ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ-ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। এটি বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণ। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে তখনই আক্রান্ত হয় যখন মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়।
দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণটিকে মোটেই অবহেলা করা মত নয়, যার কারণ হচ্ছে, এটি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তাই অবহেলা না করে ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণ, চিকিৎসা ও ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।আজকের পোস্টে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি?
উপক্রান্তিয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান দেশে ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বর একটি অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। ভারতবর্ষে প্রধানত প্রাক-গ্রীষ্ম এবং বর্ষা সময় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যায়। এপ্রিল মাসে এই হাড় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণত হ্রাস পেতে দেখা যায়।
ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকা কি কি এবং তা কীভাবে ওজন বাড়ায়?
ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশেও এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। সময় এবং অঞ্চল-বিশেষে এই রোগ মহামারির আকারও ধারণ করে। বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায়, এবং দেরিতে চিকিৎসার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কোন বিশেষ লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় বাড়ি তে থেকেই এই রোগের নিরাময় করা সম্ভব। শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই রোগীকে হসপিটালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। সেই ক্ষেত্রেও 1–2 সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভাল হয়ে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। এই রোগ সম্বন্ধে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি ভীষণ জরুরী। সামান্য কিছু উপায় মেনে চললে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করেতে পারি। এই রোগ লোকালয়ে ছড়িয়ে পরার হাত থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কী?
প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন, এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কিনা। চিকিৎসকরা কিন্তু ঠিক তেমনটা বলছেন না। বরং তারা বলছেন, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা এই ভাইরাস ছড়াতে থাকে।
হালকা ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রচণ্ড জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার। তবে যারা আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরবর্তীতে এ রোগ দেখা দিলে প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কী কী
তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যে কারোরই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো সবারই ভালোভাবে জানা উচিত। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১।জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে,
২।মাথাব্যথা,
৩।বমি,
৪।চোখের পেছনে ব্যথা,
৫।চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ),
৬।শরীরে শীতলতা অনুভব করা,
৭।ক্ষুধা কমে যাওয়া,
৮।কোষ্ঠকাঠিন্য,
৯।স্বাদের পরিবর্তন,
১০।হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং
১১।পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা হওয়া।
ডেঙ্গুর গুরুতর উপসর্গ গুলি হলো
১।প্রচণ্ড পেট ব্যথা
২।ক্রমাগত বমি হওয়া
৩।মারি বা নাক থেকে রক্তপাত
৪।প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত
৫।অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা
৬।ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ (যা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে)
৭।দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
৮।ক্লান্তি
৯।বিরক্তি এবং অস্থিরতা
১০।ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়।
১১।রক্ত রবাহে ক্লট-তৈরির কোষগুলির (প্ল্যাটলেট) সংখ্যা কমে যেতে থাকে।
এর জন্য মানুষের শরীরে শক লাগা, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত, যে কোন অঙ্গের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হতে পারে। রোগীর শরীরে গুরুতর উপসর্গ গুলির কোন একটি দেখা দিলে অতি অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগী কে নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় রোগীর প্রাণসংকট হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের ধরন
চিকিৎসকদের মতে, মানুষের সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়-
১।ক্ল্যাসিকাল এবং
২।হেমোরেজিক।
ক্ল্যাসিকালে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। বিপদ ঘটে হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে। এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পাঁচ থেকে সাত দিন পর মারাত্মক সংকটাপন্ন হতে পারে।
হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তপাত হয়, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা কমে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা দেয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এতে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায়। কিছু সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, দাঁতের মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত ঘটে। মলের সঙ্গেও মাঝে মাঝে রক্ত বের হতে পারে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি কারো কারো রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যখন রোগীর হাত-পা দ্রুত ঠান্ডা হওয়া শুরু করে এবং রক্তচাপ কমে যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করে। এতে তার মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও আরম্ভ হয়। কেউ কেউ বমি করে বা তাদের বমি বমি ভাব হয়। এই সময়টায় কোনো কোনো রোগীর হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা, ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, লিভারে সমস্যা, অথবা ব্রেনে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে। এতে তাদের শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুঃখজনক হলো, এর ফলে অনেক রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা
যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করুন। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ওষুধ বা স্প্রে দিতে পারেন। সুরক্ষিত থাকতে দিনে যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরাই ভালো।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ কারণে অফিস, ঘর এবং এর আশেপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে ২-৩ দিন পর পর তা পরিবর্তন করুন। অনেক সময় ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচের মতো স্থানে পানি জমে থাকে, ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখুন।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজের যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কিছু বিপদ সংকেত জানা থাকলে সতর্ক হতে সুবিধা হবে। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তবমি হলে- দেরি না করে, সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গুতে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে
ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের উপরে যাদের বয়স। এছাড়া গর্ভবতী নারী, যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
এছাড়া ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে এ সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হলেই প্রথমে একজন অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে, জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সাধারণত জ্বরের শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু NS1 টেস্ট করার কথা পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে আরো থাকে CBC, SGPT, SGOT টেস্ট করার পরামর্শ।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
যেকোনো রোগে বা রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করলে অথবা নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু করা ভালো। ডেঙ্গু জ্বরের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।জেনে নিন ডেঙ্গুর প্রতিকারে যা যা করা প্রয়োজন-
১।জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
২।জ্বরের মাত্রার উপর নির্ভর করে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর পর এই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
৩।ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি দিনে ৪টি ঔষধ নিতে পারবেন। এর বেশি নিলে লিভারের সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে।
৪।ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর কমাতে গিয়ে অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক এনএসএআইডি গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার না করার প্রতি কড়াভাবে নিষেধ করেন ডাক্তাররা।
৫।জ্বর কমানোর জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছতে পারেন অথবা গোসল করাটাও এক্ষেত্রে কার্যকরী।
৬।যেহেতু ডেঙ্গু রোগীরা অধিকাংশ সময়ই ক্লান্ত থাকেন, তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
৭।লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কোনো ভারী কাজ অথবা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। তবে তাই বলে শুধু শুয়ে-বসে থাকাটাও ঠিক নয়। স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
৮।এ সময় বাসার বাইরে না যাওয়াই ভালো।
ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের সংখ্যা সাধারণত কত হয়?
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয় 150,000 থেকে 450,000 প্লেটলেট প্রতি microliter রক্তে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা 20,000 এর নিচে চলে যেতে পারে। এই সময় রক্তপাতের ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়। মাঝারি ঝুঁকি পূর্ণ রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা 21-40,000/cumm মধ্যে থাকে।
অবশ্য ডেঙ্গু সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রেই প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্লেটলেট কাউন্ট কম এবং রক্তক্ষরণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তবেই প্লেটলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। অন্যথায় সংক্রমণ কমার সাথে সাথে আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে প্লেটলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পায়। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীরা যা খাবে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য, কিছু পুষ্টি উপাদান বিশেষ ভাবে উপকারী হতে পারে, যেমন
১।ভিটামিন সি (সাইট্রাস ফল, বেরি এবং শাক-সবজিতে পাওয়া যায়)।
২।জিঙ্ক (সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং বাদামে পাওয়া যায়)
৩।আয়রন (মাংস, মটরশুঁটিতে পাওয়া যায়)
৪।ওটমিল (সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)
৫।পেঁপে
৬।নারিকেলের জল
৭।সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার শরীর কে হাইড্রেট করার জন্য।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীরা যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
ডেঙ্গু হলে যে খাবার
সহজে হজম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগী দের খাওয়া উচিত নয়। যেমন –
১।আমিষ খাবার
২।চর্বি
৩।তৈলাক্ত খাবার
৪।ভাজাভুজি
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি রোগীর খাবারের দিকেও মনোযোগী হতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দ্রুত সেরে ওঠার জন্য ডাক্তাররা কিছু খাবার খেতে পরামর্শ দেন। চলুন দেখে নেই, সেই খাবারগুলো কী কী।
কমলা
কমলা ও কমলার রস ডেঙ্গু জ্বরে ভালো কাজ করে। এতে আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই দুটি উপাদান ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।
ডালিম
ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। যদি আপনি নিয়ম করে ডালিম খান, তাহলে বেড়ে যাবে প্লাটিলেটের সংখ্যা। এই উপকারি ফলটি খেলে ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূতিও দূর হবে।
ডাবের পানি
ডেঙ্গু হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ডাবে রয়েছে ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণের সব উপাদান। তাই এ সময় বেশি করে ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
পেঁপে পাতার জুস
ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে কমে যেতে পারে প্লাটিলেট। তাই এ সময় আপনার উপকার করতে পারে পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতায় পাপাইন এবং কিমোপেইনের মতো এনজাইমসমৃদ্ধ, যা হজমে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করতে পারে প্লাটিলেটের পরিমাণও। সেজন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ এমএল পেঁপে পাতার তৈরি জুস খেতে হবে।
হলুদ
ডেঙ্গু জ্বরে কাজে আসতে পারে হলুদও। এর জন্য আপনাকে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি আপনাকে অতিদ্রুত সুস্থ করে তুলবে।
মেথি
ডেঙ্গু হলে কাজে আসবে মেথি। এটি অতিরিক্ত জ্বর কমিয়ে আনতে কাজ করে। তবে মেথি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রুকলি
ব্রুকলি ভিটামিন কে এর উৎস। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; তাহলে অবশ্যই তাকে বেশি করে ব্রুকলি খেতে দিতে হবে।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই শাকটি বেশি করে গ্রহণ করলে অতিদ্রুত প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
১।ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?
উত্তরঃডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে দুগ্ধজাত খাবার শরীরে পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়ামের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিনজাতীয় খাবার তাড়াতাড়ি রোগ সারাতে মুখ্য ভূমিকা নেয়। তাই এই সময় খাবারে মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, বাদাম ইত্যাদি থাকা একান্ত জরুরি। প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে পরিচিত হল পেঁপেঁপাতার রস।
২।ডেঙ্গু কত বার হতে পারে?
উত্তরঃডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। তবে যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে সেটি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
৩।কি হলে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়?
উত্তরঃডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।
৪। ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কত?
উত্তরঃপ্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার স্বাভাবিক সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। কেবল ডেঙ্গু নয়, আরও নানা রোগে রক্ত সংক্রমণে এই প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে পারে। তবে তা কমে এক লাখের নিচে আসে সাধারণত জটিল সময়ে। ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট সামান্য কমলেও সাধারণত এক লাখের বেশি থাকে।
৫।ডেঙ্গুর প্রথম পর্যায় কি?
উত্তরঃরোগটি 3টি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় যার মধ্যে রয়েছে: জ্বর ফেজ , ক্রিটিক্যাল ফেজ এবং রিকভারি ফেজ। জ্বরের পর্যায়: সাধারণত অসুস্থতার প্রথম 3 দিনে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকে: রোগীর হঠাৎ 39-40 ডিগ্রি সেলসিয়াস উচ্চ জ্বর হয়।
৬।ভাইরাস জ্বর কি ১০ দিন থাকতে পারে?
উত্তরঃভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বেশিরভাগ জ্বর 3 থেকে 4 দিন স্থায়ী হয়, যদিও কিছু 1 দিনের কম স্থায়ী হতে পারে এবং অন্যগুলি, যেমন ডেঙ্গু জ্বরের কারণে 10 দিন বা তার বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ভাইরাল জ্বর অন্তর্নিহিত ভাইরাসের উপর নির্ভর করে তাপমাত্রা 99°F (37.2°C) থেকে 103°F (39.4°C) হতে পারে।
৭।মশা কামড়ালে কতদিন পর ডেঙ্গু জ্বর হয়?
উত্তরঃডেঙ্গু ফ্লু-এর মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং 2-7 দিন স্থায়ী হয়। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সংক্রামিত মশার কামড়ের 4-10 দিনের ইনকিউবেশন পিরিয়ডের পরে হয়। উচ্চ জ্বর (40°C/104°F) সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তত দুটির সাথে থাকে: মাথাব্যথা।
শেষকথা
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। তাই নগরবাসীকে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন। প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Post Tags –
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ চিকিৎসা,ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে,বাচ্চার ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার,ডেঙ্গু টেস্ট কি কি,ডেঙ্গু রোগের কারণ,ডেঙ্গু রোগের কারণ ও প্রতিকার
আপনার জন্য আরো –
- ইংলিশে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ফ্রিল্যান্সারদের স্বপ্ন পূরণের ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ব্লগিং,ইউটিউবিং,ফেসবুকিং থেকে ইনকাম সম্পর্কিত ভিডিও পেতে – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত সকল তথ্য পেতে – এখানে ভিজিট করুন।
- ফেসবুকে ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত সকল ভিডিও পেতে –এখানে ভিজিট করুন।