ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার সবচেয়ে সহজ উপায় ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সর্তকতা ২০২৩-২০২৪

বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে নগদ টাকার বিকল্প স্বরূপ। বিল পেমেন্ট করার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। আপনার যদি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে আপনিও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যেরকম কোন কিছুর মূল্য পরিশোধ করা যায় বা কেনাকাটা করা যায় ঠিক তেমনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিভাবে টাকা তোলা যায়। আশা করি পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার সবচেয়ে সহজ উপায়

ক্রেডিট কার্ড কেন নিবেন?

ক্রেডিট কার্ড হলো কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা প্লাস্টিক অথবা ধাতুর একটি পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার টুকরো, যা মুলত কার্ডধারকদের অর্থ ধার করতে দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই অর্থ কোনো প্রোডাক্ট এবং পরিষেবার পেমেন্ট করার জন্যে ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে।

ক্রেডিট কার্ড মূলত কার্ডধারীর অর্থ ব্যায়ের সুবিধে নিশ্চিত করে। ক্রেডিট কার্ড ইউজার যখন কোনো অর্থ পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ড ইউজ করেন, তখন উক্ত টাকা সেভিংস অথবা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেয়া হয়না। বরং খরচ করা টাকা ব্যাংক অথবা কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে বাকিতে লেনদেন করার সুবিধে দিয়ে থাকে।

ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা ও এর সুবিধা সমূহ জেনে নিন

আর এই খরচ করা অর্থকে সাধারণত পরবর্তী মাসের ১৫ থেকে ২০ দিনের মাঝে পরিশোধ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে টাকা পরিশোধ করতে পারলে কোনো রকমের অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হয়না। আর যদি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে না পরিশোধ করা যায় তবে তা দিন দিন বৃদ্ধি হতে থাকে।

অর্থাৎ যদি কোনো কারণবশত আপনি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারেন তাহলে ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি পরিমাণে সুদ চার্জ করে এবং সেই সাথে পেনাল্টি হিসেবে অতিরিক্ত টাকাও চার্জ করতে পারে।

মোট কথা ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে মূলত ব্যবহারকারীদের বাকিতে লেনদেন করার সুবিধা প্রদান করে। প্রতিটি ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে পূর্বে থেকে নির্ধারণ করে দেয়া ক্রেডিট লিমিট। আর এই ক্রেডিট কার্ডে নির্ধারিত টাকার অ্যামাউন্টটিকেই মূলত ক্রেডিট কার্ডের “ক্রেডিট লিমিট” বলা হয়ে থাকে।

অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা লেনদেন করার পরে আপনি আর ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা খরচ করতে পারবেন না। তবে ক্রেডিট লিমিট কমবেশি হতে পারে আপনি যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন উক্ত ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী। মাসিক ইনকামের উপরে ভিত্তি করে আপনাকে ব্যাংক এই ক্রেডিট লিমিট দিয়ে থাকে। ধরুনঃ আপনার প্রতি মাসে ইনকাম যদি হয় ৫০০০০ টাকা, তবে আপনি সাধারনত ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লিমিটের একটি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড পেতে চান তাহলে আপনার কিছু যোগ্যতা বা কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র থাকতে হবে। তবেই আপনি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে যেসকল প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাগতে পারে দেখে নিন।

১। ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হবে।

২। অ্যাকাউন্ট খোলার পর অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে।

৩। ক্রেডিট কার্ডের জন্য ব্যাংক কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে।

৪। আপনার আয়ের উৎস দেখে তারা ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করবে।

৫। আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর আপনার ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে।

কিভাবে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়

অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর সাধারণ যাচাই করা হয়। যেকোনো পেশার মানুষ ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন। তবে আপনার আয় হতে হবে বৈধ এবং টিআইএন থাকতে হবে। এগুলো থাকলেই আপনি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। তবে এসব ডকুমেন্টের সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

১। জাতীয় পরিচয়পত্র

২। পাসপোর্ট সাইজ ছবি

৩। টিআইএন সার্টিফিকেট

৪। চাকুরিজীবীদের জন্য অ্যাপয়নমেন্ট লেটার, স্যালারি সার্টিফিকেট এবং ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

৫। ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট এবং তিন মাসের ব্যাংক ট্রাঞ্জেশন স্টেটমেন্ট।

এছাড়াও যদি অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগে তাহলে আপনি যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিবেন সেই ব্যাংকের কতৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা বিস্তারিত বলে দিবে। উপরোক্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আপনি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করবেন। আপনার আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলে ৩ থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্য আপনি ক্রেডিট কার্ড পেয়ে যাবেন।

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার উপায়গুলো

ক্রেডিট কার্ডে থাকা ক্রেডিট লিমিট অনলাইনে বা অফলাইনে ব্যবহার করার নিয়ম সবার জানা। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা কিভাবে তোলা যায় এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। নিচে তিনটি উপায় দেখানো হলো যেভাবে আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তুলতে টাকা পারবেন-

১।এটিএম বুথ

এটিএম বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবেন। যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, উক্ত ব্যাংক ও পার্টনার ব্যাংক এর এটিএম থেকে সরাসরি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে প্রয়োজনে টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। তবে জেনে রাখা ভালো এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে টাকা তোলার সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। তাই খুব বেশি দরকার না হলে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা না তোলা উত্তম।

ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন

ক্রেডিট কার্ড থেকে পাওয়া অর্থ কিন্তু মূলত আপনি ব্যাংক থেকে ধার করছেন। তাই সাধারণ ডেবিট কার্ড এর চেয়ে ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে ক্যাশ টাকা তোলার খরচ অনেক বেশি। এই অর্থের উপর আপনাকে বড় অংকের সুদ দিতে হবে ব্যাংককে। এর ফলে আপনি অজান্তে বড়সড় বাড়তি ফি প্রদানের ঝামেলায় পড়তে পারেন।

এছাড়াও ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম এর মাধ্যমে টাকা তুললে সেক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট স্কোরে খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা এর কারণে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আপনার মাসিক পেমেন্ট এর এমাউন্ট বেড়ে যেতে পারে যা যথাযথভাবে পরিশোধ না করলে ক্রেডিট স্কোর কমবে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে ক্যাশ না তোলাই উত্তম।

২।চেক

ব্যক্তিগত চেক ব্যবহার করে যেভাবে কেনাকাটা করা যায়, একইভাবে ক্রেডিট কার্ড চেক ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডে থাকা অর্থ ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড চেক ব্যবহার করে বিল পে করা যায় বা অন্য ক্রেডিট কার্ডে থাকা আউস্ট্যান্ডিং ব্যালেন্স এর বাকিও পরিশোধ করা যায়।

এক্ষেত্রে আপনি যে তারিখে চেক ব্যবহার করবেন ঐদিন থেকে ইন্টারেস্ট পরিশোধ করতে হবে। তবে ক্রেডিট কার্ড চেক এর ইন্টারেস্ট রেট সাধারণ কেনাকাটার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড চেক লিংক থাকে ক্রেডিট কার্ড এর সাথে। কোনো পণ্য বা সেবা কিনতে চেক ব্যবহার করলে তা ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্টে দেখতে পাবেন।

কোনো স্পেশাল অফারের অংশ হিসেবে ক্রেডিট কার্ড চেক ব্যবহার করতে চাইলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সকল শর্তাবলী পড়ে নিবেন। আবার কোনো ক্রেডিট কার্ড চেক অব্যবহৃত থেকে গেলে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন যাতে চেক ব্যবহার করে কেউ প্রতারণা করতে না পারে।

৩।মোবাইল ওয়ালেট

বিকাশ ও নগদ এর মত মোবাইল ওয়ালেট সেবা ব্যবহার করেও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা যাবে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেটে টাকা এনে খরচ করতে চান সেক্ষেত্রে ব্যাংকভেদে হয়ত শুধুমাত্র ট্রান্সফার চার্জ প্রযোজ্য হবে। আবারও বলছি, এই চার্জ ব্যাংকভেদে আলাদা হবে। তবে আপনি যদি ট্টান্সফার করা অর্থ ক্যাশ আউট করতে চান সেক্ষেত্রে আবার ক্যাশ আউট ফি প্রদান করতে হবে।

এই পোস্ট থেকে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার একাধিক উপায় তো জানতে পারলেন। কিন্তু উল্লেখিত তথ্য থেকে এটিও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা তেমন লাভজনক নয়। তাই সম্ভব হলে ও খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা না তোলাই উত্তম।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার অসুবিধা

১।এত রকম চার্জ ছাড়াও আরো একটা অসুবিধা হচ্ছে এমনিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে যে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায়, ক্যাশ তোলার ক্ষেত্রে কিন্তু সেই রিওয়ার্ড পয়েন্ট গুলো পাওয়া যায় না।

২। এটিএম থেকে টাকা তোলার দৈনিক লিমিট এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

৩। প্রতিবছর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচের একটা মাইলস্টোন পার করলে পেইড ক্রেডিট কার্ডের অ্যানুয়াল ফি দিতে হয় না।

৪।এভাবে ক্যাশ তোলার মাধ্যমে যে খরচ হয় সেটা কিন্তু ওই মাইলস্টোনের হিসেবে ধরা হয় না।

৫।সাধারণ ট্রানজাকশন-এর ক্ষেত্রে যে সমস্ত ডিসকাউন্ট অফার পাওয়া যায় সেগুলো এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।

৬।তাছাড়া সুবিধার অপব্যবহার করে নিজের আয়ত্তের বাইরে ক্যাশ তুলে ক্রেডিট কার্ড বিলের বোঝা যদি এমন জায়াগায় চলে যায় যে মেটানো সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা, তখন কিন্তু চার্জের ভার ক্রমশ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার সুবিধা

এভাবে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সবকিছুই অসুবিধাজনক নয় এবং এর সুবিধা গুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। হ্যাঁ ঝামেলা আছে, চার্জ আছে, কিন্তু এটাও মানতে হবে এমারজেন্সির সময় সপ্তাহের যেকোনো দিন যেকোনো সময়ে হাতে ক্যাশ পাওয়ার এর থেকে ভালো উপায় আর হতে পারে না।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

তাছাড়া এই সুবিধা ক্রেডিট কার্ডে এমনি এমনিই থাকে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সুবিধার ব্যবহার করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু এই সুবিধা পাওয়ার জন্য আলাদা করে কোনো চার্জ দিতে হয় না বা কোনো খরচ বহন করতে হয় না। আর ক্রেডিট কার্ডের লিমিট যত বাড়তে থাকে এই ক্যাশ অ্যাডভান্স লিমিটও তার সাথে সাথেই তত বাড়তে থাকে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব ফেলে?

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুললে সরাসরি ক্রেডিট স্কোরের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না বটে, তবে ঋণের বোঝা বেড়ে গিয়ে যদি কখনো পেমেন্ট মিস হয়ে যায় তখন কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই ক্রেডিট স্কোরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার ফলে চার্জ সমূহ

পৃথিবীতে কোনোকিছুই ফ্রিতে পাওয়া যায়না। হ্যাঁ এই সুবিধা এমারজেন্সির সময় অতুলনীয় কিন্তু এই সুবিধা দেওয়ার বদলে ব্যাংকগুলো নানাভাবে নানারকম ফি চার্জ করে নিজেদের মুনাফার অংকটাও গড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়।

১।সুদ

সাধারণ কেনাকাটার জন্য এই কার্ড ব্যবহার করলে টাকা খরচের সাথে সাথেই সুদ দিতে হয় না। এক্ষেত্রে ট্রানজাকশনের পরে কার্ড স্টেটমেন্ট জেনারেশনের দিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ 30 দিন এবং স্টেটমেন্ট ডেট থেকে ডিউ ডেট পর্যন্ত আরো 20 দিন মানে মোট 50 দিন পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড পাওয়া যায়।

কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে টাকা তোলার ক্ষেত্রে টাকা তোলার সাথে সাথেই সুদ গোনা শুরু হয়ে যায়। এবং যতক্ষণ না টাকা শোধ করা হচ্ছে ততক্ষণ সুদ বাড়তে থাকে। এছাড়া সাধারণ ট্রানজাকশনে যে হারে সুদ দিতে হয় টাকা তোলার ক্ষেত্রে সাধারণত তার থেকে বেশি হারে সুদ দিতে হয়।

২।ক্যাশ অ্যাডভান্স চার্জ

সুদ ছাড়াও ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশ তোলার ক্ষেত্রে ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি নামে আরও একটা চার্জ দিতে হয়। কার্ড ব্যবহার করে ক্যাশ তোলার সময় প্রতিবার এই চার্জ কাটে। ব্যাংক ভেদে এই চার্জ 2-3% হতে পারে এবং নূন্যতম হিসেবে সাধারণত 250-500 টাকা কাটে।

৩।এটিএম চার্জ

কিছু কিছু ব্যাংক অন্য ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করার জন্য বা প্রতি মাসে ন্যূনতম লিমিটের থেকে বেশিবার ব্যবহার করার জন্য টাকা তোলার সময় একটা এটিএম উইথড্রয়াল ফি কাটতে পারে। এটা ট্রানজাকশন প্রতি 15-20 টাকার মতো হতে পারে।

৪।ওভার লিমিট চার্জ

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে হলে কার্ডের ক্যাশ লিমিট টা আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। লিমিটের বাইরেও অনেক সময় কার্ড প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো ট্রানজাকশন করতে বা ক্যাশ তুলতে দেয়। আর যদি দেয় সেক্ষেত্রে কিন্তু একটা ওভার লিমিট চার্জ কেটে নেয়।

৫। পরোক্ষভাবে অন্যান্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে চার্জ

এই কার্ড ব্যবহার করে একবার ক্যাশ তোলার পর সেই ধার শোধ করার আগে পর্যন্ত যা যা কেনাকাটা করা হয় সেই সমস্ত কেনাকাটায় কিন্তু আর ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড পাওয়া যায় না। মানে ক্যাশ তোলার পরে কার্ডে সমস্ত খরচের উপরে তৎক্ষণাৎ সুদ গোনা শুরু হয়ে যায়।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সর্তকতা

১।ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটু অনিয়মে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। তাই ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এমন স্থানে রাখুন, যেন সহজে কারও তা চোখে না পড়ে।

২।নারীরা যদি পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখেন, তাহলে চেন বন্ধ রাখুন।

৩।জনবহুল এলাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে ছোট ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখুন।

৪।মুঠোফোন বা ক্যামেরায় কেউ যাতে আপনার কার্ডের ছবি তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

৫। মূল্য পরিশোধের পর কার্ড ফেরত নেওয়া হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হতে হবে।

৬। ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা এ-সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

৭। ব্যাংকের অনুমোদিত বা নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কার্ডের তথ্য অন্য কেউ চাইলে জিজ্ঞাসা করে তার পরিচয় নিশ্চিত হোন।

৮।সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের তথ্য আদান-প্রদানে ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকে।

৯। এর বাইরে কোনো নম্বর থেকে ফোন করে কার্ডের তথ্য চাইলে, তা নির্ধারিত ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

১০। কার্ড হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।

১১। দ্রুত সময়ে কার্ডটি লক হলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।

১২।যে এটিএম ব্যবহার করে আপনি নিয়মিত টাকা তোলেন, চেষ্টা করুন সেসব স্থান থেকেই টাকা তুলতে।

১৩।ব্যাংকের ভেতরে বা কাছাকাছি জায়গায় স্থাপিত এটিএমের চেয়ে অপরিচিত স্থানের এটিএম থেকে টাকা না তোলাই উত্তম।

১৪। কার্ডের পিন এটিএমে প্রবেশ করানোর সময় আরেক হাত দিয়ে তা ঢেকে রাখুন, যাতে গোপন কোনো ক্যামেরা বা যন্ত্রে পিন নম্বরটি দেখা না যায়।

১৫।যদি আপনার কার্ডটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে।

১৬।এ ছাড়া আপনার ব্যবহৃত কার্ডে স্টেটমেন্টে কোনো ধরনের অসংগতি নজরে এলে কল সেন্টারে ফোন দিয়ে রিপোর্ট করুন।

১৭।সে ক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে লেনদেন-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে লিখিতভাবে রিপোর্ট করতে হবে।

 গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।সব রকম ক্রেডিট কার্ডে কি ক্যাশ অ্যাডভান্স এর সুবিধা পাওয়া যায়?

উত্তরঃনা, সব ক্রেডিট কার্ডে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। কোন কার্ডে এই সুবিধা উপলব্ধ সেটা জানার জন্য সেই কার্ডের ডকুমেন্টেশন পড়ে নেওয়া যেতে পারে বা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

২। কার্ডের ক্যাশ লিমিট কত কিভাবে জানা যাবে?

উত্তরঃক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্টে এর উল্লেখ থাকে। এছাড়া কার্ড অ্যাকাউন্টের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকেও এটা জানা যায়।

৩।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ক্যাশ তোলার ক্ষেত্রে কোনো অ্যাপ্রুভাল লাগে কি?

উত্তরঃ না। কার্ড নিয়ে সরাসরি এটিএম-এ গিয়েই টাকা তোলা যায়।

৪।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার পর সেই টাকা কি ক্যাশেই শোধ করতে হয়?

উত্তরঃনা সেরকম কোনো ব্যাপার নেই। ক্রেডিট কার্ডে সাধারনভাবে যেভাবে বিল পেমেন্ট করা হয় সেভাবেই পেমেন্ট করতে হয়।

৫।ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার আগে কি কোনো কাগজপত্র প্রয়োজন?

উত্তরঃক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার সময় কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই।

৬।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা হলে এটি কি ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব ফেলবে?

উত্তরঃক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা হলে ক্রেডিট স্কোরের উপর কোন প্রভাব পড়বে না। যাইহোক, যদি আপনি সম্পূর্ণ এবং সময়মতো পরিশোধ না করেন, তাহলে ক্রেডিট রেটিং স্কোরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

শেষকথা

আশা করি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার পুরা পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছে।তবে আপনাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার ক্ষেত্রে এর সুদ ও চার্জ গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় আমরা অনেক ধরনের ভুল করে থাকি এর সঠিক ব্যবহারগুলো জেনে সতর্ক সতর্ক থাকা ভালো। যাতে আপনি ভবিষ্যতে কোন সমস্যায় না পড়েন।

পোস্ট ট্যাগ-

ক্রেডিট কার্ড খরচ,ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায়,কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো,ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধের নিয়ম,সাউথইস্ট ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম,ক্রেডিট কার্ড থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম,ক্রেডিট কার্ড এর ইন্টারেস্ট,ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কি কি করা যায়।

আপনার জন্য আরো 

আরও-

পূবালী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত

কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো জেনে নিন

বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের নিয়মনীতি

ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা

ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *