বর্তমান সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ রাষ্ট্রের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার জন্য আয়কর হিসেবে প্রদান করতে হয়। এটি একটি আর্থিক দায়িত্ব হওয়ার পাশাপাশি নাগরিকের সমাজে নৈতিক দায়িত্বও বহন করে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা যায়, যার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, এবং সামাজিক সেবা খাতে অর্থায়ন করা সম্ভব হয়।
তবে অনেকেই আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না বা কিভাবে এটি জমা দিতে হয় তা জানেন না। প্রায়ই আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন, যেমন ‘আয়কর রিটার্ন কত টাকা?’ বা ‘রিটার্ন ফাইল করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?’ ইত্যাদি জানতে আগ্রহী থাকেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আয়কর রিটার্নের সংজ্ঞা, এর বিভিন্ন ধরন, এবং রিটার্ন ফাইল করার উপায়সহ সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যা আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দেবে।
আয়কর রিটার্ন কী?
আয়কর রিটার্ন হলো একটি আর্থিক বিবরণী, যা নির্দিষ্ট একটি সময়ে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক আয়ের উপর সরকারকে জানানো হয়। মূলত আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে একজন নাগরিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক আয়, খরচ, বিনিয়োগ, এবং অন্যান্য আয় সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে, যার ভিত্তিতে তাদের উপর নির্ধারিত করের পরিমাণ হিসাব করা হয়।
আয়কর রিটার্ন ফাইল করা মানে শুধুমাত্র কর পরিশোধ করা নয় বরং এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে তাদের আয়ের স্বচ্ছতা প্রদর্শন করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব এবং একই সাথে রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখার একটি উপায়। যারা নির্ধারিত আয়ের ঊর্ধ্বে আয় করেন তাদের আয়কর রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক।
আয়কর রিটার্নের ধরন
আয়কর রিটার্নের ধরন মূলত আয়করদাতার প্রকারভেদ এবং তাদের আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে। আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হলে আয়করদাতাকে তাদের নিজস্ব আয় ও ব্যবসায়িক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক ফরম পূরণ করতে হয়। নিচে আয়কর রিটার্নের প্রধান ধরনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন
এটি সাধারণত ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর প্রদানকারীদের জন্য প্রযোজ্য। চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার, স্বাধীন ব্যবসায়ী, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত আয়ের উৎস থেকে যারা আয় করেন তাদের জন্য এই রিটার্ন ফাইল করতে হয়। এখানে আয়, বিনিয়োগ, খরচ, এবং কর ছাড়ের হিসাব দেওয়া হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর রিটার্নের জন্য নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়।
২. ব্যবসায়িক আয়কর রিটার্ন
যারা নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করেন বা অংশীদারিত্বে ব্যবসায় যুক্ত আছেন, তাদের জন্য এই রিটার্ন ফাইল করতে হয়। ব্যবসায়িক আয়কর রিটার্নে ব্যবসার আয়, খরচ, লভ্যাংশ, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপের তথ্য দিতে হয়। এটি ব্যবসায়ের আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং সরকারকে কর সংগ্রহে সহায়তা করে।
৩. কোম্পানি আয়কর রিটার্ন
বড় এবং ছোট সব ধরনের কোম্পানির জন্য আয়কর রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। কোম্পানি রিটার্ন ফাইলিংয়ে কোম্পানির মোট আয়, খরচ, কর্পোরেট বিনিয়োগ, এবং কর ছাড়ের তথ্য দিতে হয়। এই রিটার্ন ফাইলের মাধ্যমে সরকার কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে এবং নির্দিষ্ট কর পরিমাণ নির্ধারণ করে।
৪. হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (HUF) আয়কর রিটার্ন
ভারতে হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের (Hindu Undivided Family – HUF) জন্য এই রিটার্ন ফাইল করতে হয়। এটি একটি বিশেষ ধরণের আয়কর রিটার্ন, যা পরিবারের সকল সদস্যের সম্মিলিত আয় হিসেবে গণনা করা হয় এবং নির্দিষ্ট কর হার অনুযায়ী কর প্রদান করা হয়।
৫. ট্রাস্ট ও দাতব্য সংস্থা আয়কর রিটার্ন
ট্রাস্ট, দাতব্য সংস্থা এবং এনজিওগুলোকে আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হয়, যদিও এদের উপর সাধারণত করের হার কিছুটা কম হয়। এই সংস্থাগুলোকে তাদের আয়ের উৎস, খরচ এবং কর ছাড়ের তথ্য প্রদান করতে হয়।
৬. প্রোপার্টি ইনকাম রিটার্ন
যারা জমি, ভবন বা অন্য সম্পত্তির মালিক এবং সেখান থেকে আয় করেন তাদের জন্য এই ধরনের রিটার্ন প্রযোজ্য। প্রোপার্টি ইনকাম রিটার্নে সম্পত্তি থেকে আয় ও তার খরচ উল্লেখ করতে হয়।
৭. পেশাদার আয়কর রিটার্ন
ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, এবং অন্যান্য পেশাদার যারা পেশা থেকে আয় করেন, তাদের জন্য পেশাদার আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য। এখানে তাদের আয়ের উৎস ও খরচের তথ্য দিতে হয়।
৮. আন্তর্জাতিক আয়কর রিটার্ন
যেসব ব্যক্তি বা কোম্পানি আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করেন এবং বিদেশ থেকে আয় করেন, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক আয়ের উৎস ও প্রাসঙ্গিক খরচের তথ্য এখানে প্রদান করতে হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন বিশেষ পরিস্থিতির জন্য বিশেষ ধরনের রিটার্ন ফাইল করা হতে পারে। আয়কর রিটার্নের এই ধরনের বৈচিত্র্য সরকারকে কর সংগ্রহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং করদাতাদের জন্য তাদের আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ দেয়।
