা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন এর অভাবে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠনে সমস্যা হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৫।ভিটামিন বেশি খেলে কি বিষক্রিয়া হয়?

উত্তরঃহ্যাঁ, এর অত্যধিক গ্রহণ বিষাক্ততার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা বমি বমি ভাব, বমি, মাথা ঘোরা এবং এমনকি লিভারের ক্ষতির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।

৬। Vitamin A সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের কোন ঝুঁকি আছে কি?

উত্তরঃহ্যাঁ, Vitamin A ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টের উচ্চ মাত্রা গ্রহণ করা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে। কোন সম্পূরক গ্রহণ করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

৭। এমন কোন স্বাস্থ্যগত অবস্থা আছে যার জন্য Vitamin A খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে?

উত্তরঃহ্যাঁ, কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস, লিভারের রোগ, এবং কিছু পরিপাক ব্যাধি এই ভিটামিন-এ এর অভাবের কারণ হতে পারে।

৮।ভিটামিন কি ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে?

উত্তরঃহ্যাঁ, সুস্থ ত্বকের জন্য এই ভিটামিন অপরিহার্য। এটি ত্বকের কোষগুলির উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করতে করে, যাআ শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

৯। ভিটামিন কি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য সাহায্য করতে পারে?

উত্তরঃহ্যাঁ, এই ভিটামিন মজবুত হাড় বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। এটি হাড়ের কোষের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং নতুন হাড়ের কোষগুলির উত্পাদনকেও উদ্দীপিত করতে পারে।

১০।গর্ভাবস্থায় Vitamin A সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা কি উচিৎ?

উত্তরঃগর্ভাবস্থায় ভিটামিন A এর অত্যধিক গ্রহণ ক্ষতিকারক হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক মাত্রা অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

১১।এই ভিটামিন কি ব্রণ থেকে সাহায্য করতে পারে?

উত্তরঃহ্যাঁ, এই ভিটামিন ব্রণের লক্ষণগুলি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

শেষকথা

যেহেতু আপনি আজ জেনে গেলেন ভিটামিন ‘এ’ আছে যেসব খাবারে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত, সেহেতু ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজণিত রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতে এসব খাবার বেশি বেশি খাবেন। সেই সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও এ জাতীয় খাবারগুলো অধিক পরিমাণে খাওয়ার জন্যে উৎসাহিত করবেন। বিশেষ করে, পরিবারের ছোট সদস্যদেরকে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা আপনার কর্তব্য।

পোস্ট ট্যাগ-

ভিটামিন বি জাতীয় খাবার,ভিটামিন d জাতীয় খাবার,ভিটামিন c যুক্ত খাবারের তালিকা,ভিটামিন যুক্ত খাবারের তালিকা,ভিটামিন এ জাতীয় ফলের নাম,ভিটামিন এ সবচেয়ে বেশি কোনটিতে,ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ ফল,ভিটামিন কে জাতীয় খাবার।

আরও-

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment