রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ সহ বিস্তারিত

Rate this post

রোজার নিয়ত আরবি -ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্য রয়েছে ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত।রোজা হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। প্রতি বছর ঘুরেই ১মাস প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজে এই একমাস রোজা পালন করার জন্য তার বান্দা-বান্দীদের নির্দেশ করেছেন করেছেন। তাই রোজার নিয়তের আরবি ও বাংলা উচ্চারণ জানা মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ পড়ার আগে যেমন নিয়ত করতে হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ঠিক তেমনি রোজা রাখার জন্য রোজার নিয়ত রয়েছে।

সকল মুসলমানের রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ জেনে রাখা উচিত। কেননা রোজা রাখার জন্য ইফতার ও সেহেরী যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি রোজার নিয়তও গুরুত্বপূর্ণ।তাই আজকের ব্লগে আমরা রোজার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণসহ আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

রোজার নিয়ত আরবি বাংলা উচ্চারণ

সাওম অর্থ রোজা। রোজার আভিধানিক ও অর্থ হলো বিরত থাকা। অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা কি রোজা বলে। রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এটি আরবি কিংবা বাংলায় কোনভাবেই আপনি করতে পারেন। রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ সহ দেখে নিন 👇

রোজার নিয়ত আরবি

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

রোজার নিয়ত বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

নফল রোজা রাখার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ সহ জানা থাকলে আপনি সহজেই রমজান মাসের ৩০ টি ফরজ রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে পারবেন। রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত করতে হয় সেহেরী খাওয়ার পরে। অবশ্যই কর্তা তার বান্দাদের মনের খবর সম্পর্কে জানেন যার কারণে যদি কখনো রেখে নিয়ত করতে ভুলে যান কিন্তু মনে মনে যদি নিয়ত থাকে তাহলে এই নিয়তি আসল। নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে সেহরি খাওয়ার আগেই রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে হবে। যদি কোনো কারণে ভুলে যান তাহলে দিনের যে কোন সময় রোজা রাখার পরেও নিয়ত করা যাবে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

নফল রোজা রাখার নিয়ত করার জন্য রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ করা জরুরী নয়, আপনি যেকোনো ভাষায়  মনের কথা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রকাশ করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।

রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা রাখার নিয়তে যারা সুবহে সাদিকের আগে সেহরি খায় অনেক সময় তাদের রোজা অনেক কারণেই ভঙ্গ হয়ে যায় কিংবা মাকরূহ হয়ে যায়। আমরা ইতোমধ্যেই রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ জানলাম এ পর্যায়ে আলোচনা করব রোজা ভঙ্গের কিছু কারণ সম্বন্ধে। রোজা ভঙ্গ হওয়ার মূল কারণগুলো হলো :

১)রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতারের আগে  কোনো খাবার খেলে।

২)ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু  পান করলে।

৩)শরীরের যেকোন স্থানে রক্ত গড়িয়ে পড়লে।

৪)বমি মুখে আসলে তা গিলে ফেলা ।

৫)রোজা রাখা অবস্থায় সহবাস করলে।

৬)মেয়েদের মাসিক হলে।

৭)প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধ বা অন্য কিছু প্রবেশ করালে।

এছাড়াও রোজা ভঙ্গের আরো অন্যান্য কারণ রয়েছে। তবে রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে অনেকের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ভুল করে খাবার খেয়ে ফেললে ভঙ্গ হয়ে যায় আদতে একটি ঠিক নয় বরং ভুল করে খাবার খেয়ে রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে আরো খাবার খেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।

রোজার ফজিলত

ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হল রোজা। আল্লাহ তায়ালার অশেষ পছন্দের একটি ইবাদত রোজা রাখা। রোজা রাখার জন্য অবশ্যই পরিষ্কার মনে রোজা রাখার নিয়ত করতে হবে। তবে জরুরি নয় রোজা রাখার আরবি ও বাংলা উচ্চারণ করেই করতে হবে।কেননা বান্দার মনের খবর আল্লাহর চেয়ে ভালো কেউ জানে না তাই মনের নিয়ত আল্লাহ বুঝতে পারবেন ইনশাল্লাহ। রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআন হাদিসে পরিষ্কারভাবে অনেক কিছুই বলার আছে।

আল্লাহ তাআলা স্বয়ং বলেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।-সূরা বাকারা (২) : ১৮৩

অন্য একটি আয়াতে আয়াতে বলেছেন –

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

(তরজমা) সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।- সূরা বাকারা (২) : ১৮৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله تعالى: الا الصوم فإنه لى وانا أجزى به يدع شهوته وطعامه من أجلى.

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন –

إذا رأيتم الهلال فصوموا وإذا رأيتموه فافطروا، فإن غم عليكم فصوموا ثلاثين،

وفي رواية : صوموا لرؤيته وأفطروا لرويته، فإن عم عليكم فاكملوا العدد.

যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০৮০ (১৭-১৮)

এছাড়াও রোজার ও গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন হাদিসে আরও অনেক কথাই উল্লেখ আছে। যেমন:

১)আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই রোজাদারের প্রতিদান দেবেন এবং বিনা হিসেবে দিবেন।

২)আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন রোজাদারকে  পানি পান করাবেন।

৩)জান্নাত লাভের পথ হলো রোজা।

৪)রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে।

৬)রোজা হচ্ছে জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী দূর্গ ও ঢাল।

৭)কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে রোজা।

৮)আল্লাহ তাআলা রোজাদার এর সকল গুনাহ মাফ করে দেয়।

৯)গুনাহের কাফফারা হলো রোজা।

১০)রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশেকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত।

১১)রোজাদারের দোয়া কবুল হয়।

১২)রোজদার পরকালের সিদ্দিকিন ও শহীদগণের সাথে দলভুক্ত থাকবে।

১৩)রোজা মানুষের হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেয়

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

রোজার রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ জানা যেমন তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ইফতারের দোয়া জেনে রাখা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দিনভর রোজা রেখে ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া পড়ায় অনেক বেশি ফজিলত।কাজেই রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ জেনে রাখার পাশাপাশি ইফতারের দোয়া ও বাংলা উচ্চারণসহ জেনে রাখুন 👇

আরবি উচ্চারণ-

بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

বাংলা উচ্চারণ-

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

বাংলা অর্থ-

হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি

প্রশ্ন উত্তর

সেহরির নিয়ত বাংলায় কিভাবে করব?

সেহরির নিয়ত এবং রোজা রাখার নিয়ত একই কথা।সেহরি খাওয়ার উদ্দেশ্যই হলো রোজা রাখা।তাই সেহরি খাওয়ার পরে রোজার রাখার জন্য নিয়ত করতে হয় ।

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

রোজার নিয়ত বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

নফল রোজার নিয়ত আরবিতে কিভাবে বলে?

নফল রোজা রাখার নিয়ত করার জন্য রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ করা জরুরী নয়, আপনি যেকোনো ভাষায় মনের কথা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রকাশ করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।

রোজা খোলার দোয়া কোনটি?

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

শেষ কথা –

রোজা রাখার নিয়ত আরবি এবং বাংলা উচ্চারণসহ তুলে ধরা হলো আজকের আর্টিকেলে।আশা করি রোজা রাখার নিয়ত আরবি ও বাংলা উচ্চারণ সহ সমন্ধিত আজকের ব্লগটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন।রোজা সম্পর্কিত আরো কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবীদের নাম জেনে নিন

মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম সমূহ  সম্পর্কে জেনে নিন

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণসহ

এশার নামাজ মোট কয় রাকাত ও কি কি? পড়ার নিয়ম এবং দোয়া

↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇

↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️IMO চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো: সানাউল বারী পেশায় একজন ব্লগার এবং ইউটিউব ও ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর।

Leave a Comment