বমি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত- বমি হওয়ার কারন

বমি নিজে কোন অসুখ না। অন্য কোন অসুখের উপসর্গ মাত্র। বমি অনেক কারনে- অকারণে হতে পারে। অকারণে বললাম এই জন্য, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, বিশেষ করে ভাজাপোড়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে, অতিরিক্ত এলকোহল সেবনেও বমি হতে পারে। ফুড পয়জনিং বা ডাইরিয়া হলেও বমি হয়, প্রেগ্ন্যাসির একটা সাধারণ উপসর্গ হলো বমি। এছাড়াও গ্যাস্ট্রাইটিস এর কারনেও বমি হয়।বমি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত

তাই বমি হলে তৎখানাত কি করা উচিত তা‌ জেনে রাখা ভালো। বমি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে ধারণা থাকলে তৎক্ষণাৎ বমি কমানো সম্ভব।বমি হলে কি খাওয়া উচিত

বমি হলে কি ধরনের খাবার খেতে হবে সেই বিষয়ে আজকে আলোচনা করবো।

বমি হওয়ার কারন

নানা রোগের উপসর্গ হিসেবে হতে পারে বমি। বদ হজমের মতো অতি সাধারণ কারণেও বমি হয়ে থাকে। আবার অনেক বড় রোগের কারণ হিসেবেও বমি হয়ে থাকে।বমি শুধুমাত্র এক কারনে হয় না বমি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণত-

১।গ্যাসের সমস্যা

পেপটিক আলসার জনিত সমস্যা ও বমি হতে পারে। বুক জ্বালাপোড়া খাওয়ার পর গলা জ্বলা ঢেকুর উঠা এবং পেট ভার অনুভূব হলে বুঝতে হবে গ্যাসের সমস্যা হয়েছে এবং সে জন্যই বমি বমি ভাব হচ্ছে।

২।বদহজম

বদ হজম বমির অন্যতম একটি প্রধান কারণ। খাবার যদি সঠিকভাবে পেটে হজম না হয় তাহলে অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।

৩।গর্ভাবস্থায়

কোন নারী যদি মা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করে তবে সে ক্ষেত্রে বমি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক এতে বিচলিত হওয়ার মতন কিছু নেই। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস বমি অথবা বমি বমি ভাব হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

৪।কিডনি সমস্যা

দীর্ঘমেয়াদী কিডনির সমস্যা থাকলে বমি বমি ভাব হয় এবং বমি হয়ে থাকে।

মস্তিষ্ক জনিত রোগ

মস্তিষ্কের গুরতর সমস্যায় বমি হতে পারে। মস্তিষ্কের টিউমার হলেও বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বমি হলে করণীয়

বমি হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও পানি বের হয়ে যায় এ লবণ পানি ঘাটতি পূরণ করতে অবশ্যই বমি পর স্যালাইন খাওয়া উচিত অনেকে ধারনা উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিকস ও কিডনি রোগীদের স্যালাইন খাওয়া উচিত নয় কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল পানি শূন্যতা হলে যে কোন মানুষেরই স্যালাইন খাওয়া জরুরি।

এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়

তবে স্যালাইন খাওয়ানোর পর পর যদি রোগীর বমি হতে থাকে তাহলে সে স্যালাইন বের হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে শিরা পথে স্যালাইন লাগানো উচিত।বমির মাত্রা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে বমি কমতে পারে।

বমি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া খুব সাধারন একটি ঘটনা। বিভিন্ন কারণে বমি হতে পারে তবে বমি যে কারণেই হোক না কেন তা সাধারণ পর্যায়ে থাকতে ঘরোয়া কিছু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই বমি ভাব দূর করা সম্ভব। পাকস্থলীকে শীতল করার জন্য এবং বমি ভাব বন্ধ করার জন্য সাহায্য করে এমন কিছু খাবার যা খেলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

১।পাকা কলা

একটা পাকা কলা শরীরকে প্রচুর এনার্জি দেয়।বমি হওয়ার পরে শরীর খুব নাজুক হয়ে যায়-পারেনা গতানুগতিক খাদ্য হতে যথাযথ পুষ্টি গ্রহন করতে। এই দিক বিবেচনায় কলা খুবই জরুরী ডায়েট বমি পরবর্তী সময়ে।কলা তে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। ডায়রিয়া অথবা বমি হলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর থেকে প্রচুর পটাশিয়াম লস হয়, পাকা কলা খেলে এই লসটা পূরন হয় পাশাপাশি শরীর পায় ইন্সট্যান্ট এনার্জি।

২।হার্বাল চা

অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন হার্বাল চা কিভাবে বমি কমাতে সাহায্যে করে? মজার ব্যাপার হলো হার্বাল চা খেয়ে বমি কমানোর চিকিৎসা অনেক প্রাচীন।বিশেষ করে চীন, জাপান,কোরিয়া এসব জায়গায় এই চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্নরকম রোগের উপশম করার জন্য।

৩।চিকেন স্যুপ

যদিও আমি চিকেন স্যুপ বললাম, আপনি কিন্তু চাইলে পাতলা কর্ন স্যুপ ও কাউন্ট করতে পারেন।মজার ব্যাপার হলো খেয়াল করে দেখেন হস্পিটাল এ যে কোন রোগী দেখতে যাবেন, তাদেরকে দেওয়া হয় চিকেন স্যুপ। কেন? কারন অসুস্থ রোগীদের শরীরের মেকানিজম এতোটাই দুর্বল হয়ে যায়-চিকেন স্যুপ সেখানে একটা ভালো খাবার হিসেবে কাজ করে শরীর টাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে।যে কোন সলিড খাবারের চেয়েও চিকেন স্যুপ অনেক ভালো বমি পরবর্তী খাবার হিসেবে।

৪।ঠান্ডা খাবার

শীতের সিজনে এই খাবার এর কথা ভুলে যান।যদি সিজনটা এখন গরম হয়, তাহলে ঠান্ডা খাবার যেমন আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা ফ্রুটস, দুধ, দধি, জেলো, পুডিং, কাস্টার্ড এসবই বমি কমাতে জাস্ট অসাধারণ! একটা সহজ এবং সিক্রেট কথা বলি আপনাদের, প্রচন্ড বমি হওয়ার পরে আমাদের কি হয়?

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

যে কোন খাবার দেখলেই কেমন গা গুলায় না? আপনি জাস্ট এই সময়ে একটা বরফের টুকরো খেয়ে দেখবেন।এই আইস কিউব তথা বরফের টুকরো আপনাকে কোন ভিটামিন না মিনারেলস দিবে না, কিন্তু আপনি যেন খাবার গ্রহনের দিকে ফরওয়ার্ড হোন তাতে হেল্প করবে। বমি হওয়ার পরে যে কোন খাবারের গন্ধই আবার বমির উদ্রেক করে।ঠান্ডা ফ্রিজের খাবারে গন্ধ কম থাকে, এজন্য শরীর সহজেই এগুলোকে সহ্য করে নিতে পারে।

৫।মসলা বিহীন খাবার

বমি হওয়ার পরে মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ। কারণ মসলাযুক্ত খাবারে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সমস্যার সৃষ্টি হয় যার কারণে বমি মাত্রা বাড়তে পারে মসলাযুক্ত খাবার থেকে। তাই বমি হওয়ার পর কম মসলাযুক্ত খাবার খেতে হবে।

৬।খাবার স্যালাইন

সাধারণত বমি হওয়ার পর শরীর থেকে অনেকটা লবন ও পানি বের হয়ে যায় যার ঘাটতি পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া অতিব জরুরী। যদি একবারে খাবার স্যালাইন না খেতে পারেন তাহলে একটু পরপর অল্প অল্প করে খেতে পারেন।

৭।আদা

আদা কুচি করে পানির সাথে মিশিয়ে মধু দিয়ে পান করলে বমি বমি ভাব দূর হয়। আদা চা অনেক সময় বমি কমতে সাহায্য করে। তাই বমি কমাতে আদার চা খেতে পারেন।

৮।কমলার জুস

বমি বমি ভাব হলে বা বমি হওয়ার পরে এক গ্লাস কমলার জুস খেতে পারেন। এটি শারীরিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করবে। অনেক সময় কমলার জুসে বমি বমি ভাব দূর হয়।

৯।লেবু মধু

এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন। লেবুতে অনেক ধরনের খনিজ উপাদান থাকে যা বমি ভাব দূর করতে পারে।

১০।লবঙ্গ

লবঙ্গ বমি ভাব কমাতে একটি অত্যন্ত কার্যকারী ব্যবস্থা। যদি বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয় তাহলে একটি লবঙ্গ নিয়ে মুখে রাখুন এতে আপনার বমি বমি ভাব দূর হতে পারে।

১১।লবন‌‌ চিনি

যেহেতু বমি হওয়ার পর শরীর থেকে পানি ও লবণের‌ অংশ বের হয়ে যায় অনেকটাই তাই এই লবণ ও চিনি পানিতে মিশিয়ে পান করলে শরীরে লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ হবে।

১২।নোনতা বিস্কিট

অনেক সময় বমি হলে আমাদের খাবারে অনিহা দেখা দেয় কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। সে‌ সময়  অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয়‌ কিছু খেলেও অস্বস্তি লাগে।আর বমি হওয়ার পর কোন ভাবেই পেট খালি রাখা ঠিক নয়। এ সময় নোনতা বিস্কিট খাওয়া যেতে পারে।

১৩।ব্রাট ডায়েট

কলা ভাত আপেল ও টোস্ট এই খাবারগুলো হল ব্রাট  ডায়েট। বমি হওয়ার পর সাধারণত ক্ষুধা নিবারণের জন্য এই খাবারগুলো খেতে পারেন কলা  পাকস্থলীকে শীতল রাখবে।

১৪।মৌরি

খাবার পর একটু মুড়ি খাবেন এতে বমি ভাব দূর হবে এবং মুখের ভেতরও তরতাজা থাকবে।সাধারণত বমি হওয়া টা আমাদের কারোই নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অনেক সময় অপাচ্য সংক্রামক কিছু পেটে পড়লেই বমি সমস্যা হয়ে থাকে। তবে সব সময় স্বাভাবিক কারনেও বমি না হতে পারে।

কোন রোগের লক্ষণ হিসেবেও বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। তাই বমি বমি ভাব বা বমি দীর্ঘদিন হয়ে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া যদি মাঝে মাঝে স্বাভাবিক কোনো কারণে আপনার বমি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ঘরোয়া ভাবে বমি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বমি হওয়ার কারণ কি?

বিভিন্ন কারণে বমি হতে পারে যেমন-

*এলার্জি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ।

*বদহজম বা হজমে সমস্যা।

*জিইআরডিতে আক্রান্ত হলে

*গর্ভবতী হলে।

*উদ্বেগ বা মানসিক অসুস্থতায়।

*কিডনি জনিত রোগের কারণে।

*পেটে আলসার হলে

*অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণে।

*কিছু কিছু ক্যান্সারেও বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।

*গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হলে।

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত না?

অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার তেল চর্বি জাতীয় খাবার চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন যেমন গোটা শস্য টোস্ট ইত্যাদি।

শেষকথা

মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এসবই খুব খারাপ অনুভূতি যা আপনাকে না দেয় শান্তিতে খেতে না দেয় খাবার হজম হতে।এইজন্য বমি ভাব হলে প্রথমেই মনে রাখবেন বমি কখনো চেপে রাখবেন না।

যাই হোক, বমি হয়ে গেলে পরবর্তী কাজ হলো এমন সব খাবার নির্ধারণ করবেন যা খাওয়ার পরে আবার বমি আসার চান্স কমবে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান এর ঘাটতি ও পুরন হবে।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

পোস্ট ট্যাগ-

বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত, বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়,খাওয়ার পর বমি হওয়ার কারণ,বার বার বমি হলে করণীয়,বমি হলে কি ঔষধ খেতে হবে,বমি কমানোর উপায়,বমি হলে স্যালাইন,বমি বন্ধ করার দোয়া।

আরও-

কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment