বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া এখন আর্থিক লেনদেনের উপর ও প্রভাব ফেলেছে।তাইতো এখন আর্থিক লেনদেনের জন্য ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহার ও বেশি হয়েছে। আর্থিক লেনদেনকে সহজ ও ঝামেলা মুক্ত করার জন্য আমার অনেকেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকি। ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে যাদের জানার প্রয়োজন আজকের পোস্টটি তাদের জন্য।
আজ আপনারা জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড কি, ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ,ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবেন, ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, কোন কোন ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে সম্পর্কে বিস্তারিত।
ক্রেডিট কার্ড কি?
ক্রেডিট কার্ড হলো মূলত একটি চিপ-ভিত্তিক প্লাস্টিকের কার্ড (সাধারণত) যাতে ক্রেডিট কার্ডধারীর নাম, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, মেয়াদ শেষ এর তারিখ, সিভিভি, ক্রেডিট কার্ডধারীর স্বাক্ষর এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের বিবরণ, ইত্যাদি তথ্য দেওয়া থাকে।
ক্রেডিট কার্ড মূলত কার্ডধারীর অর্থ ব্যয়ের সুবিধা নিশ্চিত করে। ব্যবহারকারী যখন কোনো অর্থ প্রদানের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তখন উক্ত অর্থ সেভিংস/কারেন্ট একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়না। বরং খরচ করা অর্থ ব্যাংক বা কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে বাকিতে লেনদেনের সুবিধা দিয়ে থাকে।
অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড এর কাজই হচ্ছে ব্যবহারকারীদের বাকিতে লেনদেনের সুবিধা প্রদান করা। প্রতিটি ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে দেওয়া ক্রেডিট লিমিট থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট অংকের লেনদেনের পর আর ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ খরচ করা যায়না। ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করার পর আবার এটি ব্যবহার করা যায়। সাধারণত এক মাসের ক্রেডিট কার্ডের বিল পরের মাসের কোনো এক সময়ে প্রদান করতে হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড কি?
আপনার ব্যাংক থেকে ইস্যু করা সিঙ্গেল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড দেশের মধ্যে কাজ করলেও দেশের বাইরে কাজ করবেনা। এজন্য আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এর প্রয়োজন পড়ে। এগুলো সাধারণত ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড হয়ে থাকে। এতে কারেন্সি হিসেবে বাংলাদেশি টাকা এবং মার্কিন ডলার থাকে (মোট দুটি কারেন্সি বা মুদ্রা)। তবে ব্যাংকভেদে আপনি হয়তো ইউরো বা অন্যান্য মুদ্রাও কারেন্সি হিসেবে নিতে পারেন।
আপনি সাধারণ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা কার্ড সেবাদাতা প্রতিনিধিকে জানালেই তারা আন্তর্জাতিক কার্ড এর আবেদন পত্র দিবেন। তবে বিদেশী মুদ্রা যেমন ডলার খরচ করতে চাইলে আগে আপনার পাসপোর্টের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার এন্ডোর্স করাতে হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই গ্রহণযোগ্য। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড আপনার দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে করা খরচের উপায়কে আরো সহজ করে দেয়।
ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার
আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড করতে চান তবে আপনার জন্য জানা প্রয়োজন ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি কোন প্রকার ক্রেডিট কার্ড করতে চাচ্ছে। বা আপনার প্রয়োজনে সুবিধার্থে ব্যাংক থেকে কোন ক্রেডিট কার্ডটি আপনি গ্রহণ করবেন।
নিচে বিভিন্ন প্রকার ক্রেডিট কার্ডের নাম দেওয়া হল।
যেমন-
১।লো ইনকাম আর্নরের ক্রেডিট কার্ড
২। ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড
৩।শপিং ক্রেডিট কার্ড
৪।এয়ারলাইন ক্রেডিট কার্ড
৫।রিওয়ার্ড ক্রেডিট কার্ড
৬।ক্যাশব্যাক ক্রেডিট কার্ড
৭।ফুয়েল ক্রেডিট কার্ড
৮।এন্টারটেইনমেন্ট ক্রেডিট কার্ড
৯।সেক্যুটেড কার্ড
আপনারা উপরের অংশে যে, ক্রেডিট কার্ড এর নাম গুলো দেখতে পারছেন। এই হল ক্রেডিট কার্ড এর প্রকাশ সমূহ।
আপনি যদি এই ক্রেডিট কার্ডগুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডটি আপনি গ্রহণ করবেন সেই ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপনার কোন ধরনের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সে অনুসারে ক্রেডিট কার্ডটি নির্ধারণ করবে।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সমূহ
ক্রেডিট কার্ড এর অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলোঃ
১।তৎক্ষণাৎ দামি কিছু কেনার ক্ষেত্রে টাকার জন্য কারো দ্বারস্থ হতে হয়না।
২।ডেবিট কার্ড বা চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অধিক নিরাপদ।
৩।কারণ পেমেন্ট গেটওয়ে বা মার্চেন্টের সেবায় কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে ক্রেডিট কার্ডে সহজেই রিফান্ড রিকোয়েস্ট করা যায়।
৪।ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে অনেক কম সুদেই, অনেকসময় শূন্য শতাংশ সুদেও ঋণ পাওয়া যায়।
৫।ক্রেডিট কার্ড এ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অফার এর মাধ্যমে ব্যয় থেকেই আয় করা সম্ভব।
৬।কার্ড ব্যবহারের ঝণের বোঝা বেশি মনে হলে থাকছে কার্ড এর ধরন পরিবর্তনের সুযোগ।
৭।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা ও সময়মত বিল প্রদান করলে ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের ব্যাংক থেকে ঝণ পাওয়ার যোগ্যতার সূচক সংখ্যা বা CIB রেকর্ড বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
৮।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে অনেক ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্টও পাওয়া যায়।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা সমূহ
অনেক সুবিধার মাঝেও ক্রেডিট কার্ড এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড এর কিছু সম্ভাব্য অসুবিধা হলো-
১।কেনাকাটার পথ সুগম হওয়ায় অহেতুক অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা বাড়তে পারে।
২।যার ফলাফল হতে পারে অযথা আর্থিক অস্থিতিশীলতা।
৩।ক্রেডিট কার্ড এ বিল যথা সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে বড় অংকের সুদ গুনতে হতে পারে।
৪।ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন বা না করুন, ক্রেডিট কার্ড এর জন্য প্রযোজ্য বার্ষিক ফি প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
ক্রেডিট কার্ড কি হারাম?
চুক্তিতে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ জায়েজ নয়। কারণ, ওই শর্ত মেনে দস্তখত করার অর্থ একটি সুদি চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। চুক্তিটিই হারাম ও সুদি চুক্তি। কোনো লেনদেন হালাল-হারাম হওয়ার মূল বুনিয়াদ হলো মূল চুক্তিনামা, যা উভয়পক্ষের মাঝে আলোচনা হয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ক্রেডিট কার্ডধারী পরে নিজেকে সুদ থেকে বাঁচালেও সে এমন এক চুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছে, যা সুদি লেনদেন।
তাছাড়া এটিও একটি বাস্তবতা যে, বর্তমানে ৯৫ শতাংশ বা তারও বেশি ক্রেডিট কার্ডধারী সুদি কারবারে লিপ্ত। তাই এ চুক্তিতে জড়ানো যাবে না। যদিও উক্ত সুদি শর্ত নিজের ওপর বাস্তবায়নের নিয়ত না থাকে। যদি বাস্তবায়ন করা হয় তবে তো দ্বিগুণ গোনাহ। আর বাস্তবায়ন না হলেও সুদি চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার গোনাহ তো আছেই। বর্তমান ফকিহদের অধিকাংশের রায় এটিই। প্রায় সবক’টি আন্তর্জাতিক ফিকহ ফোরামের সিদ্ধান্তও অনুরূপ।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
কারা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন – এট ব্যাপারটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ এর হিসেবে অনেকটাই সাধারণ।
চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী বা অন্য পেশাজীবী, যাদের আয় ও বৈধ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে, শুধুমাত্র তারাই ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যোগ্যতা হলো-
১।জাতীয় পরিচয় পত্র
২।টিআইএন সার্টিফিকেট
৩।চাকরিজীবির ক্ষেত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার বা স্যালারি সার্টিফিকেট এবং ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৪।ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, Memorandum of Association ৩ মাসের ব্যাংক ট্রানজেকশন স্টেটমেন্ট।
এছাড়া কোনো ব্যাংকে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট থাকলে তারা যদি রাজী হয় তাহলে আপনি সেই ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনার ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিট লিমিট কত হবে তা আপনার তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যাংক বা কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নেবে।
ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাওয়া যায়
ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে প্রথমে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতায় উল্লেখ্য প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করুন। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা থাকলে খুব সহজেই ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ব্যাংক বা আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (যেমন লংকাবাংলা ফাইন্যান্স) থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে তাদের ক্রেডিট কার্ড বিভাগের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর আপনার আয়ের উৎস, মাসিক আয়, ইত্যাদি তথ্য জমা দেওয়ার পর ক্রেডিট কার্ড বিভাগ থেকে আপনাকে পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
কোন কোন ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে
বাংলাদেশের প্রায় সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকই বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে থাকে। ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যাবে এমন কিছু উল্লেখ্যযোগ্য ব্যাংক হলোঃ
১।ডাচ বাংলা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
ডাচ বাংলা ব্যাংক ২০০৮ সালে থেকে ভিসা ইএমভি ক্রেডিট কার্ড ও ২০১০ সাল থেকে মাস্টারকার্ড ইএমভি ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রদত্ত ক্রেডিট কার্ডসমুহ হলোঃ
*মাস্টারকার্ড ক্ল্যাসিক
* ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড
*মাস্টারকার্ড ক্ল্যাসিক লোকাল ক্রেডিট কার্ড
*মাস্টারকার্ড গোল্ড
* ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড
*মাস্টারকার্ড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড
*ভিসা ক্ল্যাসিক লোকাল ক্রেডিট কার্ড
*ভিসা গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড
*ভিসা প্ল্যাটিনাম ক্রেডিট কার্ড
উল্লেখিত ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে ডিবিবিএল।
২।সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
সিটি ব্যাংক একাধিক ধরনের ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে। সিটি ব্যাংক প্রদত্ত উল্লেখযোগ্য ক্রেডিট কার্ডগুলো হলোঃ
*অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম ক্রেডিট কার্ড
*অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড ক্রেডিট কার্ড
*সিটি আলো আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড
*ভিসা ক্রেডিট কার্ড
*অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ব্লু ক্রেডিট কার্ড, ইত্যাদি।
উল্লেখিত ক্রেডিট কার্ডসমুহ ছাড়াও সিটি ব্যাংক আরো অনেক ধরনের ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে থাকে।
৩।ব্র্যাক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করছে। তাদের ক্রেডিট কার্ডগুলো হচ্ছেঃ
*ইনফিনিট
*সিগনেচার
*প্ল্যাটিনাম
*গোল্ড
*ক্ল্যাসিক
বিস্তারিত জানতে ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
৪।স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক একাধিক রকমের ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে আসছে অনেকদিন ধরেই। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কতৃক প্রদত্ত উল্লেখযোগ্য ক্রেডিট কার্ডসমুহ হলোঃ
*ভিসা সিগনেচার ক্রেডিট কার্ড
*প্ল্যাটিনাম ভিসা/মাস্টার কার্ড
*সুপার ভ্যালু টাইটেনিয়াম কার্ড
৫।ইস্টার্ন ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
ইস্টার্ন ব্যাংকও একাধিক ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান করে থাকে। ইস্টার্ন ব্যাংক প্রদত্ত উল্লেখযোগ্য ক্রেডিট কার্ডসমুহ হলোঃ
*ভিসা ক্লাসিক ক্রেডিট কার্ড
*ভিসা গোল্ড ক্রেডিট কার্ড
*মাস্টার কার্ড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড
*মাস্টার কার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ড
৬।প্রিমিয়ার ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড
প্রিমিয়ার ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে পাঁচ ধরনের। প্রিমিয়াম ব্যাংক প্রদত্ত ক্রেডিট কার্ডসমুহ হলো-
*গোল্ড কার্ড
*ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড
*প্ল্যাটিনাম কার্ড
*ক্ল্যাসিক কার্ড
*ডুয়াল কারেন্সি কার্ড
প্রিমিয়াম ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন প্রিমিয়ার ব্যাংক এর ওয়েবসাইট থেকে।
ক্রেডিট কার্ড করতে কত খরচ হয়?
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকই বিনামূল্যে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ড এর বার্ষিক চার্জ ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে আপনি কিছু চার্জ মওকুফ করাতে পারেন। আপনি ক্রেডিট কার্ড যে ব্যাংক থেকে নিতে চান, সে ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে উক্ত ক্রেডিট কার্ড এর খরচ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম
সঠিক নিয়ম মেনে যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয় তাহলে এর অসুবিধা গুলো দূর করা সম্ভব। আজ আপনাদের জানাবো কিভাবে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন।
নিয়ম সমূহ –
১।দেরি ফি এবং আপনার ক্রেডিট স্কোরের ক্ষতি এড়াতে সর্বদা আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধ করুন।
২।শুধুমাত্র আপনার উপলব্ধ ক্রেডিট এর একটি ছোট অংশ ব্যবহার করে ক্রেডিট ব্যবহার কম রাখুন।
৩।প্রতারণামূলক চার্জের জন্য নিয়মিত আপনার ক্রেডিট কার্ড বিবৃতি নিরীক্ষণ করুন।
৪।একসাথে অনেক ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করবেন না, কারণ এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
৫।আপনার কার্ডের সাথে সম্পর্কিত সুদের হার এবং ফি সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং আবেদন করার আগে অন্যান্য কার্ডের সাথে তুলনা করুন।
৬।আপনার ক্রেডিট কার্ডটি শুধুমাত্র চার্জ করে দায়িত্বের সাথে ব্যবহার করুন যা আপনি সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে পারেন।
৭।নগদ অগ্রিম জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না ।
৮।সুদের চার্জ এড়াতে প্রতি মাসে পুরো ব্যালেন্স পরিশোধ করার চেষ্টা করুন।
৯।আপনার কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একটি প্রতিস্থাপনের অনুরোধ নিশ্চিত করুন।
১০।আপনার যদি অর্থপ্রদান করতে অসুবিধা হয়, তাহলে একটি কষ্ট প্রোগ্রাম বা অর্থপ্রদানের পরিকল্পনার মতো বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করতে আপনার ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।
১১।আপনি যদি বিদেশে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন তবে মুদ্রা রূপান্তর ফি সম্পর্কে সচেতন হন।
১২।নগদ অগ্রিমের জন্য আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, কারণ তাদের সাধারণত উচ্চ সুদের হার এবং ফি থাকে।
১৩।আপনার ক্রেডিট কার্ড দ্বারা প্রদত্ত পুরষ্কার এবং সুবিধাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং আপনার সুবিধার জন্য সেগুলি ব্যবহার করুন৷
১৪।আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি এবং বিবৃতি পেয়েছেন তা নিশ্চিত করতে আপনার ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারীর সাথে আপনার যোগাযোগের তথ্য আপডেট রাখুন।
১৫।আপনার ক্রেডিট কার্ডটি অন্য কাউকে ধার দেবেন না কারণ এটিতে করা যেকোনো চার্জের জন্য আপনাকে দায়ী করা হবে।
১৬।আপনার ক্রেডিট কার্ড চুক্তির নিয়ম ও শর্তাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকুন, বার্ষিক ফি বা সুদের হারে পরিবর্তন সহ।
১৭।ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার আগে যেকোনো অতিরিক্ত ফি যেমন ব্যালেন্স ট্রান্সফার ফি, বিদেশী লেনদেন ফি এবং বার্ষিক ফি সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
১৮।আপনার ব্যালেন্স এবং অর্থপ্রদানের শীর্ষে থাকতে সাহায্য করার জন্য আপনার ক্রেডিট কার্ডের জন্য পাঠ্য বা ইমেল সতর্কতা সেট আপ করার কথা বিবেচনা করুন৷
১৯।কার্ডের সাথে আপনার কোনো সমস্যা থাকলে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির গ্রাহক পরিষেবা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি নীতি সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য
ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে অনেকগুলো পার্থক্য রয়েছে। নিচে পার্থক্য গুলো দেওয়া হলো –
১।একটি ডেবিট কার্ডের সাহায্যে আপনি কেবল আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করেন, তবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে ধার করেন।
২।ডেবিট কার্ড দিয়ে বেশি টাকা লেনদেন করার জন্য আপনাকে কোনো সুদ দিতে হয় না। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বেশি টাকা লেনদেন করার জন্য আপনাকে চার্জ দিতে হয়।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
৩।ডেবিট কার্ড দিয়ে আপনি আপনার ব্যাংকে যতোটাকা রাখবেন সব তুলতে পারবেন। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে ব্যাংক আপনাকে যা লিমিট দিবে আপনি ওটাই ব্যবহার করতে পারবেন।
৪।ক্রেডিট কার্ডগুলি সারা বিশ্ব জুড়ে সমানভাবে ব্যবহৃত হয়, তাই ভ্রমণের সময় এগুলি বেশি কার্যকর হয়, তবে ডেবিট কার্ডগুলি কেবল আপনার দেশে গ্রহণযোগ্য।
৫।ডেবিট কার্ড প্রদান করার চার্জ খুব কম হয়। ক্রেডিট কার্ডের তুলনায়।
৬।ডেবিট কার্ড আর ক্রেডিট কার্ড একই কোম্পনি তৈরি করে ভিসা , মাস্টার , আরও অনেক কোম্পনি আছে যারা ক্রেডিট কার্ড আর ডেবিট কার্ড তৈরি করে।
ক্রেডিট কার্ডের লিমিট কত?
ক্রেডিট লিমিট বলতে বোঝায় আপনি প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে পরিমাণ খরচ করতে পারবেন সেটি। আপনার বেতন যদি ২০ হাজার টাকা হয়ে থাকে তাহলে আপনি এর ৪ গুন অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকা ক্রেডিট লিমিটের ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন আপনার ব্যাংক থেকে। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে নিয়মিত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা নিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১।ক্রেডিট কার্ড কি কি কাজে লাগে?
উত্তরঃক্রেডিট কার্ড হল একটি বিশেষ ধরনের পরিশোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড, যা ওই পরিশোধ ব্যবস্থার ব্যবহারকারীদেরকে ইস্যু করা হয়। এই কার্ডের বাহক পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারেন এবং মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। সাধারণত স্থানীয় ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন ভোক্তাদের কাছে এই কার্ডগুলি ইস্যু করে থাকে।
২।ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা কি কি?
উত্তরঃক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, আপনি সাধারণত যা করতে পারেন তার চেয়ে বেশি ক্রয় করতে পারেন। এটি একটি নির্দিষ্ট আছেক্রেডিট সীমা যা পর্যন্ত আপনি অর্থ ব্যয় করতে পারেন। এটি আপনাকে ইলেকট্রনিক্স, টু-হুইলারের মতো বড় কেনাকাটা করার ক্ষমতা দেয়স্বাস্থ্য বীমা, ছুটির বুকিং, ইত্যাদি এবং নগদ কম পড়ার বিষয়ে চিন্তা করবেন না।
৩।ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃএকটি ডেবিট কার্ডের সাহায্যে আপনি কেবল আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করেন, তবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে ধার করেন। ডেবিট কার্ড দিয়ে বেশি টাকা লেনদেন করার জন্য আপনাকে কোনো সুদ দিতে হয় না। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বেশি টাকা লেনদেন করার জন্য আপনাকে চার্জ দিতে হয়।
৪।ক্রেডিট কার্ড ভালো নাকি খারাপ?
উত্তরঃক্রেডিট কার্ড সাধারণত নতুন কার্ডধারীর জন্য এককালীন সাইনিং বোনাস, কেনাকাটার জন্য ক্যাশ ব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট এবং ফ্রিকোয়েন্ট-ফ্লায়ার মাইলস সহ সব ধরনের সুবিধা এবং সুবিধা অফার করে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর জন্য নিরাপত্তার একটি স্তর প্রদান করে যা একটি ডেবিট কার্ড এবং নগদ পারে না জালিয়াতি সুরক্ষা।
৫।আধুনিক বিশ্বে এটিএম কার্ড কে কি বলা হয়?
উত্তরঃএটিএম কার্ড বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন: ব্যাংক কার্ড, ম্যাক (মানি অ্যাক্সেস কার্ড), ক্লায়েন্ট কার্ড, কী কার্ড বা ক্যাশ কার্ড ইত্যাদি। অন্যান্য পেমেন্ট কার্ড, যেমন: ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এটিএম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
৬।ডেবিট এর পরিবর্তে ক্রেডিট ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃক্রেডিট কার্ড বহন করা এবং ব্যবহার করা নিরাপদ যদি চোররা আপনার ক্রেডিট কার্ডের সাথে খরচের স্পীডে চলে যায়, তবে, আপনি সাধারণত প্রতারণামূলক কেনাকাটার জন্য দায়ী হবেন না। ফলাফলের গন্ডগোল সারতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, কিন্তু আপনি আপনার কোনো অর্থ হারাবেন না। ডেবিট কার্ডগুলিও ঝুঁকিপূর্ণ।
৭।ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর কি?
উত্তরঃএকটি ক্রেডিট কার্ড পিন, বা ব্যক্তিগত সনাক্তকরণ নম্বর, সাধারণত একটি চার-সংখ্যার কোড যা আপনি একটি ক্রেডিট কার্ডের মালিক তা যাচাই করতে ব্যবহার করেন । একটি স্বাক্ষরের মতো, এটি আপনার পরিচয় যাচাই করতে ব্যবহৃত হয় এবং আপনাকে জালিয়াতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
৮।ক্রেডিট কার্ড কে আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ1950 সালে আবিষ্কৃত, ডিনারস ক্লাব কার্ডটি প্রথম আধুনিক ক্রেডিট কার্ড হিসাবে পরিচিত। ধারণাটি ফ্রাঙ্ক ম্যাকনামারার কাছ থেকে এসেছে, একজন ব্যবসায়ী যিনি নিউ ইয়র্কে ডিনারে যাওয়ার সময় তার মানিব্যাগটি ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার রাল্ফ স্নাইডার শীঘ্রই নগদ অর্থ বহন না করে অর্থ প্রদানের উপায় হিসাবে ডিনারস ক্লাব কার্ড উদ্ভাবন করবেন।
শেষকথা-
আশা করি আজকের পোস্টটি থেকে আপনি ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছে। ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাংক কার্ড। যা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রদান করে থাকে। ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার অর্থনৈতিক লেনদেন আরো সহজ হয়ে যাবে।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নাম্বার জেনে নিন-২০২৪ পূবালী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত
↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇
- ইংলিশের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে –এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন
↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇
➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।
➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।
➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।