পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ঠিকমতো কাজ করতে এটি অনেক ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর স্নায়ু ফাংশন বজায় রাখা এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা হচ্ছে পটাশিয়ামের অন্যতম কাজ।
শরীরের চাহিদা মেটাতে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ মানুষই পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ করেন না। আর এটির জন্য অন্যতম একটি কারণ হতে পারে— পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফল না খাওয়া।আজ আলোচনা করবো পটাশিয়াম যুক্ত খাবার গুলো কি কি।
পটাশিয়াম কী?
পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড মিলে তৈরি হয় খনিজ উপাদানের ইলেক্ট্রোলাইট পরিবার। পানিতে ডুবালে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে বলেই একে ইলেক্ট্রোলাইট বলা হয়। মাংসপেশি এবং স্নায়ুর কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের জন্য পটাশিয়াম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাংসপেশি কত দ্রুত এবং কতটুকু সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারবে এবং আমাদের স্নায়ু কতটা উত্তেজিনা সহ্য করতে পারে দুটোই নির্ভর করে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়ামের উপস্থিতির উপর।
পটাশিয়াম কেনো দরকার
পটাশিয়ামের অভাব থাকলে অনেক কাজই ব্যহত হয়। মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজন। আবার সেই কাজ সম্পাদন করতে মাংসপেশিরও চাই পটাশিয়াম। পাশাপাশি শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয করতে সাহায্য করে পটাশিয়াম। এছাড়াও শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এবং অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখতে পটাশিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করতেও সাহায্য করে এই উপাদান।
শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি বুঝবেন কিভাবে?
পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে হঠাৎ করেই শরীর থেকে প্রচুর তরল হারাতে পারে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বমি, ডায়রিয়া, অত্যধিক ঘাম এবং রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জানুন শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি আছে কিনা বুঝবেন কিভাবে তার লক্ষণ—
১. দুর্বলতা ও ক্লান্তি
পটাশিয়ামের অভাব হলে তার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় দুর্বলতা ও ক্লান্তি। পটাশিয়াম পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আর রক্তে যখন পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়, তখন পেশি দুর্বল হয়ে সংকোচন তৈরি করে। এ ছাড়া পটাশিয়ামের ঘাটতি আপনার শরীর কীভাবে পুষ্টি ব্যবহার করবে তাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ফলে ক্লান্তি দেখা দেয়।
২. পেশি ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি
পেশি ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হচ্ছে পেশির আকস্মিক ও অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. হজমের সমস্যা
হজমের সমস্যার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে— পটাশিয়ামের অভাব। পটাশিয়ামের ঘাটতির কারণে পাচনতন্ত্রের সংকোচন দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং খাদ্যের চলাচলকে ধীর করে দিতে পারে। ফলে এটি শরীর ফুলে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. পেশিতে ব্যথা
পটাশিয়ামের অভাবের কারণে পেশি ব্যথা ও পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা আপনার পেশিতে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আর এ মাত্রা অনেক কমে গেলে তা আপনার রক্তনালিগুলো সংকুচিত করে ও পেশিতে রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
৫. শ্বাসকার্যের সমস্যা
পটাশিয়ামের অভাবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ পটাশিয়াম রিলে সংকেতকে সাহায্য করে, যা ফুসফুসকে সংকোচন ও প্রসারিত করতে সহায়তা করে। আর যখন রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা মারাত্মক কমে যায়, তখন আপনার ফুসফুস সঠিকভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
৬. মেজাজে পরিবর্তন
পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে তার ফলে মেজাজ পরিবর্তন ও মানসিক ক্লান্তি হতে পারে। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তা মস্তিষ্কের সংকেতগুলোকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে মেজাজ পরিবর্তন ও মানসিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
পটাশিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা
১. বিটরুট
বিটরুটে কলার চেয়েও বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এক কাপ বিটরুটে প্রায় ৫১৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকতে পারে। এ কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রক্তনালিগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করে ও হৃদরোগে উপকারী হিসেবে কাজ করে।
২. ডালিম
ডালিম অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ফল ও পটাশিয়ামের একটি দুর্দান্ত উত্স। একটি ডালিমে ৬৬৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকতে পারে। এ ছাড়া ডালিম ভিটামিন সি, কে ও ফোলেটে পরিপূর্ণ। আর এ ফলটিতে বেশিরভাগ ফলের তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণও বেশি থাকে প্রায় ৪ দশমিক ৭ গ্রাম পর্যন্ত।
৩. পালংশাক
পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পালংশাক। আর এর এক কাপে প্রায় ৫৪০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকতে পারে। তাই এ খাবারটিও আপনার শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করতে পারে।
৪. মটরশুটি
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে মটরশুটিও পটাশিয়ামের একটি অনেক ভালো উৎস। এক কাপ মটরশুটিতে প্রায় ৮২৯ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকতে পারে।
৫. মিষ্টি আলু
পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটাতে চাইলে অনেক ভালো একটি খাবার হতে পারে মিষ্টি আলু। কারণ মাঝারি আকারের একটি মিষ্টি আলুতে প্রায় ৫৪১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকতে পারে।
৬. ডাবের পানি
অনেকেই মনে করেন যে ডাবের পানি শুধু শরীরকে হাইড্রেট করতে উপকারী। কিন্তু এটি যে শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতিও মেটাতে সহায়তা করে তা অনেকেই জানেন না। এক কাপ বা ২৪০ মিলিলিটারে প্রায় ৬০০ মিলি পর্যন্ত পটাশিয়াম মেলে এতে।
৭. টমেটো বা টমেটো সস
টমেটো বা রান্না করা টমেটো খেলে তা আপনার শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করতে পারে। কারণ মাত্র তিন চামিচ বা ৫০ গ্রাম টমেটোতেই ৪৮৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকে।
৮.আলু
আলু প্রধানত স্টার্চযুক্ত সবজি। বিশ্বজুড়ে আলু সবচেয়ে জনপ্রিয় সবজি। একটি ১৩৬ গ্রাম ওজনের আলুতে থাকে ৫১৫ মিলিগ্রামেরও বেশি পটাশিয়াম। বিশেষজ্ঞদের মতে আলু পটাশিয়ামের অন্যতম আধার। একটি ছোটো আলু সিদ্ধতে পটাশিয়াম থাকে ৭৩৮ মিলিগ্রামের বেশি। আলুর নানা প্রজাতি থাকে। এবং এক এক প্রজাতির আলুর পটাশিয়ামের মাত্রা এক এক রকম হয়।
৯.মাশরুম
মাশরুম বেশ সুস্বাদু এবং প্রিয় খাবার। একশো গ্রাম মাশরুমে ৪২০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম পাওয়া যায়। মাশরুমেরও নানা প্রজাতি রয়েছে সেগুলির একেকটির পটাশিয়ামের মাত্রা একেক রকম।
১০.কুমড়ো
একশো গ্রাম কুমড়োতে আছে প্রায় ৩৪০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। এছাড়াও এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ভিটামিন এ প্রভৃতি।
১১.সোয়াবিন
সোয়াবিনে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে এক কাপ বা ১৫৫ গ্রাম সোয়াবিনে থাকে প্রায় ৬৭৬ মিলিগ্রাম। এছাড়াও সোয়াবিনে আছে প্রায় ১২১ শতাংশ ফোলেট,, ভিটামিন কে, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
পটাশিয়াম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১।পটাশিয়াম বেশি হলে কি হয়?
উত্তরঃশরীরের মধ্যে পটাশিয়ামের উচ্চ মাত্রা কিন্তু মোটেও নিরাপদ নয়, যা শরীরে খোঁচা খোঁচা সংবেদন, জ্বলন্ত ভাব, অসাড়, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, কম রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণ এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
২।একটি কলায় কত পটাশিয়াম থাকে?
উত্তরঃএকটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।
৩।পটাশিয়াম কম থাকলে কলা খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃবেশিরভাগ মানুষ তাদের খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পটাসিয়াম পান না। এটি অনুমান করা হয় যে আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কদের 0.015% এরও কম তাদের দৈনিক পটাসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে (3)। যেহেতু একটি মাঝারি কলায় এই খনিজটির জন্য প্রায় 9% ডিভি থাকে, তাই বেশিরভাগ লোকেরা এটিকে তাদের পটাসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য খাবার হিসাবে বিবেচনা করে ।
শেষকথা
পটাশিয়াম দ্রবণীয় উপাদান হওয়ায় রান্নার সময় এটি পানিতে মিশে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিদ্ধ আলুর কথা। যা তার অর্ধেক পরিমাণ পটাশিয়াম হারিয়ে ফেলে পানিতে সিদ্ধ করার সময়।
পটামিয়ামের অপচয় কমাতে সবজি সিদ্ধ করার পরিবর্তে ভাপিয়ে, মাইক্রোওয়েভে বেইক করে বা ভেজে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও সবজি সিদ্ধ করা পানি ফেলে না দিয়ে তা সুপ তৈরি করে বা ভাপিয়ে খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যাবে।
আরও-
বমি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে?
শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা-উপকারিতা-অপকারিতা
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার এর তালিকা
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
ক্যালসিয়ামের অভাব কি ভাবে হয় ?
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
আপনার জন্য আরো –
- ইংলিশে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ব্লগিং,ইউটিউবিং,ফেসবুকিং থেকে ইনকাম সম্পর্কিত ভিডিও পেতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত সকল তথ্য পেতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত সকল ভিডিও পেতে –এখানে ভিজিট করুন।