জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, যার মধ্যে দুশ্চিন্তা ও ঋণ অন্যতম। এই সমস্যাগুলো আমাদের মানসিক শান্তি ও দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলামে দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ কিছু দোয়া ও আমলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের মানসিক প্রশান্তি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা করে।
Also Read
দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, “হে আল্লাহর রাসুল, বহু ঋণ ও দুশ্চিন্তা আমাকে ঘিরে ধরেছে।” তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দেন এবং বলেন, “তুমি সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া পাঠ করবে, আল্লাহ তোমার সমস্ত ঋণ পরিশোধ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।”
দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাছালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের জুলুম থেকে।
এই দোয়াটি সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি প্রদান করবেন।
ঋণ মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া
হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, এক চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার কাছে এসে বলল, “আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে পারছি না। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন।” তিনি বললেন, “আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দেব না, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পাহাড় পরিমাণ ঋণও থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন।”
দোয়া:
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার হালালের মাধ্যমে আমাকে আপনার হারাম থেকে দূরে রাখুন এবং আপনার দয়ায় আপনি ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আমাকে মুক্ত করুন।
এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন।
দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য দোয়া
হজরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই এই দোয়া পাঠ করতেন:
দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাছালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের জুলুম থেকে।
এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা দুশ্চিন্তা দূর করবেন।
দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পেতে ইসলামে প্রদত্ত দোয়া ও আমল অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত এই দোয়াগুলো পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। তবে, দোয়ার পাশাপাশি আমাদের উচিত সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের
দোয়া পাঠের সময় ও নিয়ম
উপরোক্ত দোয়াগুলো নিয়মিতভাবে সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করা উচিত। নামাজের পর, বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের পর এই দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এছাড়া, যে কোনো সময় দোয়া করতে পারেন, তবে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে দোয়া করা অভ্যাসে পরিণত করলে তা অধিক কার্যকর হয়।
দোয়ার সাথে সাথে করণীয়
দোয়ার পাশাপাশি আমাদের কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যেমন:
- আর্থিক পরিকল্পনা: আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
- অলসতা পরিহার: কর্মঠ হওয়া এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার।
- সদকা ও দান: সম্ভব হলে দান করা, যা আল্লাহর রহমত লাভের উপায়।
- ধৈর্য ও স্থিরতা: পরিস্থিতি যাই হোক, আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
উপসংহার
দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পেতে ইসলামের প্রদত্ত দোয়া ও আমল অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত দোয়া, সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা আমাদের জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: দোয়াগুলো কখন পড়া উচিত?
উত্তর: সকাল ও সন্ধ্যায়, বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর দোয়াগুলো পড়া উচিত।
প্রশ্ন ২: দোয়া পড়ার পাশাপাশি আর কী করা উচিত?
উত্তর: দোয়ার পাশাপাশি সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা, অলসতা পরিহার, সদকা ও দান করা, এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত।
প্রশ্ন ৩: দোয়াগুলো কি আরবি ভাষায় পড়তে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, দোয়াগুলো আরবি ভাষায় পড়া উচিত। তবে অর্থ বুঝে পড়লে তা হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন ৪: দোয়া পড়ার সময় কোন নিয়ম মানতে হবে?
উত্তর: দোয়া পড়ার সময় মনোযোগ সহকারে এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন