বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার কত? বিকাশ সেভিংস এর সুবিধা কি

4/5 - (1 vote)

বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেনের যুগে বিকাশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা। বিকাশের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন আর্থিক সেবা গ্রহণ করতে পারেন, যার মধ্যে একটি হলো ডিপিএস বা ডিপোজিট পেনশন স্কিম। ডিপিএস সেবা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহজ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ দেয়। এই ব্লগে আমরা বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার, এর বৈশিষ্ট্য এবং এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিকাশ ডিপিএস কী?

বিকাশ ডিপিএস হলো একটি সঞ্চয় স্কিম যা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি এমন একটি সেবা যা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়মিত সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। এটি মূলত একটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় পদ্ধতি যা আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

  • স্বল্প পরিমাণে সঞ্চয়: আপনি স্বল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে ডিপিএস শুরু করতে পারেন।
  • নিয়মিত সঞ্চয়: মাসিক ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়।
  • ডিজিটাল লেনদেন: বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই ডিপিএস পরিচালনা করা যায়।

বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার

বিকাশ ডিপিএস এর মুনাফার হার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, এটি ৫% থেকে ৭% এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এটি পরিবর্তনশীল এবং সময়ে সময়ে ব্যাংকের শর্তাবলী ও বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

মুনাফার হার নির্ধারণের উপাদানসমূহ:

  1. মেয়াদ: ডিপিএস এর মেয়াদ যত দীর্ঘ, মুনাফার হার তত বেশি হতে পারে।
  2. জমার পরিমাণ: মাসিক জমার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, মোট মুনাফাও বৃদ্ধি পায়।
  3. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান: প্রতিটি ব্যাংক ভিন্ন মুনাফার হার প্রদান করে।

উদাহরণ:

আপনি যদি প্রতি মাসে ১০০০ টাকা ডিপিএস জমা করেন এবং মুনাফার হার ৬% হয়, তাহলে ৫ বছরের শেষে আপনার মোট সঞ্চয় হবে:

মূলধন: ১০০০ × ৬০ (মাস) = ৬০,০০০ টাকা। মুনাফা: প্রায় ৯,৩০০ টাকা। মোট: ৬০,০০০ + ৯,৩০০ = ৬৯,৩০০ টাকা।

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সাপ্তাহিক ও মাসিক ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) খোলা যায়। ডিপিএস-এর মেয়াদ, জমার পরিমাণ এবং মুনাফার হার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। নিচে একটি সাধারণ টেবিল আকারে সাপ্তাহিক ও মাসিক ডিপিএস-এর বিবরণ প্রদান করা হলো:

সাপ্তাহিক ডিপিএস

মেয়াদ সাপ্তাহিক জমার পরিমাণ (টাকা) ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান
৬ মাস ২৫০/৫০০/১,০০০/২,০০০/৫,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড
১২ মাস ২৫০/৫০০/১,০০০/২,০০০/৫,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড

 

মাসিক ডিপিএস

মেয়াদ মাসিক জমার পরিমাণ (টাকা) ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান
১ বছর ৫০০/১,০০০/২,০০০/২,৫০০/৩,০০০/৫,০০০/১০,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক (সিটি ইসলামিক)
২ বছর ৫০০/১,০০০/২,০০০/২,৫০০/৩,০০০/৫,০০০/১০,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক (সিটি ইসলামিক)
৩ বছর ৫০০/১,০০০/২,০০০/২,৫০০/৩,০০০/৫,০০০/১০,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক (সিটি ইসলামিক)
৪ বছর ৫০০/১,০০০/২,০০০/২,৫০০/৩,০০০/৫,০০০/১০,০০০ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক (সিটি ইসলামিক)

 

মুনাফার হার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। সুনির্দিষ্ট মুনাফার হার জানতে বিকাশ অ্যাপের ‘সেভিংস’ সেকশনে গিয়ে পছন্দের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস স্কিম নির্বাচন করে বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারেন। এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা কাস্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করে মুনাফার হার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বিকাশ ডিপিএস এর সুবিধা

  1. সহজ ব্যবস্থাপনা: বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই ডিপিএস পরিচালনা করা যায়।
  2. স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট: নির্ধারিত তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়।
  3. নিরাপদ সঞ্চয়: ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় এটি নিরাপদ।
  4. নিয়মিত মুনাফা: নির্ধারিত সময়ে মুনাফা যোগ হয়।

কিভাবে বিকাশ ডিপিএস শুরু করবেন?

  1. বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন: আপনার মোবাইলে বিকাশ অ্যাপ ইনস্টল করুন।
  2. অ্যাকাউন্ট লগইন করুন: আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।
  3. ডিপিএস অপশন সিলেক্ট করুন: মেনু থেকে ডিপিএস সেবা নির্বাচন করুন।
  4. মাসিক জমার পরিমাণ নির্ধারণ করুন: আপনার সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত মাসিক পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
  5. চুক্তি সম্পন্ন করুন: প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে ডিপিএস চুক্তি সম্পন্ন করুন।

বিকাশ সেভিংস এর টাকা তোলার নিয়ম কি

বিকাশ সেভিংস থেকে টাকা তোলার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন:

  1. বিকাশ অ্যাপ খুলুন: আপনার স্মার্টফোনে বিকাশ অ্যাপ চালু করুন।
  2. ‘সেভিংস’ অপশন নির্বাচন করুন: অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে ‘সেভিংস’ বাটনে ট্যাপ করুন।
  3. সেভিংস হিস্টোরি দেখুন: আপনার সক্রিয় সেভিংস অ্যাকাউন্টগুলির তালিকা দেখতে পাবেন। এখান থেকে আপনি আপনার সেভিংসের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
  4. মেয়াদপূর্তির পর টাকা উত্তোলন: সেভিংসের মেয়াদ শেষ হলে, মুনাফাসহ সম্পূর্ণ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এরপর আপনি এই টাকা ক্যাশ আউট করতে পারবেন কোনো চার্জ ছাড়াই।
ক্যাশ আউট করার পদ্ধতি
  • বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে: নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন।
  • এটিএমের মাধ্যমে: বিকাশ সমর্থিত ব্র্যাক ব্যাংক বা কিউ-ক্যাশ এটিএম থেকে কার্ডবিহীন লেনদেনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে পারেন।

দ্রষ্টব্য: সেভিংসের মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ সম্পূর্ণ টাকা ক্যাশ আউট করতে কোনো খরচ লাগবে না।

  • সেভিংসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে টাকা উত্তোলন করতে চাইলে, আপনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে মুনাফার পরিমাণ কম হতে পারে।
  • আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নিশ্চিত করুন, যাতে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া যায়। যদি নির্ধারিত দিনে ব্যালেন্স পর্যাপ্ত না হয়, তবে পরবর্তী কয়েকদিনে পুনরায় কিস্তি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

বিকাশ সেভিংস বাতিল করার নিয়ম

বিকাশ সেভিংস (bKash Savings) অ্যাকাউন্ট বাতিল করতে, আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে
  1. বিকাশ অ্যাপ খুলুন: আপনার বিকাশ অ্যাপ লগইন করুন।
  2. মেইন মেনুতে যান: হোম স্ক্রিন থেকে “Savings” অপশন নির্বাচন করুন।
  3. সেভিংস অ্যাকাউন্ট নির্বাচন করুন: আপনার অ্যাক্টিভ সেভিংস অ্যাকাউন্টটি নির্বাচন করুন।
  4. বাতিলের অপশন খুঁজুন: “Close Account” বা “Cancel Savings” অপশনটি খুঁজুন।
  5. নির্দেশনা অনুসরণ করুন: বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন এবং কনফার্ম করুন।
বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এর মাধ্যমে
  1. কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন: বিকাশের হেল্পলাইন নম্বর ১৬২৪৭-এ কল করুন।
  2. অ্যাকাউন্ট বন্ধের অনুরোধ জানান: সেভিংস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য তাদের জানান।
  3. প্রয়োজনীয় তথ্য দিন: আপনার বিকাশ নম্বর, পরিচয় যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট

আপনি নিকটবর্তী বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে সেভিংস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার বিষয়ে সহায়তা নিতে পারেন। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নিয়ে যান।

  • সেভিংস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার আগে, নিশ্চিত করুন যে অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা তুলে নিয়েছেন।
  • অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার শর্তাবলী ব্যাংক বা বিকাশ সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর নির্ভরশীল হতে পারে।

যদি কোনো জটিলতা হয়, বিকাশের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।

কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: বিকাশ ডিপিএস এর সর্বনিম্ন জমার পরিমাণ কত?

উত্তর: বিকাশ ডিপিএস এর সর্বনিম্ন জমার পরিমাণ ৫০০ টাকা।

প্রশ্ন ২: মুনাফার হার কিভাবে পরিবর্তিত হয়?

উত্তর: মুনাফার হার ব্যাংকের শর্তাবলী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: যদি নির্ধারিত তারিখে জমা না দেওয়া হয়?

উত্তর: নির্ধারিত তারিখে জমা না দিলে দণ্ড ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং ডিপিএস বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন ৪: বিকাশ ডিপিএস এর মেয়াদ কত?

উত্তর: সাধারণত ১ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা যায়।

উপসংহার

বিকাশ ডিপিএস একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক সঞ্চয় পদ্ধতি যা আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এটি সহজ, নিরাপদ এবং লাভজনক একটি সেবা। তবে সঞ্চয়ের আগে অবশ্যই মুনাফার হার এবং অন্যান্য শর্তাবলী ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত।

আপনি যদি আপনার সঞ্চয় পরিকল্পনা শুরু করতে চান, তবে আজই বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিপিএস খুলুন এবং আপনার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন

Welcome to our banking tips blog! I'm Sanaul Bari, a passionate financial educator and experienced banking professional dedicated to helping individuals and businesses navigate the complex world of finance. With over a decade of experience in the banking industry, I’ve held various positions, from customer service representative to financial advisor, gaining a comprehensive understanding of banking products, services, and strategies.

Leave a Comment