আহসান মঞ্জিলের অনলাইন টিকিট করার নিয়ম –আহসান মঞ্জিল নামটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আজকে আপনাদের জানাবো আহসান মঞ্জিলের সময়সূচী, আহসান মঞ্জিল এর টিকিটের মূল্য, আহসান মঞ্জিল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন,আহসান মঞ্জিল অনলাইন টিকেট কাটার নিয়ম,আহসান মঞ্জিল টিকিট কাটার জন্য রেজিস্ট্রেশন ওলগ ইন করার নিয়ম,আহসান মঞ্জিল যেভাবে যাবেন ও আহসান মঞ্জিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস। ঢাকার পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় আহসান মঞ্জিলকে। নবাব পরিবারের বহুল স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস
“আহসান মঞ্জিল” বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও নবাবি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে টিকে থাকা এক সমৃদ্ধশালা। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ১৮৩০ সালে নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি কিনে নেন। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি সেখানে প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিলো প্রাসাদটি নির্মাণ করতে। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’।
একসময় ঢাকা শহরের সবচে উঁচু গম্বুজ ছিলো আহসান মঞ্জিলের প্রাসাদের ছাদের ওপরের সুন্দর গম্বুজটি। দোতলা এ ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে খাবার ঘর, লাইব্রেরি, জলসাঘর, দরবার হল এবং বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা। আর প্রাসাদের দোতলায় রয়েছে অথিতিদের থাকার কক্ষ, বৈঠকখানা, নাচঘর, গ্রন্থাগার এবং আরো কিছু বসবাসের কক্ষ। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে বারান্দা রয়েছে। দক্ষিণ দিকে দোতলার বারান্দা থেকে একটি খোলা সিঁড়ি সামনের বাগান পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রসাদের ঠিক সামনে রয়েছে চমৎকার ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ।
আহসান মঞ্জিলকে ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হিসাবে মনে করা হয়। আর তৎকালীন নবাবদের হাতে এই ভবনেই প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে। আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করে, লর্ড কার্জন ঢাকায় আসলে এই ভবনেই থাকতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত এই প্রাসাদটি বাংলার একটি প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নবাব পরিবারের উত্তরসূরিরা আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। অনেকবার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, পরিমার্জনের পর ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহশালা। মোট ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন আহসান মঞ্জিলের ২৩টি কক্ষে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা আছে। নয়টি কক্ষ সেই নবাবী আমলের মতো করেই সাজানো রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ আপনাকে সেই নবাবী আমলের ইতিহাসের কাছে নিয়ে যাবে।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আছে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, নওয়াবদের পরিচিতি ও বংশতালিকা। নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, বৃহদাকার লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারী, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল ও তরবারি। নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা, ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্থানী রুম, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম ও নাচঘর। আরও আছে সমসাময়িককালের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতিকৃতি ও নওয়াবদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের নিদর্শন।
আহসান মঞ্জিলের অনলাইন টিকেট কাটার নিয়ম
ঘরে বসে খুব সহজে অনলাইন টিকিট কেটে ঘুরে আসতে পারেন আহসান মঞ্জিল।আজ আপনাদের জানাবো কিভাবে অনলাইন টিকিট করতে হয়। নিচে ধাপগুলি দেওয়া হলো –
১। অনলাইনে টিকিট কাটতে প্রথমে www.ahsanmanzilticket.gov.bd প্রবেশ করুন।
২। তারপর ‘Buy Ticket’ ডায়গল বক্সে আপনার যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেজেস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। রেজিস্ট্রেশন একবারই করতে হবে। পরে ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে বার বার ‘Login’ করে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
৩।‘Purchase eTicket’ অপশনে ক্লিক করুন। জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে ‘Add’ বাটনে ক্লিক করুন।
৪।একের অধিক টিকিট কিনতে ‘Add More Ticket’ বাটনে ক্লিক করুন।
৫।এবার ‘Make Payment’ বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
৬।‘Print Ticket’ অপশনে ক্লিক করে আপনার টিকিট প্রিন্ট করতে পারেন।
৭।সবশেষে ‘Ticket checking’ জাদুঘরে প্রবেশের সময় অনলাইন টিকিটের প্রিন্ট কপি অথবা মোবাইলে ডাউনলোড কপি অথবা টিকিট নম্বর প্রদর্শন করে আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করুন।
আহসান মঞ্জিল টিকিট কাটার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
আহসান মঞ্জিলের অনলাইন টিকিট করতে হলে ওয়েবসাইট এ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন তা নিচে জানালাম।
আপনি আহসান মঞ্জিলে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, যেকোনো একটি পাসওয়ার্ড, আপনার ঠিকানা, শহর, রাস্তার নাম্বার, পোস্টাল কোড এবং দেশের নাম সিলেক্ট করতে হবে তারপর রেজিস্টার এ ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
লগ ইন করার নিয়ম
আহসান মঞ্জিল এর টিকেট কেনার জন্য লগইন করাটা খুব সহজ আপনি যদি আগেই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট করে থাকেন তাহলে কেবল ইমেইল এড্রেস এবং আপনার দেয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে নিন আর যদি রেজিস্ট্রেশন না করে থাকেন তাহলে শুরুতে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে তারপরে লগইন করুন।
আহসান মঞ্জিলের সময়সূচী
১।শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
২।তাছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৭.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে ।
আহসান মঞ্জিল প্রবেশের টিকেট মূল্য
১।সাধারণ দর্শকদের জন্য ৪০ টাকা প্রতিজন টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়।
২।১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ২০ টাকা।
৩। বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা।
৪।প্রতিবন্ধীদের আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়ে না।
আহসান মঞ্জিল এর সাপ্তাহিক বন্ধের দিন
প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
আহসান মঞ্জিল যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে সিএনজি তে করে সরাসরি এখানে আসতে পারবেন, তাছাড়া লোকাল বাসে করে আসতে চাইলে সদরঘাট মুখী যেকোন বাসে উঠে সদরঘাট এসে সেখান থেকে ৩০-৪০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে একদম এই ভবনের গেইটে চলে আসতে পারবেন ।
গুলিস্তান থেকে ও আপনি চাইলে রিক্সায় আসতে পারবেন ।
আহসান মঞ্জিলের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো
আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখার পাশাপাশি আপনি চাইলে কাছাকাছি অবস্থিত পুরান ঢাকার আরও কিছু বিখ্যাত জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো লালবাগ কেল্লা, তারা মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, হোসেনি দালান, বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক) ও সদরঘাট লঞ্চঘাট। আর খাবারের জন্যে পুরান ঢাকার বিখ্যাত খাবার হোটেল গুলোতো আছেই।
আহসান মঞ্জিল নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃআহসান মঞ্জিল কি বারে বন্ধ থাকে?
উত্তরঃ বৃহস্পতিবার।
প্রশ্নঃআহসান মঞ্জিল এর টিকেটের দাম কত?
উত্তরঃ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা আর ১২ বছর কম বয়সীদের জন্য ২০ টাকা।
প্রশ্নঃআহসান মঞ্জিল সদরঘাট থেকে কিভাবে যাবো?
উত্তরঃ সদরঘাট থেকে ৩০-৪০ টাকা দিয়ে রিক্সায় করে সহজের যাওয়া যায়
প্রশ্নঃআজ কি আহসান মঞ্জিল খোলা?
উত্তরঃ সরকারি ছুটি এবং বৃহস্পতিবার ছাড়া সারাবছর খোলা থাকে।
শেষ কথা
আহসান মঞ্জিল একটি ঐতিহাসিক স্থান এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ঘুরার জন্য আসে। তাই আপনি যদি এই ঐতিহাসিক স্থানটি দর্শন করতে চান তবে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।
এখান থেকে আপনি আহসান মঞ্জিলের সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। তাই আপনেও খুব সহজে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক স্থানটি।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিকেট করার নিয়ম পিজি হাসপাতালে অনলাইন টিকিট বুকিং করার নিয়ম ইউনিক বাস অনলাইন টিকেট কাটার নিয়ম বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন টিকিট কাটার নিয়ম জাতীয় জাদুঘর অনলাইন টিকেট করার নিয়ম
↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇
- ইংলিশের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে –এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন
↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇
➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।
➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।