থ্যালাসেমিয়া রোগীরা কি কি খাবার খাবেন আর কি কি খাবার এড়িয়ে চলবেন তার তালিকা

থ্যালাসেমিয়া রোগীরা কি কি খাবার খাবেন –থ্যালাসেমিয়া হলো একটা জেনেটিক রোগ যেখানে রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই হিমোগ্লোবিন এর অনুপুস্থিতিতে রক্তের লোহিত কণিকা অনেক কমে যায়।

লোহিত কণিকা যেহেতু রক্তের কোষে অক্সিজেন সাপ্লাই এর কাজ করে, রক্তে অক্সিজেন ও হ্রাস পায়। এবং রোগী তখন দুর্বল হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট সহ শারীরিক অন্যান্য উপসর্গ গুলো এমতাবস্থায় দেখা যায়।

যাই হোক, যদিও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির জন্য খাবারের তালিকা প্রায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই, তবুও আয়রন এর আধিক্য আছে যেই খাবারে, সেসব খাবার মূলত থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য একেবারে নিষেধ করা হয়।

আজ আমরা জানবো থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য প্রযোজ্য খাবারের তালিকা, পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা ।

বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকবেন-থ্যালাসেমিয়া রোগীরা কি কি খাবার খাবেন

থ্যালাসেমিয়া কী?

থ্যালাসেমিয়া রক্তের একটি রোগ। এই রোগ মা-বাবার থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিনের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে আসে। তাই এটি একটি বংশগত রোগ। এই রোগে আক্রান্তের শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে। হিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় আলফা এবং বিটা প্রোটিন দিয়ে। যদি এই প্রোটিনগুলোর উৎপাদন কমে যায়, তবে শরীরে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনও কমে যায় আর, থ্যালাসেমিয়া হয়।

থ্যালাসেমিয়ার   প্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা “অ্যানিমিয়া”তে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে

১) আলফা থ্যালাসেমিয়া (ক.আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর, খ.আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর)

২) বিটা থ্যালাসেমিয়া। (ক.বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর, খ. বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর)

সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া, বিটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

ডেল্টা বিটা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম বিশ্বে বিটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। আলফা থ্যালাসেমিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সর্বত্র এবং কখনও কখনও ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

থ্যালাসেমিয়া রোগ কেন হয়?

মানবদেহে লোহিত কণিকার আয়ু তিন মাস। অস্থিমজ্জায় অনবরত লোহিত কণিকা তৈরি হয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের ক্ষেত্রে লোহিত কণিকার আয়ু কম থাকে। তাঁদের হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি না-হওয়ায় রক্তের লোহিত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায়। আর অস্থিমজ্জার পক্ষে লোহিত কণিকা তৈরি করা সম্ভব হয় না। একইসঙ্গে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে নিয়মিতভাবে রক্ত গ্রহণ করতে হয় বলে রক্তে আয়রনের পরিমাণ ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। যাতে প্লীহা আয়তনে বড় হয়ে যায়। পরবর্তী কালে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়ায় মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, প্যানক্রিয়াস, যকৃত এবং অন্ডকোষের মত বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

থ্যালাসেমিয়ার রোগের লক্ষণ

সাধারণত থ্যালাসেমিয়ার ধরণ আর তিব্রতার উপর লক্ষণ নির্ভর করে। কিছু কিছু শিশু জন্মগত ভাবেই থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ নিয়ে জন্মায়। আবার কেউ তার জন্মের ২ বছরের মধ্যে লক্ষণ দেখানো শুরু করে।

 থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ 

১. অল্পতেই শরীর অবসন্ন হয়ে যাওয়া।

২. দুর্বলতা অনুভব করা।

৩. চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

৪. মুখের হাড়ে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

৫. ইউরিনের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া (লাল লোহিত কনিকা ভেঙ্গে যাওয়ার লক্ষণ) ও চোখের রঙ হলদে হয়ে যাওয়া।

৬. খাওয়াতে অরুচি দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা

শিশুরাই যেহুতু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাই তাঁদের সঠিক চিকিৎসা হতে পারে একমাত্র শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে। মাইনর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার কোনও প্রয়োজন হয় না। মেজর থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বছরে ৮ থেকে ১০ বার রক্তগ্রহণ করতে হয়। অতিরিক্ত আয়রন জমে যাতে যকৃত বিকল হয়ে না-যায়, সেজন্য আয়রন চিলেশন থেরাপির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়রন শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া যায়। সেজন্য একজন ম্যাচ ডোনার লাগে। পাশাপাশি রোগীকে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড খেতে হয়। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া

সাধারণত, জন্মগতভাবে একটি শিশু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে যা, শিশু ও মা-বাবার কোন ভুল থেকে নয় বরং জেনেটিক্যালি বা জিনগত কারণে সংঘটিত হয়। শিশুর বয়স বৃদ্ধির ২ বছরের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে শুরু করে যা পরবর্তীতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া তথা পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের নিরুপণ করা হয়। থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি অ্যানিমিয়া তে আক্রান্ত সন্তান বড় হয়ে সাধারণত ৩০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

শিশুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় সেটি হলো তার যথাযথ বৃদ্ধি না হওয়া। আর সেই সাথে রক্তস্বল্পতা, অরুচি, দুর্বলতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। শিশুটি স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। শিশু মনে হীনমন্যতার সৃষ্টি হয় ও নিজেকে অস্বাভাবিক ভাবে এবং সেই সাথে সবার সঙ্গ এড়িয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য একটা পর্যাপ্ত ডায়েট প্ল্যান অত্যন্ত জরুরি।যেহেতু এই রোগীরা সব খাবার খেতে পারেন না, তাই এই রোগীদের খাবারের লিস্টে থাকা খাবারগুলোতে ভিটামিন এবং মিনারেল এর অনুপাত ঠিক আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখা খুব জরুরি ।

গতানুগতিক খাবার বাদেও কম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো এখন আমরা তুলে ধরবো এখানে। আশা করি এসব খাবার নিয়ম মেনে খেতে পারলে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা ভালো থাকবে।

এই সব রোগীদের জন্য ডায়েট প্ল্যান এমন হওয়া উচিৎ  যেখানে প্রোটিন,  ক্যালসিয়াম,  ভিটামিন ডি, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম ভিটামিন-ই এবং ভিটামিন-সি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে।

১।প্রোটিন

যেহেতু লাল মাংস, কলিজা,  ডিম ইত্যাদি থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য নিষেধ,  তাই অন্য প্রোটিন উৎস যেমন-পণির, দধি, সয়া ইত্যাদি খাবার থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য যথাযথ বলে ধরা হয়।

২।ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম

থ্যালাসেমিয়া রোগীর এক প্রধান সমস্যা হচ্ছে, তাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের অবস্থা অনেক ভঙ্গুর হয়। এছাড়াও হাড় প্রশস্ত হয়ে যাওয়া, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, হাড়ের জয়েন্ট এ ব্যাথা ইত্যাদি ও দেখা যায়।এইসব হাড়ের সমস্যা দুর করার জন্য ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম খাওয়া অনেক জরুরি।

ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম এর ভালো উৎস হচ্ছে দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, সয়া, ডিমের কুসুম, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট।  এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, সকালের রোদ ও কিন্তু ভিটামিন ডি এর খুব ভালো একটা উৎস।

৩।মিনারেলস

মিনারেলস যেমন কপার, জিংক, সেলেনিয়াম থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য উপকারী। কারন এইসব মিনারেলস গুলো সরাসরি প্রোটিন এবং ডি এন এ সিন্থেসিস এ কাজ করে।পাশাপাশি রক্তের কোষের স্বাভাবিক গ্রোথ কে ও তড়ান্বিত করে।

তো থ্যালাসেমিয়া হলে যেটা হয়, শরীরে এইসব মিনারেল গুলোর পরিমাণ কমে যায়। এজন্য রেগুলার ডায়েট এবং সাপ্লিমেন্ট থেকে এসব উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়। মাশরুম, কালো চকলেট,  মুরগীর মাংস, গম, টার্কির মাংস, দুধ-এসব খাবারে এই উপরে উল্লেখ্য মিনারেল গুলো পাওয়া যায়।

৪।এন্টি অক্সিডেন্ট

যেসব থ্যালাসেমিয়া রোগীর বারবার ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা লাগে, তাদের রক্তের কোষ গুলো খুব দ্রুত ভেঙে যায় ফলশ্রুতিতে তাদের অন্যান্য মারাত্মক রোগ যেমন, ডায়বেটিস,  ক্যান্সার এসবের লক্ষণ দেখা দেয়।

শরীরের রক্তে অযথা ঘোরাঘুরি করতে থাকা ফ্রি রেডিক্যাল গুলো বেড়ে যায় ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ফলে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেচ থেকে।

যাই হোক, আপনি যত বেশী এন্টি অক্সিডেন্ট খাবেন, তত বেশী এসব ফ্রিরেডিক্যাল আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

এছাড়াও এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ইম্যুউনো সিস্টেম কে উন্নয়ন করে পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীর অন্য সমস্ত জটিলতা যেমন, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে।

আপনি হয়তো জানেন, ভিটামিন ই এবং সি হচ্ছে এন্টি অক্সিডেন্ট।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য ভিটামিন ই এর সোর্স হলো-সুর্যমুখীর তেল, বিভিন্ন বীজ যেমন, মিস্টিকুমড়োর বীজ।

আর ভিটামিন সি যেমন পেয়ারা, কমলা, স্ট্রবেরি, পেপে এসব খেতে পারবেন এসব রোগীরা।

৪।তুলনামূলক কম আয়রন আছে যেসব মাংসে

গরু বা  খাসীর মাংস বাদ দিয়ে অন্য সকল মাংসেই মোটামুটি কম আয়রন থাকে৷ মুরগির মাংস,টার্কির মাংস ইত্যাদি কম আয়রনের মাংস।

৫।কম আয়রন আছে যেসব মাছে

ছোট মাছ, রুই, কাতলা, শোল, পুঁটি ইত্যাদি মাছে কম আয়রন রয়েছে।এছাড়াও শোল, টাকি, মাগুর এসবেও কম আয়রন আছে।

৬।ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুমে রয়েছে ভালো প্রোটিন।  এই প্রোটিন শরীরে আয়রন শোষণে বাঁধা প্রধান করে।

৭।কম আয়রন আছে যেসব সবজিতে

সকল শাক এ অনেক বেশী আয়রন থাকে।এজন্য থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য শাক নিষেধ করা হয়। তবে সবজি যেমন, সব ধরনের লাউ, কুঁমড়া, করলা, ঝিঙা ইত্যাদি খাবারে কম আয়রন থাকে।

৮।কম আয়রন আছে যেসব ফলে

কম আয়রন আছে এমন  ফলের লিস্ট অনেক লম্বা। যেমন কমলা লেবু, জাম্বুরা, পেঁপে, আম, ইত্যাদি ফল কম আয়রনের। এছাড়াও বিদেশি খাবার যেমন কিউয়ি, স্ট্রবেরি, বেগুনি আঙুর এসবেও কম আয়রন থাকে।

৯।কম আয়রন আছে যেসব ডালে

মসুরের ডালে আয়রন কম থাকে।এ ছাড়া মসুরের ডাল আয়রন শোষণ করতে ও বাঁধা প্রধান করে।

১০।কম আয়রন আছে যেসব  খাদ্যশস্যতে

চাল, গম, আটা। এসব খাদ্যশস্য দিয়ে বানানো সকল খাবারেও কম আয়রন থাকে।

১১।চা কফি

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য প্রতিদিন এক কাপ চা অথবা কফি অবশ্যই দরকার। চা এবং কফিতে থাকা ট্যানিন থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।

এই ট্যানিন শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ পরিশোধনে সাহায্যে করে এবং শরীরের অভ্যন্তরে আয়রন গ্রহণে বাঁধা প্রধান করে।

১২।আরো যেসব খাবারে কম আয়রন আছে

মধু, দুধ, দুধের বানানো খাবার, লেবু ইত্যাদি খাবারেও কম আয়রন বিদ্যমান। আপনার যদি ডায়বেটিস এর সমস্যা না থাকে, আপনি ইচ্ছামতো দুধ নিয়ে বানানো মাখন, দধি, মিষ্টি, পনির খেতে পারেন।চাইলে সরাসরি দুধ ও খেতে পারেন। এছাড়াও সরাসরি যদি দুধ খান, শরীরে শক্তি পাবেন দ্রুত।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের যে খাবার নিষেধ

আয়রন সমৃদ্ধ সমস্ত খাবার থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য নিষেধ করা হয়। অতিরিক্ত আয়রন বা অধিক পরিমাণে লৌহ আছে সে সমস্ত খাবারে এমন খাবার এর লিস্ট হলো-

১।মাংস ( গরুর মাংস, খাসির মাংস, কলিজা)।

২। ইলিশ, চিতল এবং শিং মাছ,এই সব ধরনের মাছই সাধারণত না খাওয়া উচিত।

৩।চিংড়ী।

৪।সামুদ্রিক মাছ, স্কুইড, অক্টোপাস বা অন্যান্য।

৫।শুটকি মাছ।

৬।কঁচু শাক, লাল শাক, সজনে শাক বিশেষ করে সকল ধরনের শাক পাতা।

৭।পুঁই শাক, ফুলকপি শাক।

৮।ফুলকপি,শীম, বরবটি, ব্রোকলি।

৯।আনারস, আনার, তরমুজ।

১০।খেজুর, আতা।

১১।বাচ্চাদের খাবার যেমন কর্ণ ফ্ল্যাক্স, আয়রন ফোর্টিফাইড সিরিয়াল।

১২।ছোলা, কিসমিস।

১৩।বাদাম, তিল,জিরা।

১৪।পান, সরিষা, ধনিয়া।

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিবছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বিশ্বে প্রতি বছর ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশের ১০-১২ ভাগ মানুষ এ রোগের বাহক। অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষ তাদের অজান্তে এ রোগের বাহক। দেশে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার কোনটি?

উত্তরঃথ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ ডায়েট। আপনার ডায়েটে এমন খাদ্য আইটেম যোগ করুন যাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে দুগ্ধজাত দ্রব্য, বাদাম, হ্যাজেলনাট, তিলের বীজ, সার্ডিন, স্যামন, এপ্রিকট, ডুমুর, কমলা, বেদানা, সয়াবিন, সাদা রুটি, সাদা চাল, কেল বাঁধাকপি, ফুলকপি।

২।থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা কি?

উত্তরঃডিসানের ল্যাবরেটরি, জেনেটিক কাউন্সিলিং ও জেনেটিক টেস্টিং এর মত থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করার জন্য বিশেষ ভাবে সজ্জিত । ডিসানের চিকিৎসকেরা, মডারেট ও সিভিয়র ফেইস বা পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা 3 টি পদ্ধতিতে করে থাকে, সেগুলি হল – ব্লাড ট্রান্সফিউশন, কেলেশন থেরাপি ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টস ।

৩।থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য কোন ভিটামিন ভালো?

উত্তরঃভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশন (মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে একবার 50,000 IU) 25-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি 20 ng/dL এর কম রোগীদের জন্য সুপারিশ করা হয়। যদি খাদ্যতালিকা অপর্যাপ্ত হয় তবে ক্যালসিয়াম সম্পূরককে উত্সাহিত করা উচিত।

৪।থ্যালাসেমিয়া রোগী কি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে?

উত্তরঃবি-থ্যালাসেমিয়া প্রধান শিশু যাদের একাধিক রক্ত ​​সঞ্চালন হয়েছে তারা আয়রন ওভারলোড এবং উচ্চ অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমান অধ্যয়ন থেকে, হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবং কম ডোজ ভিটামিন সি সম্পর্কিত কোনও উল্লেখযোগ্য উন্নতি বিটা-থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে বিরোধী নয়।

৫।থ্যালাসেমিয়া মাইনর হলে ফলিক এসিডের পরিমাণ কত?

উত্তরঃরোগীর রক্তস্বল্পতা না থাকলে কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয় না। ফলিক অ্যাসিড ( 1-5 মিলিগ্রাম/দিন ) দেওয়া যেতে পারে যখন খাবারে ফোলেটের ঘাটতি থাকে এবং/অথবা সংক্রমণ, ম্যালাবসর্পশন এবং রোগী যেখানে গর্ভবতী হয়।

৬।শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ কি কি?

উত্তরঃথ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি অ্যানিমিয়া (Cooley anemia)-তে আক্রান্ত সন্তান বড় হয়ে সাধারণত ৩০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় সেটি হলো তার যথাযথ বৃদ্ধি না হওয়া। আর সেই সাথে রক্তস্বল্পতা, অরুচি, দুর্বলতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

৭।থ্যালাসেমিয়া রোগের অপর নাম কী?

উত্তরঃএ অবস্থাকে বলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর (Beta-thalassemia major) অথবা কুলিস অ্যানিমিয়া (Cooley’s anemia). নবজাতক যেসব শিশুর এই সমস্যা থাকে তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থ্যবান থাকে। তবে জন্মের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই এর উপসর্গ দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বের আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছে।

শেষকথা

একটা সুষম খাবারের তালিকা দিয়ে সহজেই থ্যালাসেমিয়া রোগীরা অন্য সব মানুষের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।

পাশাপাশি সুষম খাবার বা ডায়েট প্ল্যান করার ফলে, এসব রোগীর শরীর তুলনামুলক অন্যান্য মানুষের চেয়েও আরো ভালো থাকে।

কাজেই আপনি যদি একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের রোগী হোন, অবশ্যই আয়রন আছে এমন সব খাবার এড়িয়ে চলুন।

Post tags –

থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে,থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয়,থ্যালাসেমিয়া বাহক এর চিকিৎসা,থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে,থ্যালাসেমিয়া রোগীর লক্ষণ,থ্যালাসেমিয়া রোগ কেন হয়,বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট ট্রিটমেন্ট

আপনার জন্য আরো –

আপনার জন্য-

কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আমাশয় রোগীর কি কি খাবার খাওয়া উচিত তার তালিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *