নতুন নিয়মে বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক?

Rate this post

বাংলাদেশে অনেক ব্যক্তি ও উদ্যোক্তা আছেন যারা ব্যবসা শুরু করতে বা ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে ঋণের প্রয়োজন অনুভব করেন, কিন্তু জামানত প্রদানের সক্ষমতা না থাকায় সমস্যায় পড়েন। তাদের জন্য সুখবর হলো, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা এসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা, তাদের ঋণ প্রদানের শর্তাবলী, আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিনা জামানতে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানসমূহ

১. কর্মসংস্থান ব্যাংক: বাংলাদেশের বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এখানে ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। সুদহার ৮% থেকে ১০% এর মধ্যে থাকে।

২. সোনালী ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং চাকরিজীবীদের জন্য ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে। ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের সুদহার বার্ষিক ৯%।

৩. জনতা ব্যাংক: জনতা ব্যাংকও বিনা জামানতে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে, ঋণ পেতে হলে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়, যেমন স্থায়ী আয়ের উৎস এবং চাকরির স্থায়ীত্ব।

৪. ব্র্যাক ব্যাংক: ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে। তবে, ঋণের পরিমাণ এবং শর্তাবলী ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী

প্রতিটি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু শর্তাবলী থাকে, তবে সাধারণত নিম্নোক্ত শর্তগুলো প্রযোজ্য:

  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
  • বয়সসীমা: সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে ৫ম শ্রেণি পাস হতে হবে।
  • প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞতা: প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা: আবেদনকারীকে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও আর্থিক আচরণে সুনামের অধিকারী হতে হবে।

বিনা জামানতে ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ঋণের জন্য আবেদন করতে হলে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

১. আবেদনপত্র পূরণ: প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

  1. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা: সাধারণত নিম্নোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হয়:
    • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
    • ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
    • শিক্ষাগত সনদের কপি: শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
    • প্রশিক্ষণ সনদ: প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণের সনদপত্র।
    • ব্যবসার ক্ষেত্রে: ট্রেড লাইসেন্স, আয়-ব্যয় বিবরণী, মজুদ পণ্যের বিবরণ ইত্যাদি।
  2. আবেদনের জমা: সকল কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের শাখায় জমা দিতে হবে।
  3. মূল্যায়ন ও অনুমোদন: আবেদন পর্যালোচনা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: বিনা জামানতে সর্বোচ্চ কত টাকা ঋণ পাওয়া যায়?

উত্তর: সাধারণত ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ পাওয়া যায়, তবে এটি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

জামানত ছাড়া কোন ব্যাংক ঋণ দেয়?

বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করে থাকে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেওয়া হলো:

১. কর্মসংস্থান ব্যাংক: এই ব্যাংকটি বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে। আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং ন্যূনতম ৫ম শ্রেণি পাস হতে হবে। প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

২. সোনালী ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং চাকরিজীবীদের জন্য ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে। ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়-ব্যয় বিবরণী ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বেতন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে হলে ঋণ প্রাপ্তি সহজ হয়।

৩. গ্রামীণ ব্যাংক: গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে। তবে, এই ঋণ সাধারণত সমবায় ভিত্তিতে দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট শর্তাবলী প্রযোজ্য।

কোন ব্যাংক সহজে ব্যক্তিগত ঋণ দেয়?

বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক সহজ শর্তে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করে থাকে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাংকের তথ্য প্রদান করা হলো:

১. ঢাকা ব্যাংক: ঢাকা ব্যাংক তাদের ‘eRin’ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সহজে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়, এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। সাধারণত, আবেদন জমা দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

২. সোনালী ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করে, যার মধ্যে হোম লোন, পার্সোনাল লোন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাদের পার্সোনাল লোনের সীমা সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ঋণের শর্তাবলী এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সোনালী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।

৩. ব্র্যাক ব্যাংক: ব্র্যাক ব্যাংক ‘সুবিধা’ অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।

৪. বিকাশ: মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশও তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করছে। তবে, এই সেবাটি নির্দিষ্ট গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য এবং শর্তাবলী ভিন্ন হতে পারে।

সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন সুদের হারে ঋণ প্রদান করে থাকে। সাধারণত, সরকারি ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম সুদে ঋণ প্রদান করে। তবে, সুদের হার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি ঋণের ধরণ, মেয়াদ, এবং গ্রাহকের আর্থিক প্রোফাইলের উপর নির্ভর করে।

উপসংহার

বাংলাদেশে বিনা জামানতে ঋণ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা উদ্যোক্তা ও ব্যক্তিদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করছে। তবে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শর্তাবলী ও প্রক্রিয়া রয়েছে, যা অনুসরণ করে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। ঋণ গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন

Welcome to our banking tips blog! I'm Sanaul Bari, a passionate financial educator and experienced banking professional dedicated to helping individuals and businesses navigate the complex world of finance. With over a decade of experience in the banking industry, I’ve held various positions, from customer service representative to financial advisor, gaining a comprehensive understanding of banking products, services, and strategies.

Leave a Comment