ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা- উপকারিতা- ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার- আধুনিক যুগে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমরা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছি না। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের প্রয়োজন। এ জন্য ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ডি প্রধান।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

আজকের পোস্টে আমরা ভিটামিন ডি কি, ভিটামিন ডি এর প্রকারভেদ,ভিটামিন ডি এর  উপকারিতা কি, ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়ে,প্রতিদিন কতটা ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত,ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়, ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। সেই সংগে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর সম্পূর্ণ তালিকা  সম্পর্কে  আলোচনা করব।

ভিটামিন ডি কি

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যা সব থেকে বেশি সাহায্য করে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস কে শোষণ করে আমাদের হাড় কে শক্ত এবং দৃঢ় করতে। এছাড়াও ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের দাঁত, চুল এবং ত্বককে অনেক উন্নত করে।

বর্তমানে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৫০ % শতাংশের ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। এবং প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ ভিটামিন ডি জনিত বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন। যেমন, শরীরের growth কমে যাওয়া, শিশুদের হাড় বেকে যাওয়া, হাঁড় ক্ষয় হওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি এর প্রকারভেদ

১) ভিটামিন ডি 2 (এগ্রো ক্যালসি ফেরোল)- ভিটামিন ডি ২ প্রাণীদেহে নেই। এই ভিটামিন উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে গাছপালা এই ভিটামিন তৈরি করে।

২) ভিটামিন ডি-৩– এই ভিটামিন প্রাণীদেহে তৈরি হয়। এটি সূর্যের রশ্মির প্রতিক্রিয়া দ্বারা মানুষের শরীরে উৎপাদিত হয়। মাছ খেলেও আমরা এই ভিটামিন পেতে পারি।

ভিটামিন ডি এর উপকারিতা কি

১।ভিটামিন ডি এর সব থেকে বড় ভূমিকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস কে শোষণ করতে সাহায্য করা। নিয়মিত ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আমাদের রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁত শক্ত হয়। তাই ভিটামিন ডি এর উপকারিতা আমাদের হাড় এবং শারীরিক গঠনকে উন্নত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

২।অনেক সময় আমাদের কোন ভারী কাজ করতে অনেক বেশি কষ্ট হয় আমাদের দুর্বল মাংসপেশীর জন্য। এই সমস্যা টি সবথেকে বেশি দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এবং একটু বয়স্ক মানুষের মধ্যে। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মাংসপেশী অনেক বেশি শক্ত হয় যার ফলে ভারী কাজগুলি আমরা খুব সহজেই করতে পারি।

৩।ভিটামিন ডি সহায়তা করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কে বৃদ্ধি করতে। বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এর জন্য আমাদের মধ্যে সবথেকে বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট অথবা রেস্পিটরি ইনফেকশন হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে আমাদের শরীর লড়তে সক্ষম হয় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের সাথে।

৪।যদি আমাদের শরীরে কোন অ্যাবনরমাল কোষ ক্রমাগত বৃদ্ধি হয় অনিয়ন্ত্রিত ভাবে, তাহলে আমাদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে অ্যাবনরমাল কোষ গুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাড়তে পারে না এবং আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

৫।একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর আমাদের শরীরে বিভিন্ন অংশে ব্যথা এবং যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যেরকম কোমর, হাঁটু, ঘাড়, এবং শরীরের অন্যান্য জয়েন্ট। এই ব্যথা এবং যন্ত্রণার মুখ্য কারণ ক্যালসিয়াম এর অভাব অথবা দুর্বল মাংসপেশীর জন্য। নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে ওই জাতীয় ব্যাথা এবং যন্ত্রণা হবার প্রবণতা কমে যায়।

৬।অনেক সময় বিভিন্ন কারণের জন্য আমাদের মানসিক শক্তি অনেক কমে যায় এবং আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। যার ফলে আমাদের মধ্যে মানসিক দুশ্চিন্তা এবং বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন বাড়তে থাকে। নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে আমাদের মানসিক শক্তি অনেক বেশি উন্নত হয় এবং বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনের পরিমাণ কমতে থাকে।

৭। অনেক সময় প্রয়োজনের থেকে বেশি আমাদের ওজন হয়ে যায় এই অত্যাধিক ওজন বেড়ে যাওয়াকে ওবেসিটি বলে। যাদের অত্যাধিক ওজন বেড়ে যায় তাদের মধ্যে অনেক সময় ভিটামিন ডি এর অভাব ও লক্ষ্য করা গেছে। ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সাহায্য করে আমাদের বেড়ে যাওয়া ওজন কে কমাতে। তাই ওজন কমানোর জন্য ভিটামিন ডি এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

১।ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে পারেনা যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁত শক্ত এবং দৃঢ় হয় না।

২।আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্যালসিয়ামের ও অভাব হয় এবং আমাদের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা এবং যন্ত্রনা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় যেরকম হাঁটু, কোমর এবং শরীরের অন্যান্য জয়েন্ট।

৩।ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত রোগ গুলিকে আমাদের শরীর প্রতিরোধ করতে পারে না এবং ফলস্বরূপ আমাদের সর্দি, কাশি জ্বর অথবা রেস্পিটরি ইনফেকশন হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৪।অনেক সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম আমাদের নিজেদেরই শরীরের কোষ মাংসপেশী এবং বিভিন্ন অঙ্গ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ওই পরিস্থিতিকে অটো-ইমিউন ডিজিজ বলে। এই প্রকার সমস্যা ভিটামিন ডি এর অভাবেও হয়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের মানসিক চিন্তা বা বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়। এই দুই মুখ্য সমস্যার জন্য আমাদের চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

৫।ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের মধ্যে মানসিক চিন্তা বা বিষণ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই মানসিক চিন্তা বা বিষণ্ণতা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অত্যাধিক মানসিক চিন্তার ফলে আমাদের শরীরে নানান ধরনের রোগ এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬।আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভিটামিন ডি এর অভাব। আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের পেটের চর্বি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের শরীরের ওজনও অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের ওবেসিটি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

৭।ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের অন্যতম শক্তির উৎস তাই ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের ক্লান্তি ভাব অনেক বেশি বেড়ে যায়। এমনকি ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না এবং পরবর্তীকালে এই ঘুমের অভাবে আমাদের মধ্যে অন্যান্য রোগ বা সমস্যা দেখা দেয়। যদিও এ বিষয়টিতে আরো অনেক বেশি গবেষণার প্রয়োজন।

প্রতিদিন কতটা ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত

ভিটামিন ডি কে সাধারণত আমরা পরিমাপ করি মাইক্রোগ্রাম অথবা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ( IU ) এর মাধ্যমে। এক মাইক্রোগ্রাম = ৪০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ( IU ) হয়।

১।একদিন থেকে এক বছরের বাচ্চাদের জন্য ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।

২।প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।

৩।বয়স্ক এবং বৃদ্ধদের জন্য ২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।

ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়

ভিটামিন ডি তেলের দ্রাব্য একরকম মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যা খুব বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।

১।ভিটামিন ডি সাহায্য করে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে। তাই আমরা যদি খুব বেশি ভিটামিন ডি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাবে।

২।আমাদের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি হলে রক্তে টক্সিসিটি বা বিষাক্ততা বৃদ্ধি পায় এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাদের নানান সমস্যা হতে পারে, যেরকম,

কিডনি স্টোন বা কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৩।খুব বেশি রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার হবার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৪।আমাদের শরীরে বিভিন্ন জয়েন্টে সমস্যা যেরকম হাটু, কোমর, ঘাড় ইত্যাদি।

৫।কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন এর সমস্যা হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

৬।পেটে ব্যথা, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়া হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

৭।মাথা যন্ত্রণা হয় এবং আমাদের মানসিক ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করার উপায়

ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর করতে আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে।

আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন ৬০-১০০০ আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে।

ভিটামিন ডি-এর অভাবের চিকিৎসা নির্ভর করে এর লক্ষণগু্লোর উপর। রোগ নির্ণয়ের পর একজন ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সম্পর্কে জানা যায়। এর ভিত্তিতে ডাক্তার চিকিত্সার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

মাছ, পালং শাক, পনির, সয়াবিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তালিকা

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরে Calcium ও Phosphate এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের হাড়, দাঁত ও পেশী সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন।

অন্যদিকে, Vitamin D -এর অভাব শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাড়ের বিকৃতির কারণ হতে পারে। যেমন শিশুদের Rickets এবং প্রাপ্তবয়স্কদের Osteoma Lacia নামক অবস্থার কারণে হাড়ের ব্যথা হতে পারে। কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল –

১. দুধ

দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড়ের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বুদ্ধির বিকাশের জন্য খুব জরুরি। শুধু এক গ্লাস দুধ থেকে আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২২% ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। আরও পড়ুন- দুধ দিয়ে তৈরি মিল্কশেক এর উপকারিতা।

২. ওটমিল

ওট্মিল হল এমন একটি খাবার যা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।এক কাপ ওট্মিলে প্রায় 145 IU Vitamin D থাকে, যা 18% DV এর সমান। ওটমিল শুধুমাত্র ভিটামিন ডি এর ঘাটতিই পূরণ করে না বরং ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সাথে এতে প্রচুর মিনারেলস ও রয়েছে।

৩. কমলার জুস

কমলার রসে প্রাকৃতিকভাবে কোন ভিটামিন ডি থাকে না. তবে যারা দুধ খেতে সক্ষম নয় অথবা দুধে এলার্জি আছে, এমন ব্যক্তিদের জন্য কিছু কোম্পানি কমলার রসের সাথে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি যোগ করে একটি fortified juice তৈরি করে।

যা থেকে প্রায় ১০০ আই ইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব। তবে এই কমলার রহস্য কিন্তু সবার জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প নয় কারণ যারা ডায়াবেটিস এর রোগী তাদের রক্তে এটি শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. পনির বা ছানা

পনির বা ছানা ভিটামিন ও বিভিন্ন খাদ্য পুষ্টির জন্য জন্য খুবই ভালো একটি উৎস। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া এতে ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং এ রয়েছে।  পনির হাড়ের স্বাস্থ্য বাড়ায় এবং এতে থাকা ভিটামিন ডি হারকে শক্তিশালী করে এবং এটি অস্টিওপেরোসিস প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।

৫. মাখন

মাখনে ভিটামিন ডি রয়েছে যা হাড়ের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে Calcium রয়েছে, যা হাড়ের মজবুতির জন্য অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে এবং আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে।

৬. দই

ভিটামিন ডি এর য়ারো একটি সহজলভ্য উৎস হলো দই। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিতেও ভরপুর। এটি হজমে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। সেই সাথে এটি  আমাদের দেহের হাঁড় মজবুত করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৭. গম, রাগী, বার্লি বাদাম

গম, রাগী ও বার্লীতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি। যা থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এসব শুকনো খাবারো আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন ধরনের বাদামে রয়েছে ভিটামিন ডি। যেমন কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি। এগুলো আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং হাড় ক্ষয় হওয়া রোধ করে।

৮. মাশরুম

মাশরুম হলো ভিটামিন ডি এর এক নিরামিষ উৎস।যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে প্রায় ১৩০ থেকে ৪৫০ IU পর্যন্ত ভিটামিন ডি সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া যারা মাছ, মাংস খায় না বা নিরামিষভোজী তারা মাশরুম থেকে তাদের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

৯. লাল মাংস

লাল মাংস বা রেড মিট আমাদের দৈনিক ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে পারে। একটি 25 গ্রাম লাল মাংসের টুকরায় ১৫ আই ইউ ভিটামিন ডি থাকে।

তবে অত্যাধিক লাল মাংস আমাদের হজমে সমস্যা করতে পারে, এছাড়া এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেমন এটি উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, ইতি হার্টের চর্বিযুক্ত করে, তাই এটি কম খাওয়াই ভালো।

১০. সামুদ্রিক, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ

ভিটামিন ডি এর আরেকটি ভালো উৎস হল তৈলাক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছ। যেমন, স্যামন(salmon), ম্যাকেরেল (mackerel), টুনা (tuna), সার্ডিনস (sardines) এর মতো তৈলাক্ত মাছ মাছ এর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন দিয়ে থাকে সামনের একটি ছোট টুকরায় প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি থাকে।

১১. ডিমের কুসুম

একটি বড় ডিমের কুসুমে প্রায় ৩৭ IU  ভিটামিন ডি থাকে। যারা লাল মাংস এবং মাছ খেতে পছন্দ করেনা তারা ডিম খেতে পারেন এতে আপনাদের দৈনিক প্রায় ৫% ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

১২. ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি ফলমূল

ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি হচ্ছে পালং শাক, ঢেঁড়স সয়াবিন, গাজর, ব্রকলি, মিষ্টি আলুতে থেকে প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

অনেক সময় বাচ্চারা শাকসবজি খেতে চায় না তাদেরকে ফল খাওয়ানো যায়। যেমন, পেপে, কলা, আম, আনারস, স্ট্রবেরি, পিচ ফল, ডালিম, বাঙ্গি। এসব ফলমূলেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

১৩. রোদ

সকালের সূর্যের আলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আমাদের প্রায় আধঘণ্টা রোদে বসে থাকা উচিত যাতে আমাদের শরীর সূর্যের আলো পায় এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ হয়।

যদিও সূর্যের রশ্মিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তবে এটির অতিরিক্ত এক্সপোজার সানবার্ন এবং ট্যানিংয়ের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতএব, সকালে অল্প সময়ের জন্য সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে আসতে হবে।

ভিটামিন ডি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।ভিটামিন ডি এর কাজ কি ?

উত্তরঃভিটামিন ডি এর মুখ্য কাজ আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস কে শোষণ করা। যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে আমাদের হাড়, দাঁত এবং শারীরিক গঠন অনেক উন্নত হয়।

২।ভিটামিন ডি এর   রাসায়নিক নাম কি ?

উত্তরঃভিটামিন ডি এর রাসায়নিক নাম ক্যালসিফেরল। এই ভিটামিন ডি প্রধানত সূর্যের আলোকরশ্মি আল্ট্রাভায়োলেট-বি বা UVB থেকে আমাদের ত্বকের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।

৩।ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয় ?

উত্তরঃযদি আমাদের ত্বকের উপর সূর্যের আলো সরাসরি না পড়ে তাহলে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হতে পারে। এছাড়াও আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমাদের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব হতে পারে।

৪।ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস কি ?

উত্তরঃভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস সূর্যের আলোক রশ্মিতে উপস্থিত আল্ট্রাভায়োলেট- বি বা UVB যা আমাদের ত্বকের উপর পড়লে এক ধরনের হরমোন নিঃসারিত হয় যা পরবর্তীকালে প্রোভিটামিন D৩ তে রূপান্তর হয়।

৫।ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়?

উত্তরঃভিটামিন ডি বেশি খেলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে, মাথা ঘোরা, বমি হওয়া, অল্পতেই শরীরে ক্লান্তি চলে আসা এবং পরবর্তীতে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।

৬।কোন সময়ের রোদে ভিটামিন ডি থাকে?

উত্তরঃসকাল থেকে বিকাল ৩-৪ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভিটামিন ডি থাকে।

৭।ভিটামিন ডি এর অভাবে কি রোগ হয?

উত্তরঃভিটামিন ডি এর অভাবে বাচ্চাদের Rickets এবং প্রাপ্তবয়স্কদের Osteomalacia নামক অবস্থার কারণে হাড়ের ব্যথা হতে পারে। এছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া, হাঁড়ের জয়েন্টে ব্যথা করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 শেষকথা

আশাকরি আপনারা ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা সম্পর্কে সকল তথ্য পেয়েছেন। এই সকল খাবার গুলো থেকে আপনি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরণ করতে পারবেন। এসব খাবার খাওয়ার পর ও যদি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকে তাহলে আপনি ডাক্তাত্রের পরামর্শ অনু্যায়ী Vitamin D Tablet বা Capsule গ্রহণ করতে পারেন।

পোস্ট ট্যাগ-

ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি,ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর নাম,ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার,ভিটামিন সি যুক্ত খাবার,ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয়,ভিটামিন ডি এর উপকারিতা,ভিটামিন ডি ৩ ঔষধের নাম,ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ।

আরও-

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

এনা পরিবহন অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

লাল সবুজ পরিবহনের অনলাইন টিকিট 

রংপুর এক্সপ্রেস  ট্রেনের অনলাইন টিকিট করার

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment