হার্টের রোগীর খাবার তালিকা – হার্টের রোগের কারণ- যে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিবেন

Rate this post

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা – হার্টের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে শরীরের সুস্থতা। নিঃশব্দ ঘাতক হার্ট অ্যাটাক আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। হার্ট অ্যাটাকে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। হার্ট বা হৃদয় আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তা সত্ত্বেও আমরা হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীন। কিছুটা জেনে-বুঝে আবার কখনও অজান্তেই আমরা হৃদয়কে গুরুত্ব দিই না। হার্টের স্বাস্থ্য এড়িয়ে গেলে তা আমাদের ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

খারাপ জীবনযাত্রা এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকায় হার্ট কমজোর হতে শুরু করে। যখন হৃৎপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ—এগুলো মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ। এছাড়া অনিয়মিত শরীরচর্চা, দাঁতের যত্ন না নেওয়া, সাত ঘণ্টার কম ঘুমানো, লবণ বেশি খাওয়াও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আজকে আপনাদের জানাবো হার্টের রোগ কি,হার্টের রোগের কারণ, হার্টের রোগের উপসর্গ, হার্টের রোগ প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে, হার্টেররোগীর খাবার তালিকা, হার্টেররোগীরা যে যে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিবেন সম্পর্কে বিস্তারিত।

হার্টের রোগ কি

হৃদপিণ্ড অকার্যকর বা হার্ট ফেইলিওর বেশ জটিল একটি সমস্যা। হার্ট যখন তার কাজ ঠিকঠাকমতো করতে পারে না, তখন হার্ট ফেইলিওর হয়। হার্টে ফেল করলে হৃৎপিন্ড সংকোচনের মাধ্যমে রক্ত বের করতে পারে না ফলে ফুসফুস, পা এবং পেটে পানি জমে যায়। হার্ট ফেইলুর হঠাৎ করে হতে পারে আবার ধীরে ধীরে হতে পারে।

হৃৎপিন্ড প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার সংকোচন-প্রসারনের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত ও খাদ্যকণা পৌঁছে দেয়। একই সঙ্গে দেহের দুষিত রক্তকে বিশুদ্ধ করণের জণ্য ফুফুসে সরবরাহ করে। দেহের প্রতিটি আঙ্গের বেঁচে থাকার জন্য হৃৎপিন্ডকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হয়। নিজের প্রয়োজনীয় রসদ হৃৎপিন্ড নিজস্ব তিনটি করোনারি আর্টারির মাধ্যমে নিয়ে থাকে। হৃৎপিন্ড তার কাজ ঠিকমতো করতে না পারাকেই হার্ট ফেইলুর বলা হয় যা সহজভাবে হার্ট ফেল নামে পরিচিত।

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার- উপকারিতা- ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?

হার্ট ফেইলুর বা হৃৎপিন্ডের ব্যথ্যতা বা কর্মহীনতার জন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। অনেকে ভুল করে হার্ট অ্যটাক এবং হার্টফেইলকে একই রোগ ভেবে থাকনে। হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলর আলাদা সমস্যা, যদিও একটির কারণে অন্যটি হতে পারে। আবার দুটি এক সঙ্গেও হতে পারে।

হার্টের রোগের কারণ

হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন, আনস্টেবল এনজাইনা), অ্যানিমিয়া (রক্তমূন্যতা), হার্ট ভাইরাস সংক্রামণ, হাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, পেরিকার্ডিয়ামের রোগ সিটেমিক রোগ ইত্যাদি।

যেসব কারণে হার্টের সমস্যা থাকাকালে হার্ট ফেইলুর চরমপর্যায়ে যেতে পারে

১. মায়োকার্ডিয়াল ইসকোমিয়া/ইনফার্কশন

২. সংক্রমন

৩. হৃৎপিন্ডের ছন্দহীনত যেমন atrial Flabrillation

৪. ডাবেটিস

৫. হার্ট ফেলের অপর্যাপ্ত চিকিৎসা

৬. শরীরে পানি ধরে রাখার মতো অষুধ, যেমন -ব্যাধানাশক, স্টেরয়েড।

৭. গর্ভাবস্থা, রক্তশূন্যতা ও থাইরয়েডের রোগ

৮. শরীরে অতিরিক্ত পানি প্রয়োগ

হার্টের রোগের উপসর্গ

১. শ্বাসকষ্ট

২. শরীরে অতিরিক্ত পানি বা ইডেমা

৩. কাশি

৪. দুর্বল লাগা

৫. রাতে অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া

৬. ক্ষুধা মন্দা, বমি ভাব

৭. বুক ব্যাথা

৮. জটিলতা নিয়ে উপস্থিত, যেমন-কিডনি বিকল ইলেকট্রলাইটের তারতম্য, লিভারের সমস্যা, স্ট্রোক, হৃৎপিন্ডের ছন্দহীনতা।

হার্টের রোগ প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে

১. ধুমপান/তামাক/জর্দা/নস্যি বর্জন করতে হবে

২. কাঁচা/ভাজা সকল প্রকার আলগা যাথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

৩. উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থাকলে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

৪. কায়িক শ্রম

৫. উত্তেজন পরিহার

৬. যে কোন সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হবে জরুরীভাবে

৭. রক্তশূন্যতা পূরণ করতে হবে

৮. ওজন আদর্শ মাত্রায় রাখতে হবে

৯. সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে

১০. পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে

১১. আদর্শ জীবনযাপন করতে হবে

১০. পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে

১১. আদর্শ জীবনযাপন করতে হবে

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

পুষ্টিবিদদের মতে, আপনাকে হার্টের সমস্যা দূর করতে গেলে কয়েকটি খাবার খেতে হবে। হার্টের সমস্যায় এমন খাওয়ার খেতে হবে যাতে ফাইবার থাকবে বেশি পরিমাণে। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকবে। শুধু খাওয়া নয়, নজর দিতে হবে শরীরচর্চাতেও। জেনে নিন সেই সমস্ত খাদ্য তালিকা যা হার্টকে সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে-

১।​আপেল

প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। কারণ আপেল হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করে। আপেলে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, থিয়ামিন, নিয়াসিন, কোলেন ইত্যাদি। এছাড়াও ফাইবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তাই হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে এই খাবার।

২।​পেয়ারা

পেয়ারাতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি, বি৬। এছাড়া ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর থাকে এই খাবার। তাই প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ এই সব গুণের কারণে পেয়ারা হৃদরোগ প্রতিহত করে। তাই এই ফল খান।

৩।​কলা

কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, বি৬ ও ফাইবার। এতে থাকা পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে প্রেশার। এছাড়া দেখা গিয়েছে যে কলাতে থাকা ফাইবার শরীর থেকে কোলেস্টেরল বের করে দিতে পারে। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই দরকার। অন্যথায় সমস্যা বাড়ে।

৪।ছোলা

ছোলা কার্ডিওভাসকুলার পুষ্টিগুণসম্পন্ন। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পটাসিয়াম রয়েছে। শুধু তাই নয় ছোলা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।

৫।কফি

এই তিক্ত পানীয়টি আমাদের হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কফি করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলিওর এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৬।ডুমুর

ডুমুর হার্ট সুরক্ষিত করার জন্য পুষ্টির অন্যতম সেরা উৎস। এই ফলটি ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারযুক্ত যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৭।আদা

গন্ধযুক্ত এই মশলাটি নিয়মিত খেলে রক্তচাপ এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৮।জাম্বুরা

জাম্বুরা কোলিন, ফাইবার, লাইকোপিন এবং পটাসিয়ামযুক্ত। এই সমস্ত উপাদানগুলো হার্ট ভালো রাখার দুর্দান্ত উপায়। উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করার জন্য এটি অন্যতম পুষ্টিকর উপাদান।

৯।গ্রিন টি

গ্রিন টি একটি সতেজ পানীয় হিসাবে পরিচিত। গ্রিন টি তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ধমনী ফলক তৈরি রোধে সহায়তা করে। এছাড়াও গ্রিন টি এলএল, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।

১০।লাউ

লাউ মোটা হওয়ার হাত থেকে বাঁচায় ও হার্ট ব্লকেজের মতো সমস্যাকে প্রতিরোধ করে। লাউ সেদ্ধ করে তাতে ধনেগুঁড়া, হলুদ ও ধনেপাতা মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুই বার খেলে হার্ট ভালো থাকবে।

১১।রসুন

শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করে রসুন। নিয়মিত রসুন খেলে কোলেস্টেরল লেভেল একেবারে কম থাকে। রোজ জলের সঙ্গে রসুনের এক বা দু কোয়া খেলে খুবই উপকার। রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্ট ব্লকেজের সমস্যা দূর করে।

১২।লেবু পানি

প্রতিদিন লেবু পনি পান করলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয়। লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্ট ব্লকেজের ঝুঁকি কমায়।

১৩।কমলালেবু

কমলালেবু ফলে রয়েছে অনেকটা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু বহু সমস্যার করে দিতে পারে সমাধান। হার্টের অসুখও দূরে থাকে, তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।

১৪।​নাশপাতি

নাশপাতি ফলে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। এছাড়া ভিটামিন ডি, সি, কে থাকে এই ফলে। আবার পটাশিয়াম থাকায় প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে ন্যাশপাতি। তাই এই ফলও ডায়েটে রাখা উচিত হৃদরোগ দূরে রাখতে চাইলে। এছাড়া স্ট্রবেরি ও অ্যাভোকাডো খেলেও হার্ট ভালো থাকে।

১৫।দুধ আমলকী

দুধের সঙ্গে আমলাচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত এক গ্লাস খেলে হার্টের সমস্যা দূরীভূত হয়।

১৬।ডার্ক চকোলেট

গবেষণায় দেখা গেছে হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী এক খাবার হলো ডার্ক চকোলেট। সব সময় যারা ডার্ক চকোলেট (৭০ শতাংশ কোকোয়া সমৃদ্ধ) খান, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। এতে যে পলিফেনল উপদান থাকে, তা রক্তচাপ কমায়।

হার্টের রোগীরা যে যে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিবেন

রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। আবার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এবং জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি করে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

প্রাণিজ খাদ্যে যেমন— ডিমের কুসুম ও মাংসে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। উদ্ভিদজাতীয় খাবারে কোলেস্টেরল থাকে না। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোনো একটি রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্তনালির গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে যায়। সরু নালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে খাবার তালিকা থেকে যে যে খাবার বাদ দিতে হবে –

১) কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা

কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা- এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। তাই যারা হৃদরোগী তাদের কলিজা, মগজ বা নেহারি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত।

২) চিংড়ি

হৃদরোগীদের জন্যে আরেকটি বর্জনীয় খাবার হলো চিংড়ি। দেখা গেছে, ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিগ্রা কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়িমাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিগ্রা কোলেস্টেরল।

৩) মাছের মাথা-ডিম

রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম।

৪) ফাস্টফুড

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন জার্নালের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে যারা ফাস্ট ফুড খায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০% বেশি। যারা একের বেশি অর্থাৎ দুই/তিন বার খায়, তাদের হার আরো বেশি- ৫০%। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে যারা চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৮০% এরও বেশি।

৫) ডিমের কুসুম

ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে। আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিগ্রা-র বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।

৬) ঘি-মাখন-ডালডা

প্রাচ্যের অভিজাত খাবারের তালিকায় ঘি-মাখন এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হলেও এতে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেইসাথে আছে পালমিটিক এসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে—বলেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি। এর বদলে অলিভ অয়েল, সান ফ্লাওয়ার অয়েল বা মার্জারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭) নারিকেল

হংকং আর সিঙ্গাপুরের দুটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যত লোক হংকংয়ে মারা গেছে, তার অন্তত তিনগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে সিঙ্গাপুরে। গবেষকদের মতে, এর একটি কারণ হলো, সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের খাবারে নারিকেল ও পাম তেল ব্যবহারের প্রবণতা। নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদরোগীদের জন্যে ক্ষতিকর।

৮) অতিরিক্ত ভাজা তৈলাক্ত খাবার

ডিপ ফ্রাই খাবার মুখরোচক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে, তত তাতে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট। এমনও দেখা গেছে, একটা পর্যায়ে খাবারে আর কোনো ক্যালরিই অবশিষ্ট থাকে না। যেমন, মাংস বা কোনো কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর বুদবুদ উঠছে। এর কারণ হলো খাবারটার ভেতরে যে পানিটা আছে, তেলে ছেড়ে দেয়ার ফলে তা বেরিয়ে এসেছে এবং তেলের তাপ এবং চাপে তা শুকোতে শুরু করেছে।

ডিপ ফ্রাই হতে হতে পানি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, বুদবুদ ওঠাও তখন বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের ভেতরে পানির বদলে তখন ঢুকে যায় তেল। তো এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচারেটেড ফ্যাট, তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে তার ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে আরো।

৯) রেড মিট

অতিমাত্রায় রেডমিট হৃদরোগের কারণ-এটা নতুন তথ্য নয়। তবে সেটা যে কেবল রেডমিটের ফ্যাট বা কোলেস্টেরলের কারণে তা কিন্তু নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা আছে।

১০) কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম

এর প্রতিটি খাবারই চিনিযুক্ত। আর চিনি হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি মানুষটি দেখতে মোটাসোটা না হলেও। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক রিপো্র্টে বলা হয়, হৃদরোগের সাথে চিনির সম্পর্কটা ঠিক কোথায় তা বোঝা না গেলেও এটা দেখা গেছে যে, মিষ্টিজাতীয় পানীয় ব্লাড প্রেশারকে বাড়িয়ে দেয়। বাড়িয়ে দেয় লিভারের তৎপরতা, যা রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট নিঃসরণ করে। আর এ দুটো কারণই হৃদরোগের নেপথ্য অনুঘটক।

হার্টের রোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর

১।প্রশ্ন: কী কী ধরনের হার্টের অসুখ হতে পারে?

উত্তর: প্রধানত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বুক ও প্রান্তিক ধমনীর সম্পর্কিত রোগকে হৃদরোগ বলা হয়। হৃদরোগ জন্মগত হতে পারে। আবার বড় হওয়ার পরেও হতে পারে। হার্টের যে স্বাভাবিক গতি সেটা কম বা বেশি হলেই মানুষ সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এটি যে কোনও বয়সেই হতে পারে।

২।প্রশ্ন: কোন রোগগুলোকে হার্টের রোগ বলা হয়?

উত্তর: সাধারণ ভাবে হার্ট সংক্রান্ত কোনও অসুখকেই হৃদরোগ বলা হয়ে থাকে। যেমন করোনারি হৃদরোগ, কার্ডিও মায়োপ্যাথি, উচ্চ রক্ত চাপ জনিত হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিওর, হৃদপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যাওয়া, শ্বাস প্রশ্বাস ব্যহত হয়ে যাওয়া, ভালভুলার ডিজিস ইত্যাদি হার্টের অসুখের মধ্যে পড়ে।

৩।প্রশ্ন: হার্টের কি কি সমস্যা আছে?

উত্তর: হৃদপিণ্ডের মাঝে করোনারি আর্টারি নামে দুটি ছোট ছোট ধমনী থাকে। এরাই হৃদপিণ্ডকে সচল রাখতে সাহায্য করে বা হৃদপিণ্ডকে পুষ্টির জোগান দেয়। কোনও কারণে এই করোনারি আর্টারি যদি ব্লক হয়ে যায় তাহলে যে এলাকায় ওই আর্টারি বা ধমনী রক্তের পুষ্টি পৌঁছে দেয় সে জায়গার হৃদপেশি কাজ করে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। এই সমস্যা যে কোনও সময় হতে পারে। কাজ করতে করতে, ঘুমের ঘোরে সকালে-রাতে হতে পারে। হঠাৎ ভারী কোনও কাজ করলে, বাইরে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় থাকলেও এই রোগ হতে পারে।

৪।প্রশ্ন: হার্টের অসুখ আছে বুঝব কি করে?

উত্তর: সাধারনভাবে হার্টের অসুখ থাকলে বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে ঘাম এবং শরীর খারাপ লাগে। ক্রমাগত শরীর খারাপ করতে থাকলে হার্টের অসুখ হতে পারে। হার্টের করোনারি আর্টারি বা ধমনী ব্লকেজ থাকলে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা হয়। অনেকসময় এই সমস্যাগুলি নিঃশব্দে দানা বাঁধে।

৫।প্রশ্ন: রোগীর কোন কোন লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে?

উত্তর: বুকে ব্যথা, ঘাম, নিঃশ্বাসে কষ্ট, মাথা ধরা এই সব লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। হাতে -পায়ে ঝিনঝিনও ধরতে পারে। মূলত রক্তে এল ডি এল (খারাপ) কোলেস্ট্রেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং এইচ ডি এলের (ভালো)মাত্রা কমে গেলে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়।

৬।প্রশ্ন: হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ কি?

উত্তর: প্রথমত আক্রান্ত ব্যক্তিকে একদম বিশ্রাম নিতে হবে। দ্বিতীয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। তৃতীয়ত নিয়মিত ই সি জি পরীক্ষা, ব্লাড সুগারের পরীক্ষা এবং ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করাতে হবে।

৭।প্রশ্ন: হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যপারে কি করতে পারি?

উত্তর: দিনে অন্তত এক মাইল হাঁটতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করতে হবে। মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত রক্তের সিরাম, লিপিড পরীক্ষা করাতে হবে। অত্যধিক পরিশ্রমও করা যাবে না। ব্লাড সুগার এবং প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৮।প্রশ্ন: আচ্ছা হার্ট অ্যাটাক হলে বাইপাস করা হয় না?

উত্তর: যদি তিনটে করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ থাকে তাহলে সাধারণত বাইপাস করা হয়।

৯।প্রশ্ন: ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা কখন?

উত্তর: যখন দেখা যায় রোগীর কোনও বড় সমস্যা নেই এবং করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ নেই তখন ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।

১০।প্রশ্ন: কম বয়সে বাইপাস করলে তো বছর পনেরো পরে আবার ব্লক হয়ে যায়?

উত্তর: বাইপাস করা হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দশ পনেরো বছর পরে আবার পরীক্ষা করানো দরকার। বাইপাস করলেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

১১।প্রশ্ন: অপারেশনের পর সমস্যা যাতে ঘুরে না আসে, তার জন্য কি করব?

উত্তর: অপারেশনের পর যাতে আবার সমস্যা না হয় তার জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। ব্লাড প্রেসার এবং সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সবকিছুর পাশাপাশি প্রতিদিন হাঁটতে হবে।

১২।প্রশ্ন: খাওয়ার ব্যপারেও তো অনেক বিধি নিষেধ রয়েছে?

উত্তর: সাধারণভাবে তেল, ঘি এবং চর্বিজাতীয় জিনিস না খাওয়াই ভাল। মশলাদার খাবারও কম খেতে হবে। সুগার থাকলে মিষ্টি জাতীয় জিনিস বর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে অত্যধিক নুনও খাওয়া যাবে না।

১৩।প্রশ্ন: হৃদরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় এমন মানুষেরা কিভাবে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে পারেন?

উত্তর: নিয়ম মেনে সাধারণ খাওয়া দাওয়া করতে হবে। নিয়মিত হাঁট তে হবে। এছাড়া মদ্যপান, ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। ব্লাড সুগার এবং ব্লাড প্রেসার থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

১৪।প্রশ্ন: মানুষ কি উত্তরাধিকার সূত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে?

উত্তর: না এটি বংশগত রোগ নয়। সাধারণত উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় না। এটি জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে।

১৫।প্রশ্ন: হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে কেন? এর থেকে উত্তরনের উপায় কি?

উত্তর: অনিয়ম খাওয়া দাওয়া, রাত জাগা, অত্যধিক চিন্তা, শরীর নিয়ে সচেতনতার অভাবে অনেক সময় হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। এগুলি এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

শেষকথা

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন— গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে এসব প্রাণী থেকে তৈরি খাদ্য আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিন। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন। হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে।

আরও-

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

এনা পরিবহন অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

লাল সবুজ পরিবহনের অনলাইন টিকিট 

রংপুর এক্সপ্রেস  ট্রেনের অনলাইন টিকিট করার

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিকেট করার নিয়ম

আপনার জন্য আরো 

আসসালামু আলাইকুম, আমি একজন অনলাইন কনটেন্ট রাইটার। আমার লেখাগুলো পড়ে বিন্দুমাত্র আপনার কোন উপকারে আসলে অবশ্যই পোস্টটিতে কমেন্টস করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Leave a Comment