ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে যাতায়াত করার অন্যতম বাহন হচ্ছে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন (Maitree Express Train) । যদিও ঢাকা হতে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি বাস ও বিমান পরিষেবা চালু আছে তথাপি ট্রেন হল কম খরচে কলকাতা যাওয়ার সহজ ও আরামদায়ক একটি মাধ্যম।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের বর্তমান আসন সংখ্যা ৪৫৬ টি। অনেকের কাছে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা-কলকাতা এক্সপ্রেস নামেও পরিচিত।
আজ আপনাদের জানাবো মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট,মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট মূল্য,মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কখন, কোথায়,কিভাবে পাওয়া যাই, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহন করার নিয়ম,মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া,মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত।
মৈত্রী এক্সপ্রেস
মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে যাতায়াতকারী এক্সপ্রেস ট্রেন। আন্তর্জাতিক মানসম্মত এই ট্রেনটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। মৈত্রী শব্দের অর্থ বন্ধুত্ব। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন এই ট্রেন চালু করা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে কলকাতার পথে মৈত্রী এক্সপ্রেস এখন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক শুক্রবার ১৪ এপ্রিল ২০১৭ সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এই নতুন সেবার উদ্বোধন করেছেন।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন রুট
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে ষ্টেশন হতে যাত্রা শুরু করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে থামে। অনুরূপ ভাবে কলকাতা টার্মিনাল স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকা আসে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী
আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা থেকে কলকাতায় যায়: বুধ, শুক্র, শনি ও রোববারে।
ট্রেনটি কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৮টায় এবং কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৪টায়। একইভাবে, মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪দিন কলকাতা থেকে ঢাকায় আসে: সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবারে।
ট্রেনটি কলকাতার চিতপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ০৭টা ১০ মিনিটে রওনা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৪টা ০৫ মিনিটে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট মূল্য
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে এসি সিট এবং এসি চেয়ার এই দুই ধরণের আসন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক টিকেটের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদান বাধতামূলক।
ঢাকা থেকে কলকাতা
AC কেবিন – ২৫২২ টাকা + ৩৭৮ টাকা (ভ্যাট)+ ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স = ৩৪০০ টাকা
AC চেয়ার – ১৭৪৮ টাকা +২৫২ টাকা ( ভ্যাট ) + ৫০০ ট্রাভেল ট্যাক্স = ২৫০০ টাকা।।
কলকাতা থেকে ঢাকা
AC কেবিন – ২০১৫ রুপি
AC চেয়ার – ১৩৪৫ রুপি
এছাড়া ১ থেকে ৫ বছরের শিশুদের জন্য টিকেট মূল্যের উপর ৫০% ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টে উল্লেখিত জন্ম সাল ধরা হয়।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইন টিকিট
অনলাইনে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটা যায় না। ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন হতে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৭ টা পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয় এবং এর জন্য স্টেশনে আলাদা টিকেট কাউন্টার আছে। সাধারণত যাত্রার ৩০ দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যায়।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কোথায় পাবেন
ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন ও চট্টগ্রাম রেল স্টেশন হতে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কাটা যায়। এছাড়া কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে কলকাতা হতে ঢাকায় আসার ট্রেনের টিকিট ২০ শতাংশ আসনের টিকেট কাটা যায়। আর বাকি ৮০ শতাংশ আসনের টিকিট কলকাতা ষ্টেশন কাউন্টারে পাওয়া যাবে। কলকাতা থেকে ঢাকার টিকেট পাওয়া যায় কলকাতা টার্মিনাল স্টেশন ও ফেয়ারলীপ্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে।
কখন ও কিভাবে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটবেন
অনলাইনে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটা যায় না। ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন হতে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৭ টা পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয় এবং এর জন্য স্টেশনে আলাদা টিকেট কাউন্টার আছে। সাধারণত যাত্রার ৩০ দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যায়।
বাংলাদেশীদের ভারতের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এন্ট্রি পোর্ট হিসাবে ‘রেল-দর্শনা দ্বারা’ উল্লেখ করতে হবে। আর ভারতের ক্ষেত্রে ‘রেল-গেদে দ্বারা’ উল্লেখ করতে হয়। কেবলমাত্র ভারতীয় ভিসা পেলেই মৈত্রী এক্সপ্রেসের ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবেন।
ট্রেনের টিকেট কাটার সময় যাত্রীকে অবশ্যই পাসপোর্ট সাথে নিতে যেতে হবে। সেই সাথে যাত্রার দিন হতে নূন্যতম ৬ মাস পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। একজন একসাথে ৩ টি টিকেট ক্রয় করতে পারবেন এবং অন্য যাত্রীদের অবশ্যই পাসপোর্ট সহযোগে টিকেট বুকিং-এর সময় স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
ট্রেনে মালামাল পরিবহণের নিয়ম
প্রতি পূর্ণবয়স্ক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ওজনের লাগেজ বিনামূল্যে সাথে পরিবহণ করতে পারবেন। আর শিশুদের ক্ষেত্রে ২০ কেজি পর্যন্ত ফ্রি লাগেজ নেয়া যায়।
৩০ কেজির ওজনের বেশী লাগেজ নিতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট হারে এক্সট্রা ফি প্রদান করতে হবে। ৩১ থেকে ৫০ কেজি ওজনের লাগেজের ক্ষেত্রে কেজি প্রতি এক্সট্রা ফির পরিমাণ ২ ডলার এবং ৫০ কেজির উপর কেজি প্রতি এক্সট্রা ফি ১০ ডলার।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট ফেরত দেবার নিয়ম
ঢাকা থেকে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কেনার পর যদি কোনও কারণে আপনার যাত্রা বাতিল করতে হয়, তাহলে আপনি কাউন্টারে গিয়ে আপনার কেনা টিকেটটি ফেরত দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে সার্ভিস চার্জ কর্তন করে টিকেট বাবৎ প্রদত্ত বাকি টাকা আপনাকে ফেরত দেওয়া হবে।
ট্রেন ছাড়ার সময়ের ১২০ ঘণ্টা আগে ফেরত দিলে সার্ভিস চার্জ হবে ২৫ টাকা, ১২০ ঘণ্টার কম এবং ৯৬ ঘণ্টার বেশি হলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হবে ৫০% টাকা, এবং ৯৬ ঘণ্টার কম ও ৭২ ঘণ্টার বেশি হলে ক্রয়কৃত টিকেটের মূল্যের ৭৫% টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কর্তনযোগ্য। এর চেয়ে কম সময় আগে টিকেট ফেরত দেওয়া যায় না।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া
১। ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশে ট্রেন ভ্রমণের শুরুতে, আপনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছুবেন এবং একটি ইমিগ্রেশন ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করবেন। আপনার ট্রেন কলকাতা স্টেশনে পৌঁছানোর আগে ট্রেনেই আপনাকে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে অবতরণের অনুমতি সম্বলিত ডিসএম্বারকেশন কার্ড দেওয়া হবে। আপনি যথাযথ তথ্য দিয়ে সেই কার্ডের খালি ঘরগুলো পূরণ করবেন। ঠিকানা এবং ফোন নম্বরের জায়গায় আপনার সম্ভাব্য হোটেলের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিন। আর কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে অতিথি হতে চাইলে কার্ডে আপনার আত্মীয়ের পুরো নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিন।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
ট্রেনটি আপনার গন্তব্য স্টেশনে থামার পরপরই ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ান। সেখানে ভারতীয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি ডিক্লেয়ারেশন ফরম দেবে। ফরমটি পূরণ করুন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনার লাগেজগুলি তুলে নিয়ে একটি স্ক্যানিং মেশিনে পরীক্ষা করা হবে। কাস্টম থেকে বের হবার আগে আপনার পূরণ করা ডিক্লেয়ারেশন ফরমটি জমা দিন। চাকুরিজীবীদের জন্যে তাদের এনওসি সাথে রাখা দরকার।
২। কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার দিন ভোর ৫টা নাগাদ আপনি কলকাতার চিতপুর রেলস্টেশনে পৌঁছুবেন। কলকাতা স্টেশনে আপনার প্রথম কাজ হলো ডিক্লেয়ারেশন ফরম বা ঘোষণাপত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ানো। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে পৌঁছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মধ্যে এমবারকেশন কার্ড বিতরণ করবে। এখানে শুল্ক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে কেবিন যাত্রী এবং চেয়ার কোচ যাত্রীদের জন্যে দুটি আলাদা লাইন থাকবে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবারের ব্যবস্থা
ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি খাবার বহনকারী গাড়ি যায়। এতে ট্রেনযাত্রীদের জন্যে হালকা খাবার এবং পানীয় থাকে। যাত্রীদেরকে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবারের গাড়িতে কী কী খাবার রয়েছে তার একটি মেনু এবং মূল্য তালিকা টাঙানো থাকে।
শেষকথা
ঢাকা থেকে কলকাতা বা কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে চলা ট্রেনটি যদি কোনও কারণে অনির্ধারিত কোনো স্থানে থামে, তখন ট্রেন থেকে নামা বা ট্রেনে ওঠা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ এমনকিছু করার চেষ্টা করলে রেলওয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তাই আপনার ভ্রমণ কে সুন্দর করতে সতর্ক থাকুন।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন টিকেট করার নিয়ম পিজি হাসপাতালে অনলাইন টিকিট বুকিং করার নিয়ম ইউনিক বাস অনলাইন টিকেট কাটার নিয়ম বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইন টিকিট কাটার নিয়ম জাতীয় জাদুঘর অনলাইন টিকেট করার নিয়ম
↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇
- ইংলিশের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে- – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে –এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন
↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇
➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।
➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।
➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।