ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রতিদিন আমাদের শরীরে অনেক রকম ভিটামিনের প্রয়োজন তার মধ্যে সবথেকে বেশি প্রয়োজন ভিটামিন সি-এর। ভিটামিন সি  যাকে আমরা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বলে থাকি সব থেকে বেশি প্রয়োজন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কে উন্নত করতে।

ভিটামিন সি আমাদের জন্য খুবই শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল কে কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন কঠিন রোগ যেরকম ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি হবার প্রবণতা কমে যায়। ভিটামিন সি আমাদেরকে সাহায্য করে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণের সাথে লড়তে।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

তবে আমরা চেষ্টা করব বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার  তালিকা নিয়ে। আলোচনা আরও যা যা থাকছে -ভিটামিন সি,ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের উপকারিতা,

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের অপকারিতা, প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি খাওয়া উচিত, ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

রসায়নের ভাষায় ভিটামিন সি

এর নাম হলো অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটি একটি অম্লধর্মী জৈব যৌগ ও সাদা দানাদার পদার্থ। যা শাকসবজি ও টক ফলমূলে বেশি পাওয়া যায়। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয়। যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মতোই কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ এবং ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতো কিছু জারিত যৌগও বিদ্যমান।

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

১৯১২ সালে ভিটামিন সি আবিষ্কৃত হয়। এটিই প্রথম ভিটামিন যেটি রাসায়নিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিলো। ভিটামিনটির আবিষ্কারের পেছনে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অপরিসীম।

পাশাপাশি হাড় ও দাঁতের জন্যও ভিটামিন সি অনেক উপকারী। এটি ত্বকের টিস্যুর গঠনেও সরাসরি অংশ নেয়। যেকোনো ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি সাড়িয়ে তুলতেও এই ভিটামিনের বিকল্প নেই। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যাল থেকেও রক্ষা করে এটি। ভিটামিন-সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি রাখলে সহজেই এর দৈনিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় বিধায় এটি শরীরে সঞ্চিত থাকে না। এই ভিটামিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা

ভিটামিন-সি হল অন্যতম প্রয়োজনীয় ও পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যা প্রতিদিনের পুষ্টি উপাদানের মাঝে উপস্থিত থাকা খুবই জরুরি। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, ততই সুস্থ থাকা সম্ভব হবে। ভিটামিন-সি সার্বিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিতে কাজ করে। এছাড়া ক্যানসার, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও বয়সের গতিকে স্লথ করতে ভিটামিন-সি খুবই জরুরি। সুস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যাবে যে যে খাবারে তার তালিকা জেনে নিন।

১।পেয়ারা

বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারা হলো সবচেয়ে ভালো ও উৎকৃষ্ট ফল যা থেকে পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন-সি।বেশ কিছু গবেষণা থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায় এবং দেখা গেছে নিয়মিত পেয়ারা গ্রহনে সার্বিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ পেয়ারা থেকে পাওয়া যাবে ২২৮.৩ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি।

২।লিচু

মৌসুমি ও জনপ্রিয় এই ফলটি থেকেও পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি। যা কোলাজেন সিন্থেসিস ও রক্তনালীকার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। ভিটামিন-সি ছাড়াও লিচু থেকে আরও পাওয়া যাবে পটাশিয়াম, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে মিলবে ৭১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

৩।কুল-বড়ই

আমাদের বিভিন্ন প্রজাতি, আকৃতি, স্বাদ, মানের কুল ও বড়ই পাওয়া যায়। পরিচিত এই ফলটিও ভিটামিন-সি’র অন্যতম একটি উৎস। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই ফল থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-সি ত্বকের স্বাস্থ্যে জন্য খুবই ভালো। পাশাপাশি টক ফল হওয়ায় ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে কুল ও বড়ই। প্রতি ১০০ গ্রাম কুল ও বড়ই থেকে পাওয়া যাবে ৬৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

৪।পেঁপে

এক কাপ পরিমাণ পেঁপে থেকে পাওয়া যাবে ৮৭ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি, যা খুব সহজেই এই ফলটিকে ভিটামিন-সিয়ের অন্যতম দারুন একটি উৎস হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। শুধু পাকা পেঁপে নয়, কাঁচা পেঁপেও সমানভাবে ভিটামিন-সি’র জন্য পরিচিত। এতে উপকারি ভিটামিনের পাশাপাশি আরও রয়েছে ভিটামিন-এ, ফলেট, আশ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

৫।কমলালেবু

সাইট্রাস বিভিন্ন ফলের মাঝে কমলালেবুকে এই তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে। ফ্রেশ কমলালেবু খাওয়া হল সরাসরি শরীরকে ভিটামিন-সি দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। প্রতিদিন একটি বড় আকৃতির কমলালেবু খাওয়া হলেও ভিটামিন-সিয়ের চাহিদা অনেকখানি পূর্ণ হয়ে যাবে।

৬।আনারস

প্রচুর পরিমাণ অ্যানজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনের সমন্বয় পাওয়া যাবে আনারস থেকে। এতে বেশ ভালো পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়, যা পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও খাদ্য সঠিকভাবে পরিপাক করতে কাজ করে। এছাড়া এতে উপস্থিত বিশেষ এনজাইম ব্রোমালাইন পিরিয়ডকালীন সমস্যা কমাতেও কার্যকর।

৭।বেদানা

বেদানা বা ডালিমকে বলা হয় অন্যতম স্বাস্থ্যকর ফল। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা ও প্রদাহ কমানোসহ ভিটামিন-সি যুক্ত মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি হতে পারে অন্যতম চমৎকার একটি খাদ্য উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম বেদানা থেকে মিলবে ১০.২ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি।

৮।আমলকি

বহু উপকারিতার আলমকি থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যাবে একসাথে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও কাশির সমস্যা দূর করতে আমলকি চমৎকার। ছোট ও কিছুটা তিতকুটে স্বাদের এই ফলটিকে প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে রাখার অভ্যাস সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনতে কাজ করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকি থেকে পাওয়া যাবে ৪২.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

​৯।টমেটো জুস

টমেটো তো খান। কিন্তু টমেটোর জুস অনেকের মুখেই রোচে না। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, এই পানীয় খেলে অনেক উপকার মেলে। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১ কাপ টমেটোর জুসে আছে প্রায় ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়াও টমেটো হল বিটা ক্যারোটিনের ভাণ্ডার। আর এই বিটা ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। তাই ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে চাইলে নিয়মিত টমেটো জুস পান করা চাই।

১০।ব্রকোলি

​ব্রকোলি নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে গিয়েছে। এই সবজির গুণ নিয়ে একাধিক গবেষণাও সামনে এসেছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ভিটামিন সি-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাণ্ডার হল ব্রকোলি। ১ কাপ ব্রকোলিতে রয়েছে প্রায় ৮১.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে উপকারী ফাইবার যা ওজন কমাতে সহায়ক। তাই লাঞ্চে বা ডিনারে স্যালাড হিসাবে ব্রকোলি খেতেই পারেন।

​১১। আম

গ্রীষ্ম মানেই আম।  তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে স্বাদে অনন্য হওয়ার পাশাপাশি এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। ১ কাপ আমে রয়েছে প্রায় ৬০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তাই আম খেয়েও ইমিউনিটি বাড়াতে পারেন।

১২।কাঁচা মরিচ

কাঁচা মরিচে ১০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে, যা দৈনিক চাহিদার ১২১%। তুলনামূলকভাবে, একটি লাল লঙ্কায় রয়েছে ৬৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি যা দৈনিক চাহিদার ৭২%। এছাড়াও, লঙ্কা ক্যাপসাইসিন সমৃদ্ধ, যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে পারে।

১৩।ক্যাপসিকাম

মাত্র দেড় কাপ ক্যাপসিকাম বা বেল পেপারে ১৩৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ্রয়েছে, যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ১৫২%। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি  গ্রহণ করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাঁরা বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করেন তাঁদের ছানি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

১৪।জোয়ান

জোয়ানের পাতায় ৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ৫০%। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও কার্যকর।

জোয়ান- জোয়ানের পাতায় ৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ৫০%। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও কার্যকর।

১৫।সর্ষে শাক

এক কাপ কাঁচা সর্ষে শাকে ১৯৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে, যা দৈনিক চাহিদার ২১৭%। যদিও রান্নার তাপ খাবারে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়, তবুও এক কাপ রান্না করা সরিষার শাক-সবজিতে ১১৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও এই শাক রয়েছে ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার এবং ফোলেট।

১৬।কপি জাতীয় সবজি

কপি জাতীয় সবজির মধ্যে ব্রকোলিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আধা কাপ রান্না করা ব্রকলিতে ৫১ মিলিগ্রাম ভিটামিন থাকে যা দৈনিক চাহিদার ৫৭%। গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই সবজি খাওয়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

১৭।লেবু

সমীক্ষা অনুসারে, খোসা সহ একটি কাঁচা লেবুতে ৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে যা দৈনিক চাহিদার ৯২% প্রদান করে। লেবুর রসে উপস্থিত ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। এর জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর জল পান করা উচিত।

ভিটামিন সি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

শুধুমাত্র ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। আমাদের জানা উচিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার আমরা যদি নিয়মিত গ্রহণ করি তাহলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা কি হতে পারে। ভিটামিন সি এর উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য অসামান্য তবে খুব বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করলে তার কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের উপকারিতা

ভিটামিন সি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ফ্রী রেডিকেল কে কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের কঠিন রোগ যেরকম ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

১।যেহেতু ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাই নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি উন্নত হয়। বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশনের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাই।

২।আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের জন্য ভিটামিন সি অনেক সাহায্য করে। আমাদের হৃদয় বা হার্ট থেকে ব্লাড ভেসেল গুলোকে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হাই ব্লাড প্রেসার হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়।

৩।প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে এল ডি এল(LDL) ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে এবং এইচ ডি এল (HDL) গুড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যার ফলে আমাদের হৃদয় বা হার্ট সংক্রান্ত রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

৪।যদি আমাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায় তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ইউরিক অ্যাসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বা যন্ত্রণার প্রবণতা কমে যায়।

৫।আমাদের শরীর ভিটামিন সি ছাড়া কোলাজেন নামক এক প্রোটিন উৎপন্ন করতে পারেনা। এই কোলাজেন আমাদের শরীরের হাড়, পেশী, মাংস এমনকি ত্বক বা স্কিন তৈরি করতে অনেক সাহায্য করে। তাই আমাদের শারীরিক গঠন সঠিক রাখতে প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

৬।ভিটামিন সি আমাদের ত্বক বা স্কিন এবং চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের ত্বক এবং চুলে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার প্রবণতা থাকে না। এছাড়াও ভিটামিন সি এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে আমাদের ত্বক এবং চুল ভালো থাকে।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

৭।পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করলে আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ হয় যার ফলে আমাদের মানসিক চিন্তা অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের মেন্টাল হেলথ অনেক উন্নত হয়। যা আমাদের মনোবলকে বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।

৮।নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বাড়তে থাকে তার ফলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিক জাতীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়। আমাদের চোখ সম্পর্কিত রোগ হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং আমাদের ঠান্ডা, কাশি, কফ এবং জ্বর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের অপকারিতা

ভিটামিন সি জলে দ্রাব্য যার ফলে আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় ভিটামিন সি রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায় তাই সাধারণত ভিটামিন সি এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম। তবে খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেরকম-

১।খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের হজম শক্তিতে সামান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২।শুধু তাই নয় যাদের প্রথম থেকে অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাদের অ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

৩।এমনকি খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের ডায়রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে।

৪।খুব বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে বমি ভাব হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। মাথা যন্ত্রণা এবং অনিদ্রা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি খাওয়া উচিত

প্রতিদিন কতটা ভিটামিন সি খাওয়া উচিত সেটি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠনের উপর। তবে একটা সাধারণ পরিমাপ নিচে উল্লেখ করা হলো,

১।৮০ – ৯০ মিলিগ্রাম একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য।

২।৭০ – ৭৫ মিলিগ্রাম একটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য।

৩।৮০ – ৮৫ মিলিগ্রাম একটি গর্ভবতী মায়ের জন্য।

বাচ্চা এবং ছোটদের জন্য ভিটামিন সি এর পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে বিভিন্ন কারণে ভিটামিন সি গ্রহণের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে যেরকম, আমরা যদি কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি তাহলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন অনেক বেশি থাকে।

ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেরকম-

১।ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পৌঁছাতে পারেনা যার ফলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে এবং আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ইনফেকশন বা সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ঠান্ডা, কাশি, জ্বর ইত্যাদি হবার প্রবণতা ও বৃদ্ধি পায়।

২।আমাদের শরীরের হাড় শক্ত করতে এবং শারীরিক গঠন ঠিক রাখতে ভিটামিন সি এর অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের হাড়ের ক্ষয় হয় এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

৩।ভিটামিন সি আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে তাই ভিটামিন সি এর অভাব হলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট যেরকম কোমর, হাঁটু, ঘাড় ইত্যাদিতে ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৪।ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ এর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। যার ফলে আমাদের ত্বকের উপর বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৫।আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিতে ভিটামিন সি এর খুবই প্রয়োজন। সঠিকভাবে আমাদের চুলকে উৎপন্ন করতে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের চুল উঠে যাওয়ার এবং শুষ্ক বা রুক্ষ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

৬।আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব হলে আয়রন শোষন করার ক্ষমতা নষ্ট হয় যার ফলে আমাদের শরীরে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দিতে পারে। ফলস্বরূপ পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের রক্তক্ষরণ বৃদ্ধি পায় যার ফলেও আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ কমতে থাকে।

ভিটামিন সি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ

১।সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল কি?

উত্তরঃঅস্ট্রেলিয়া দেশে এক প্রকার ফল পাওয়া যায় যার নাম কাকাডু প্লাম। ১০০ গ্রাম কাকাডু প্লাম ফলের মধ্যে ২৯০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। তবে আমাদের এশিয়ার মহাদেশে বিভিন্ন দেশগুলোতে অনেক ফল পাওয়া যায় যার মধ্যে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। যেরকম আমলকি, পাতি লেবু, কমললেবু, কামরাঙ্গা বা স্টার ফ্রুট, আনারস ইত্যাদি।

২।একটি লেবুতে কি পরিমান ভিটামিন সি থাকে ?

উত্তরঃলেবু বিভিন্ন ধরনের হয় যেরকম পাতি লেবু, কমলালেবু, মৌসম্বি লেবু ইত্যাদি এবং প্রতিটি লেবুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ ভিন্ন রকমের। তবে এটা সঠিক বেশিরভাগ লেবুতেই ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। যেরকম, ১০০ গ্রাম কমলা লেবুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ ৫৬.২ মিলিগ্রাম। আবার ১০০ গ্রাম পাতি লেবুতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ ৫৩ মিলিগ্রাম।

৩। প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে?

উত্তরঃহ্যাঁ, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন পরিমান মতো খাওয়া যেতে পারে।

৪।ভিটামিন সি এর অভাব হলে কি হয়?

উত্তরঃভিটামিন সি-এর অভাবের ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন রক্তাল্পতা (লাল রক্ত ​​কণিকার অভাব), মাড়ি থেকে রক্তপাত, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, ক্ষত সারাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে এবং শুষ্কতা। এবং চুল ভেঙে যাওয়া।

৬।ভিটামিন সি এর সেরা উৎস কি?

উত্তরঃভিটামিন সি-এর সর্বোত্তম উৎস হিসেবে মনে করা হয় লাল মরিচ এবং কমলার রসকে।

৭।সূর্য কি ভিটামিন সি এর একটি ভাল উৎস?

উত্তরঃনা, সূর্যকে ভিটামিন C.v এর উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। উল্টো এটি কখনো কখনো ভিটামিন সি এর পুষ্টিগুন নষ্ট করে দেয়।

৮।ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার সঠিক সময় কী?

উত্তরঃচিকিৎসকের পরামর্শে যেকোনো সময় ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

শেষকথা

শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা  বাড়ায় ভিটামিন সি। এ ছাড়া ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনের সুরক্ষা দিতে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি উপকারী।আশাকরি ভিটামিন সি এর খাবার তালিকা আপনারা পেয়েছেন।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত তাপে ও অনেকক্ষণ সেদ্ধ করলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভিটামিন সি যুক্ত সবুজ শাক-সবজি অল্প তাপে সেদ্ধ করতে হবে বা তাজা কাঁচা অবস্থায় খেতে হবে।

পোস্ট ট্যাগ-

ভিটামিন সি জাতীয় সবজি,ভিটামিন সি এর উপকারিতা ও অপকারিতা,ভিটামিন যুক্ত খাবারের তালিকা,সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল,ভিটামিন সি জাতীয় ফলের নাম,ভিটামিন সি ট্যাবলেট এর নাম,ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়,ভিটামিন ই জাতীয় খাবার।

আরও-

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

এনা পরিবহন অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

লাল সবুজ পরিবহনের অনলাইন টিকিট 

রংপুর এক্সপ্রেস  ট্রেনের অনলাইন টিকিট করার

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment