ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা-ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

Rate this post

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা-ডায়াবেটিস আমাদের সকলের কাছে একটি পরিচিত রোগ। বাংলাদেশে বিভিন্ন কারনে ডায়াবেটিস রোগ পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যাবে না এমন পরিবার পাওয়া দুষ্কর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত অনুযায়ী, ডায়াবেটিস একটি অসংক্রামক রোগ যা মহামারি রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে।

এই রোগে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমকে আক্রান্ত করে বলে এ রোগের নিয়ন্ত্রণ, সঠিক সময়ে রোগ নির্নয় ও সঠিক চিকিৎসাগ্রহণ জরুরি। বলা হয়ে থাকে ডায়েবেটিসে তিনটি “ডি” মেনে চলা জরুরি, প্রথমত ডায়েট বা পরিমিত খাবার, ড্রাগ বা ঔষধ এবং ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিতা। এখানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করব।ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

আলোচনা আরও জানতে পারবেন ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ,  ডায়াবেটিসের সাথে খাবারের সম্পর্ক,ডায়াবেটিসের সুষম খাদ্য গ্রহনের উপকারিতা,সুষম খাদ্য গ্রহণের তালিকা,ডায়াবেটিস রোগী যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলবে, ডায়াবেটিস রোগীর পরামর্শ,ডায়াবেটিস রোগীরপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি সম্পর্কে বিস্তারিত।

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার বা শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সমস্যা তৈরি করে এমন একটি রোগ । এক্ষেত্রে শরীর অগ্নাশয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে।

অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে। শরীরে যখন ইনসুলি্নের উৎপন্ন হতে পারে না অথবা এটি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না তখনই এই ডায়াবেটিস রোগটি হয়।

প্রোটিন জাতীয় খাবার কী কী

এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমতে শুরু করে বা রক্তে চিনি বা গ্লুকোজ এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এর ফলে ঘন ঘন পশ্রাব হয়, গলা শুকিয়ে যায়, ওজনে পরিবর্তন হয়, শরীরে দূর্বলতা আসে, কোন ঘা সহজে শুকায় না, রক্তনালী ধংস হয়, স্নায়ু তন্ত্রে সমস্যা হয়, পা পচে যেতে পারে, অনুভুতি কমে যেতে পারে, এমনি স্ট্রোক ও মৃত্যুঝুকি বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস ৪ ধরনের হয়ে থাকেঃ টাইপ-১, টাইপ-২, গেস্টেশনাল ও অন্যান্য।

১।টাইপ-ডায়াবেটিস

টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের সব ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায়। তাদের যদি আলাদা ভাবে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তারা মারা যেতে পারে। প্রায় ৫-১০ শতাংশ মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়।

২।টাইপ-ডায়াবেটিস

যাদের শরীরে ইনসুলিন আছে কিন্তু সেটা কাজ করতে পারছে না। তখন আমরা যে খাবারই খাই না কেন তা গ্লুকোজ হিসেবে শরীরে জমে যায়,এটাই টাইপ-২ ডায়াবেটিস। প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ এ ডায়াবেটেসে আক্রান্ত।

৩।গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস

এটি সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে, প্লাসেন্টার কিছু হরমোন ইনসুলিন প্রতিরোধের জন্য দায়ী।বেশিরভাগ মহিলাই প্রসব পরবর্তী স্বাভাবিক গ্লুকোজ সহনশীলতায় ফিরে আসেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি (30-60%) থাকে। প্রায় ২-৫ শতাংশ মানুষ এ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।

৪।অন্যান্য টাইপ ডায়াবেটিস

রক্তে শর্করার কোন বৃদ্ধি পায় না (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)। এটি হলে প্রচণ্ড তৃষ্ণার অনুভূতি পায় এবং কম অ্যান্টি-ডাইউরেটিক হরমোন নিঃসরণের কারণে অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি হয়। অ্যান্টি-ডাইউরেটিক হরমোন ভ্যাসোপ্রেসিনের নিঃসরণ কমে যাওয়ায় প্রস্রাবের চরম উৎপাদন হয়। এটি প্রায় ১-২ শতাংশ মানুষের হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

১।চরম তৃষ্ণা এবং ক্ষুধা

২।ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ

৩।শুকনো ত্বক

৪।ওজন কমে যাওয়া

৫।ক্লান্তি বা তন্দ্রা

ডায়াবেটিসের সাথে খাবারের সম্পর্ক

ডায়াবেটিস রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে, যেমনঃ- ওষুধ, নিয়মিত ব্যায়ামসহ নানাভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আর সেটিও হতে হবে পরিমাণমতো। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ

১।খেজুর

খেজুরের মিষ্টি স্বাদের কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন, ডায়াবেটিক রোগীদের এটা খাওয়া ঠিক নয় কিন্তু এতে প্রচুর ফাইবারযুক্ত থাকে যা ডায়াবেটিসের জন্য অনেক উপকারী। আঙ্গুর, কমলালেবু ও ফুলকপির তুলনায় খেজুর শরীরে অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়। যার ফলে খেজুর ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

২।তিসি

এটি একধরনের বীজ যার ইংরেজি নাম ফ্লেক্সসিড। আমরা এটাকে তিসি হিসেবেই চিনে থাকি। তিসিবীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই বীজ খুবই কার্যকর। তিসি বীজ ফাইবার, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তিসি রাখতে পারেন। এটা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তিসিবীজ গুঁড়া করে প্রতিদিন দুই গ্লাস পানিতে তিন চা চামচ মিশিয়ে পান করুন।

৩।দুধ

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি’-এর ভালো উৎস দুধ। আর সেজন্য দুধ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। অনেকের দুধ খেলে পেটে গ্যাস হয়, তাই আপনি চাইলে দুধের ফ্যাটি অংশটি ছাড়া টকদই ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারও খেতে পারেন। সকালের নাস্তাও আপনি রাখতে পারেন দুধ অথবা দুগ্ধজাত কোনো খাবার।

৪।তুলসী

ঔষধি গাছ তুলসীকে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন । গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসীপাতা বিভিন্নভাবে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। খালি পেটে তুলসীপাতার রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। চাইলে তুলসীর রস আপনি চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

৫।মটরশুঁটি

হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে মটরশুঁটি। মটরশুঁটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। প্রায় প্রতিদিন ২০০ গ্রামের মতো মটরশুঁটি খেলে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

ভিটামিন এ জাতীয় খাবার তালিকা

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় মটরশুঁকি। যদি না থাকে তবে যখন মটরশুঁটির মওসুম, তখন বেশি করে কিনে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর সারা বছর খাদ্য তালিকায় রাখুন এই সবজি। তেলাকুচা পাতা এবং ফল সবজির মতো খান। মেথি চূর্ণ করেও খেতে পারেন।

ডায়াবেটিসের সুষম খাদ্য গ্রহনের উপকারিতা

ডায়াবেটিসের সুষম খাদ্য গ্রহনের উপকারিতা-সুষম খাদ্য শরীরকে পুষ্ট রাখে এবং দেহে শক্তি জোগায়। সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপগুলি  নিখুঁত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে থাকে। এটি স্থূলত্ব এবং অপুষ্টি  প্রতিরোধ  করে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে তরুনদের মধ্যে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

এটি পুষ্টি জনিত রোগ বৃদ্ধদের ব্যাধি এবং অল্প বয়সীদের অকালমৃত্যু প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিভিন্ন ধরনের কার্ডিয়োভাসকুলার রোগ,ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার সাথে জড়িত অন্যান্য রোগ শরীরকে সঠিক পুষ্টি দিয়ে এড়ানো সম্ভব। সুষম খাদ্য রোগের সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে এবং শরীর ফিট রাখে। সুষম খাদ্যের পুষ্টির উপকারিতা অগুন্তি।

এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতেই সাহায্য করে না বরং বিভিন্ন রকম অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই ধরণের রোগের একটি বড় ঝুঁকির কারণ যার মধ্যে রয়েছে টাইপ-২ ডায়বিটিস মেলিটাস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এমনকি কিছু ধরনের ক্যান্সারও।

এটি সারা বিশ্বে অক্ষমতা এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু স্বাস্থকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে ও কমাতে পারেন।

সুষম খাদ্য গ্রহণের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মোট ক্যালরির ২০% আসবে আমিষ থেকে, ৩০% আসবে ফ্যাট থেকে এবং ৫০% আসবে শর্করা থেকে।

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সুষম খাদ্যের তালিকা উল্লেখ করা হলঃ-

১।কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাঃ কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ। যা হল কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বিত রূপ। এটি একটি জৈব যৌগ। যাতে হাইডোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ২:১। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ হল শরীরে শক্তির যোগান দেওয়া। কার্বোহাইড্রেট শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

কার্বোহাইড্রেট শরীরে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিস্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট এর উৎস। ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যথা সম্ভব কমিয়ে দিতে হবে।

২।প্রোটিন বা আমিষ

অ্যামাইনো এসিডের পলিমার দ্বারা বেষ্টিত উচ্চ ভরবিশিষ্ট নাইট্রোজেন যুক্ত জটিল যৌগকে প্রোটিন বা আমিষ বলে। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন সুস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন মূলত কোষ গঠনে সাহায্য করে। অঙ্গের গঠন, কার্যকারীতা ও নিয়ন্ত্রনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীভিত্তিক উভয় খাবারেই প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। ভাল প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো ডিম, অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই দেশজ মাছ ও মুরগি ইত্যাদি। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিন জাতীয় খাবারে বাধা নেই যদি না তাদের কিডনি তে কোন জটিলতা না থাকে।

৩।ফ্যাট বা চর্বি

চর্বি হচ্ছে প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ যা প্রাণীজ শরীরে স্তর আকারে বা ত্বকের নিচে কোন অর্গানের চারপাশে জমা হয়ে থাকে।অন্যভাবে বলা যায়, প্রাকৃতিক গ্লাইসেরল এস্টার এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ, যা সাধারনত রুমের তাপমাত্রায় জমাট হয়ে কঠিন অবস্থায় থাকে এবং প্রাণীজ ও উদ্ভিদ জগতের প্রধানতম উপাদান।

উপকারী চর্বি যেমন, বাদাম, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারে। তবে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।

৪।পানীয়

মানব দেহের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া মানব দেহ অচল। মানব দেহের রক্ত, মাংস, স্নায়ুপিন্ড,হাড়, দাত, অস্থি, মজ্জা, ত্বক সবকিছুর জন্য পানি অপরিহার্য। পানি মানুষকে বেচে থাকতে সাহায্য করে। এজন্য পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষের পৃথিবীতে বেচে থাকা দুষ্কর। মানুষের দেহের অভ্যন্তরীন যাবতীয় কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

একজন ডায়াবেটিস রোগী দিনে স্বাভাবিক মাত্রায় পানি পান করবেন। অনেকে ঘন ঘন পশ্রাবের ভয়ে পানি খেতে চান না, তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি হতে পারে। এছাড়া ডাবের পানি ও উপকারী।

ডায়াবেটিস রোগী যে খাবার গুলি এড়িয়ে চলতে হবে

১।লবণ: লবণ ডায়াবেটিকসের জন্য প্রধান দায়ী। আপনি যে কোন ফল বা সবজি থেকে আপনি যথেষ্ট লবণ গ্রহণ করে থাকেন তাই যতটা সম্ভব লবণ কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

২।চিনি:সুক্রোজ, একটি টেবিল চিনি, ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট ছাড়া কিছুই প্রদান করে না। এছাড়াও, আপনার সুক্রোজ হজম করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। মধু, গুড় ইত্যাদি গ্রহণ করুন যাতে প্রাকৃতিক ভাবেচিনি রয়েছে।

৩।চর্বি: অত্যধিক চর্বি গ্রহণ করা অবশ্যই একটি ভাল অভ্যাস নয়। তেলে ভাজা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিৎ। তবে এটা মনে রাখবেন যে আপনাকে অল্প পরিমাণ তেল গ্রহণ করতে হবে যাতে চর্বিযুক্ত ভিটামিনগুলি, বিশেষ করে ভিটামিন ই হজমে সুবিধা হয়।

৪।আমিষভোজীদের জন্য: লাল মাংস গ্রহণ করা বন্ধ করুন। নিরামিষী খবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। একটি নিরামিষ খাদ্য জন্য যেতে চেষ্টা করুন।যদি আপনি তা না করতে পারেন তাহলে আপনি পলটির ডিম খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাছ খেতে পারেন।

৫।দুগ্ধজাত দ্রব্য: কম ফ্যাট জাতীয় দুধ যেমন দই খেতে পারেন। হাই ফ্যাট চিসসের বদলে লো ফ্যাট চিস খেতে পারেন।

৬।চা এবং কফি: প্রতিদিন দু কাপের বেশি চা বা কফি খাবেন না। আয়ুর্বেদিক চা খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৭।ময়দা এবং ময়দার তৈরি দ্রব্যময়দার বদলে আটার জিনিস খাওয়া শুরু করুন, এছাড়া সয়াবিন এবং ভাত খেতে পারেন।

৮।উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার ভাত, আলু, গাজর, পাউরুটি এবং কলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন কারণ এগুলি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোগীর পরামর্শ

১।প্রতিদিন ৩৫-৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটা।

২।ডায়াবেটিক ব্যক্তি সকালে, দুপুরের খাবার, এবং ডিনার খাবার মাঝে কিছু হাল্কা খাবার খেতে পারে।

৩।তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৪।ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। এটি রক্তে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ স্তর বাড়ায় এবং নিয়ন্ত্রণ রাখে।

৫।বেশি পার্টিতে যাবেন না।

৬।ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে খাদ্য খেতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর প্রয়োজনীয় ক্যালোরি

১।একজন মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ ডায়াবেটিস রোগীর সঙ্গে ১০০০ – ১৬০০ কিলোক্যালরি প্রয়োজন।

২।একটি বয়স্ক ডায়াবেটিস রুগীর ১৪০০ -১৮০০ কিলোক্যালরির বেশি হবে না।

৩।একজন কম বয়সী ডায়াবেটিস রুগী হবে ১৮০০ -৩০০০ কিলোগ্রাম।

৪।প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ: প্রায় মোট ক্যালোরি ১৮০ গ্রাম।

৫।প্রতিদিন প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ: ৬০ গ্রাম থেকে ১১০ গ্রাম।

৬।প্রতিদিন ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ: ৫০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার গুলো কি কি?

উত্তরঃডায়াবেটিস হলে খাওয়া বারণ এমন খাদ্যগুলো হলো চিনি, মধু, গুড়, মিষ্টি, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি পানীয়, মদ, দুধের সর, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি বিস্কুট, মিষ্টি দই, ঘি, ডালডা, চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, গলদা চিংড়ি, মগজ, ভাজা খাদ্য, পাকা কলা, খেজুর, কিশমিশ, আঙুর, আখের রস।

২।দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কি?

উত্তরঃ

১।আঁশযুক্ত গোটা শস্য খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে।

২। অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন।

৩। ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় পরিহার করুন।

৪।বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে পরিবেশিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জনীয়।

৩।ডায়াবেটিস হলে আনারস খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে আনারস ফলটিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে তার মানে এই নয়, ফলটিকে একেবারে বাদ দিতে হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয়ে থাকে, ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআইয়ের পরিমাণ বেশি এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

৪।তরমুজে কি সুগার বেশি থাকে?

উত্তরঃবেশিরভাগ তরমুজেও কম চিনি থাকে । ক্যান্টালুপ এবং হানিডিউ তরমুজগুলি বিশেষত মিষ্টি এবং সুস্বাদু, যদিও তাদের প্রতি 100 গ্রামে মাত্র 8 গ্রাম চিনি থাকে।

৫।ডায়াবেটিসে চিড়া খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ হা যাবে। যে যে শস্য—চাল, গম, চিড়া, রুটি, নুডলস, নোনতা বিস্কুট, ডাল, বাদাম, শিমের বিচি, উদ্ভিজ্জ তেল, আলু, গাজর, শালগম, শাক (সব রকমের), চর্বিহীন মাংস, মাছ, ফল, ননিতোলা দুধ, পনির, ছানা ও ডিম।

শেষকথা

প্রতিদিনের খাবার থেকে কতটুকু ক্যালরি আসবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালরি গ্রহণ যত বেশি হবে, ইনসুলিন বা ওষুধের পরিমাণ তত বেশি হবে। এ জন্য দেহের ওজন আদর্শ মাপে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাবার হতে হবে সুষম ও চাহিদা অনুযায়ী।

পোস্ট ট্যাগ-

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা,ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২২,ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল,ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ডা জাহাঙ্গীর কবির,দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়,ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না,ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দুধ,ডায়াবেটিস রোগীর সকালের খাবার।

আরও-

কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?

শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment