জমির খাজনা কত টাকা শতক?জেনে নিন

Rate this post

জমির খাজনা বাংলাদেশের কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি জমির মালিক এবং চাষীদের মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা কৃষি উৎপাদন এবং ভূমি ব্যবহারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জমির খাজনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জমির উর্বরতা, অবস্থান, স্থানীয় বাজার দর, এবং সরকারি নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২০২৫ সালে জমির খাজনা কত টাকা শতক হবে, তা জানা প্রতিটি জমির মালিক এবং চাষীর জন্য অপরিহার্য। কারণ এটি তাদের আর্থিক পরিকল্পনা এবং জমি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জমির খাজনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, ২০২৫ সালের সম্ভাব্য খাজনার হার, এর সাথে জড়িত আইনি প্রক্রিয়া, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করব।

এই পোস্টটি আপনাকে জমির খাজনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেবে এবং আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে। চলুন শুরু করি!

জমির খাজনা কি?

জমির খাজনা হলো জমির মালিককে জমি ব্যবহারের বিনিময়ে প্রদত্ত অর্থ। এটি সাধারণত চাষী বা ভাড়াটে দ্বারা প্রদান করা হয়। জমির খাজনা একটি চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা, যেখানে জমির মালিক এবং চাষী বা ভাড়াটে উভয়ই সম্মত হন যে, জমি ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে।

আরোও –খাস জমি কি? সহজে খাস জমি চেনার উপায় সমূহ

খাজনার হার জমির উর্বরতা, অবস্থান, এবং স্থানীয় বাজারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, উর্বর জমির খাজনা সাধারণত বেশি হয়, কারণ এতে ফসলের উৎপাদন বেশি হয়। অন্যদিকে, শহরতলি বা শিল্পাঞ্চলের জমির খাজনা কৃষি জমির তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।

জমির খাজনা সাধারণত বছরে একবার আদায় করা হয়, তবে এটি চুক্তির শর্তানুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে জমির খাজনা সংক্রান্ত বিষয়গুলি ভূমি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় ভূমি অফিস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

জমির খাজনার প্রকারভেদ

জমির খাজনা সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে:

  1. নগদ খাজনা: জমির মালিককে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
  2. ফসলের অংশ হিসেবে খাজনা: চাষী তার উৎপাদিত ফসলের একটি অংশ জমির মালিককে প্রদান করে।

জমির খাজনার গুরুত্ব

  • জমির মালিকের জন্য এটি একটি আয়ের উৎস।
  • চাষীর জন্য জমি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।
  • কৃষি উৎপাদন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য বজায় রাখে।

জমির খাজনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জমির মালিক এবং চাষী উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে এবং আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।

জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজ লাগে?

1️⃣খতিয়ান (CS/SA/RS/BS) বা জমির মালিকানার প্রমাণপত্র
2️⃣ দাগ নম্বর (CS/SA/RS/BS অনুযায়ী)
3️⃣ জমির পরিমাণ (শতক/একর)
4️⃣ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জমির মালিকের পরিচয়পত্র
5️⃣ পূর্ববর্তী খাজনা পরিশোধের রসিদ (যদি থাকে)
6️⃣ দলিল বা নামজারির কাগজ (যদি নতুন মালিক হয়)
7️⃣ যদি অন্য কেউ জমির খাজনা দিতে চায়, তবে অনুমতিপত্র বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি

জমির খাজনা কত টাকা শতক

বর্তমানে বাংলাদেশে জমির খাজনা প্রতি শতকে ২ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। জমির ধরন বা শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে খাজনার হার নির্ধারিত হয়। আমাদের দেশে প্রধানত তিন ধরনের জমি রয়েছে: কৃষি জমিআবাসিক জমি, এবং বাণিজ্যিক জমি। নিচে প্রতিটি ধরনের জমির খাজনার হার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কৃষি জমির খাজনা কত? 

কৃষি জমির খাজনা প্রতি শতকে মাত্র ২ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি শতক কৃষি বা আবাদি জমির জন্য সরকারকে বছরে ২ টাকা হারে খাজনা প্রদান করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ১ বিঘা (৩৩ শতক) কৃষি জমি থাকে, তাহলে বছরে খাজনা দিতে হবে ৬৬ টাকা

বসত বাড়ির খাজনা কত?

বসত বাড়ির (আবাসিক জমি) খাজনা প্রতি শতকে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

  • পৌরসভার বাইরে বসত বাড়ির খাজনা: প্রতি শতকে ১০ টাকা। অর্থাৎ, ১০ শতক জমির জন্য বছরে ১০০ টাকা খাজনা দিতে হবে।
  • পৌরসভার ভিতরে বসত বাড়ির খাজনা: প্রতি শতকে ১৫ টাকা। অর্থাৎ, ১০ শতক জমির জন্য বছরে ১৫০ টাকা খাজনা দিতে হবে।
১ শতাংশ জমির খাজনা কত?

১ শতাংশ জমির খাজনা জমির ধরনের উপর নির্ভর করে ২ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

  • কৃষি জমি: প্রতি শতকে ২ টাকা।
  • আবাসিক জমি: প্রতি শতকে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
  • বাণিজ্যিক জমি: প্রতি শতকে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) কত টাকা?

বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) প্রতি শতকে ২ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। এটি জমির ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে।

  • কৃষি জমি: প্রতি শতকে ২ টাকা। ১ বিঘা জমির জন্য বছরে ৬৬ টাকা।
  • আবাসিক জমি: প্রতি শতকে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
  • বাণিজ্যিক জমি: প্রতি শতকে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
জমির খাজনা বছরে কত?

বাংলাদেশে জমির খাজনা বছরে নিম্নলিখিত হারে প্রদান করতে হয়:

  • কৃষি জমি: প্রতি শতকে ২ টাকা।
  • আবাসিক জমি: প্রতি শতকে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
  • বাণিজ্যিক জমি: প্রতি শতকে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

জমির খাজনা ক্যালকুলেটর

যেকোনো জমির খাজনার হিসাব সহজেই বের করতে পারেন জমির খাজনা ক্যালকুলেটর অ্যাপ ব্যবহার করে। এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায়। অ্যাপটি ইনস্টল করে আপনার জমির ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) কত টাকা তা নির্ধারণ করুন।

জমির খাজনা জমির ধরন এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে প্রতি শতকে ২ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কৃষি জমির খাজনা সবচেয়ে কম, প্রতি শতকে মাত্র ২ টাকা। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক জমির খাজনা সর্বোচ্চ, প্রতি শতকে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। জমির খাজনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা জমির মালিক এবং ব্যবহারকারী উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৫ সালে জমির খাজনার সম্ভাব্য হার

২০২৫ সালে জমির খাজনার হার বাড়তে পারে, বিশেষ করে যদি কৃষি খরচ এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালে জমির খাজনা প্রতি শতকে ৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এই হার নির্ধারণে নিম্নলিখিত ফ্যাক্টরগুলি প্রভাব ফেলবে:

  • মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা: মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে জমির খাজনার হারও বাড়তে পারে।
  • কৃষি উৎপাদনের খরচ: সার, বীজ, শ্রমিক মজুরি ইত্যাদি খরচ বৃদ্ধি পেলে খাজনার হারও বাড়তে পারে।
  • সরকারি নীতি এবং ভূমি সংস্কার: সরকারি নীতিমালা এবং ভূমি সংক্রান্ত আইন খাজনার হার প্রভাবিত করতে পারে।
  • জমির চাহিদা এবং সরবরাহ: জমির চাহিদা বেশি হলে খাজনার হার বাড়তে পারে।

ট্রাস্টেড সোর্সের লিঙ্ক-

কত শতক জমি থাকলে খাজনা দিতে হয়?

বাংলাদেশে খাজনা দেওয়ার বিষয়টি ভূমির পরিমাণ ও ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত, ২৫ শতক বা তার বেশি জমি থাকলে সেটি খাজনা প্রদানের আওতায় আসে। তবে, এটি নির্ভর করে জমির ধরন, মালিকানার প্রকৃতি এবং সংশ্লিষ্ট ভূমি আইনের ওপর।

জমির খাজনা চেক করব কিভাবে?

বাংলাদেশে অনলাইনে বা সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে জমির খাজনা চেক করা যায়। নিচে দুইটি পদ্ধতি দেওয়া হলো:

১. অনলাইনে জমির খাজনা চেক করার পদ্ধতি:

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার “ভূমি সেবা” (e-Mutation & e-Khajna) পোর্টাল চালু করেছে, যেখানে আপনি নিজেই জমির খাজনা চেক করতে পারেন।

1️⃣ ভিজিট করুন: www.land.gov.bd অথবা https://ekpay.gov.bd
2️⃣ “ই-খাজনা” অপশন নির্বাচন করুন।
3️⃣ জেলা, উপজেলা ও মৌজা নির্বাচন করুন।
4️⃣ জমির তথ্য (দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর) দিয়ে সার্চ করুন।
5️⃣ আপনার জমির খাজনা তথ্য দেখাবে এবং চাইলে অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবেন।

২. ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিসে গিয়ে চেক করা:

✅ ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিসে গিয়ে খতিয়ান ও দাগ নম্বর প্রদান করে আপনার জমির খাজনার তথ্য জানতে পারবেন।
✅ ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে খাজনা রশিদ সংগ্রহ করুন।
✅ যদি পুরাতন খাজনা বাকি থাকে, তাহলে সেটাও জেনে নিয়ে পরিশোধ করুন।

কত বছর খাজনা না দিলে?

বাংলাদেশের ভূমি আইনের ভিত্তিতে, যদি ৩ (তিন) বছর বা তার বেশি সময় জমির খাজনা পরিশোধ না করা হয়, তবে সরকার সেই জমিকে খাস জমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারে এবং মালিকানা নিয়ে নিতে পারে। তবে, এটি তৎকালীন সরকারের নীতি এবং ভূমি অফিসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

কত সালে কৃষি জমির খাজনা মওকুফ করা হয়?

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালের ১লা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল, ১৯৭৭) থেকে সব ধরনের কৃষি জমির খাজনা, সেস, মহাল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর বাতিল করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকদের জন্য ভূমি করের বোঝা কমে যায় এবং তারা জমির উপর কোনো বার্ষিক খাজনা দিতে বাধ্য থাকে না।

প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন ১: জমির খাজনা কীভাবে পরিশোধ করব?
উত্তর: জমির খাজনা নগদ অর্থ, ব্যাংক ট্রান্সফার, চেক, মোবাইল ব্যাংকিং, বা স্থানীয় ভূমি অফিসে পরিশোধ করা যায়।

প্রশ্ন ২: জমির খাজনা পরিশোধের সময় কী কী বিষয় মনে রাখব?
উত্তর: লিখিত চুক্তি, রসিদ সংগ্রহ, সময়সীমা মেনে চলা, এবং আইনি পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন ৩: জমির খাজনা পরিশোধ না করলে কী হবে?
উত্তর: জমির মালিক চাষীকে জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।

প্রশ্ন ৪: জমির খাজনা পরিশোধের সেরা পদ্ধতি কি?
উত্তর: ব্যাংক ট্রান্সফার বা চেকের মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করা সবচেয়ে নিরাপদ এবং প্রমাণযোগ্য পদ্ধতি।

উপসংহার

জমির খাজনা পরিশোধ করা জমির মালিক এবং চাষী উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে খাজনা পরিশোধ করলে আইনি জটিলতা এড়ানো যায় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন

Welcome to our banking tips blog! I'm Sanaul Bari, a passionate financial educator and experienced banking professional dedicated to helping individuals and businesses navigate the complex world of finance. With over a decade of experience in the banking industry, I’ve held various positions, from customer service representative to financial advisor, gaining a comprehensive understanding of banking products, services, and strategies.

Leave a Comment