আয়কর রিটার্নের নির্ধারিত টাকা ও পরিমাণ
বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফি নেই। তবে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতাকে তাদের আয়ের উপর নির্ধারিত কর পরিশোধ করতে হয়। করযোগ্য আয়ের পরিমাণ এবং করের হার নির্ভর করে করদাতার আয়ের স্তর, বয়স, লিঙ্গ এবং অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়ের উপর।
করমুক্ত আয়ের সীমা:
বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা নিম্নরূপ:
- পুরুষ করদাতা: ৩,৫০,০০০ টাকা
- মহিলা করদাতা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ করদাতা: ৪,০০,০০০ টাকা
- যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: ৫,০০,০০০ টাকা
- প্রতিবন্ধী করদাতা: ৪,৫০,০০০ টাকা
করহার:
করযোগ্য আয়ের উপর প্রযোজ্য করহার নিম্নরূপ:
- ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত: করমুক্ত
- পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত: ১০%
- পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত: ১৫%
- পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত: ২০%
- পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত: ২৫%
- এর ঊর্ধ্বে: ৩০%
যদি কোনো পুরুষ করদাতার বার্ষিক আয় ৫,০০,০০০ টাকা হয়, তবে করমুক্ত সীমা ৩,৫০,০০০ টাকা বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় হবে ১,৫০,০০০ টাকা। এই করযোগ্য আয়ের উপর প্রযোজ্য করহার অনুযায়ী কর নির্ণয় করা হবে।
দ্রষ্টব্য: উপরোক্ত তথ্য সাধারণ নির্দেশনা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। আয়কর আইন ও বিধিমালা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট কর অফিসের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
রিটার্ন ফাইলের উপকারিতা
আয়কর রিটার্ন ফাইল করা শুধুমাত্র আর্থিক দায়িত্ব পালন নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারও প্রদান করে। নিচে আয়কর রিটার্ন ফাইলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. আইন মেনে চলা:
প্রত্যেক করদাতার জন্য কর আইন অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে একজন নাগরিক আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পালন করেন এবং এটি একটি দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে।
২. ভবিষ্যতে লোন পাওয়ার সুবিধা:
বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন গৃহ ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ বা ব্যবসায়িক ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো আয়কর রিটার্নের তথ্য চেয়ে থাকে। রিটার্ন ফাইল করলে এটি আপনার আয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে এবং লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রদান করে।
৩. ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়ক:
বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। বিশেষত উচ্চ আয়ের দেশে ভ্রমণ ভিসার জন্য আয়কর রিটার্নের দাখিল প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।
৪. পরবর্তী সময়ে কর হিসাবের সুবিধা:
আয়কর রিটার্ন ফাইল করা থাকলে আপনার আগের বছরের আয় ও করের হিসাব সহজেই পুনরুদ্ধার করা যায়। এটি পরবর্তী বছরে রিটার্ন ফাইল করার সময় হিসাব ঠিক রাখতে সহায়ক হয়।
৫. অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান:
আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করদাতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখেন। এটি সরকারকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে, যা দেশের সমগ্র জনগণের জন্য উপকার বয়ে আনে।
৬. আইনগত সুরক্ষা:
নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আপনি আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। আয়কর রিটার্ন ফাইল করা থাকলে অযথা আইনগত ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং জরিমানা ও শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৭. ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সুযোগ:
আপনার আয়ের হিসাব এবং কর পরিশোধের রেকর্ড দেখিয়ে ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়। রিটার্ন দাখিল করা থাকলে নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি বা অন্যান্য অর্থনৈতিক চুক্তিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৮. কর রিফান্ডের সুযোগ:
কিছু ক্ষেত্রে আপনি আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করলে তা ফেরত পেতে পারেন। কর রিটার্ন ফাইল করলে সেই অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থের রিফান্ডের সুযোগ থাকে, যা আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে।
৯. বীমা পলিসি গ্রহণের সুবিধা:
উচ্চ মানের বীমা পলিসি গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। রিটার্ন ফাইল করা থাকলে বীমা কোম্পানিগুলো আয়-ব্যয়ের স্থিতি দেখে সহজেই বীমা প্রদান করে থাকে।
১০. সম্পদ ঘোষণা ও প্রমাণ:
রিটার্ন ফাইল করলে আপনার সম্পদের হিসাব রাখা সহজ হয় এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়লে সম্পদ প্রমাণ করতে পারে। এটি বিশেষত সম্পত্তি বিক্রয়, ক্রয় বা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সহায়ক।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করদাতারা তাদের আয়ের সঠিক রেকর্ড রাখতে পারেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনগত ও আর্থিক সুবিধা লাভ করতে পারেন। এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং একই সাথে দেশের উন্নয়নের জন্য একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
কিভাবে আয়কর রিটার্ন ফাইল করবেন
বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা এখন সহজ ও সুবিধাজনক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ প্রদান করেছে, যা করদাতাদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে। নিচে ধাপে ধাপে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
১. ই–টিআইএন (e-TIN) নিবন্ধন:
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রথমে ই-টিআইএন নম্বর প্রয়োজন। যদি আপনার ই-টিআইএন না থাকে, তবে NBR-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
২. ই–রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন:
ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে যান। সেখানে ‘eReturn’ অপশনে ক্লিক করে ‘সাইন আপ’ বাটনে ক্লিক করুন। প্রথম বক্সে আপনার ই-টিআইএন নম্বর এবং দ্বিতীয় বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর (প্রথম শূন্য বাদ দিয়ে) লিখুন। ক্যাপচা কোড দিয়ে ‘ভেরিফাই’ বাটনে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপি কোড দিয়ে ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করুন এবং একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।
৩. ই–রিটার্ন সিস্টেমে লগইন:
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, ই-টিআইএন নম্বর, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা কোড দিয়ে সিস্টেমে লগইন করুন। লগইন করার পর ড্যাশবোর্ডে ‘রিটার্ন সাবমিশন’ অপশনে ক্লিক করুন।
৪. কর নির্ধারণ তথ্য প্রদান:
‘রিটার্ন স্কিম’ হিসেবে ‘ইউনিভার্সাল সেলফ’ নির্বাচন করুন। ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ হিসেবে বর্তমান করবর্ষ নির্বাচন করুন। ‘রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস’ সঠিকভাবে নির্বাচন করুন।
৫. আয়ের উৎসের বিবরণ প্রদান:
আপনার আয়ের উৎস অনুযায়ী সঠিক তথ্য প্রদান করুন। যদি আপনার আয়ের একমাত্র উৎস বেতন হয়, তবে ‘স্যালারি’ অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন। অন্যান্য আয়ের উৎস থাকলে সেগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট অপশনে তথ্য প্রদান করুন।
৬. বিনিয়োগ ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান:
আপনার বিনিয়োগ, যেমন জীবন বীমা, ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদির তথ্য প্রদান করুন। এছাড়া, বার্ষিক ব্যয়ের বিবরণী প্রদান করুন, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে ব্যয়।
৭. কর ও পেমেন্ট তথ্য প্রদান:
যদি আপনি পূর্বে কোনো উৎসে কর বা অগ্রিম কর প্রদান করে থাকেন, তবে তার তথ্য প্রদান করুন। সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কর নির্ণয় করবে এবং প্রদেয় করের পরিমাণ দেখাবে।
৮. রিটার্ন সাবমিশন ও রসিদ ডাউনলোড:
সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করার পর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। সফলভাবে রিটার্ন দাখিল হলে একটি রসিদ ডাউনলোডের অপশন পাবেন। রসিদটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
দ্রষ্টব্য: আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা সাধারণত ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে, সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য NBR-এর ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট কর অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
অনলাইন রিটার্ন ফাইলিং
বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া সহজ ও সুবিধাজনক করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) অনলাইন রিটার্ন ফাইলিং সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে করদাতারা ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, যা সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে।
অনলাইন রিটার্ন ফাইলিংয়ের ধাপসমূহ:
- ই-টিআইএন (e-TIN) নিবন্ধন: অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রথমে ই-টিআইএন নম্বর প্রয়োজন। যদি আপনার ই-টিআইএন না থাকে, তবে NBR-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
- ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন: ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে gov.bd ওয়েবসাইটে যান। সেখানে ‘eReturn’ অপশনে ক্লিক করে ‘সাইন আপ’ বাটনে ক্লিক করুন। প্রথম বক্সে আপনার ই-টিআইএন নম্বর এবং দ্বিতীয় বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর (প্রথম শূন্য বাদ দিয়ে) লিখুন। ক্যাপচা কোড দিয়ে ‘ভেরিফাই’ বাটনে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপি কোড দিয়ে ফোন নম্বরটি নিশ্চিত করুন এবং একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।
- ই-রিটার্ন সিস্টেমে লগইন: রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, ই-টিআইএন নম্বর, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা কোড দিয়ে সিস্টেমে লগইন করুন। লগইন করার পর ড্যাশবোর্ডে ‘রিটার্ন সাবমিশন’ অপশনে ক্লিক করুন।
- কর নির্ধারণ তথ্য প্রদান: ‘রিটার্ন স্কিম’ হিসেবে ‘ইউনিভার্সাল সেলফ’ নির্বাচন করুন। ‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ হিসেবে বর্তমান করবর্ষ নির্বাচন করুন। ‘রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস’ সঠিকভাবে নির্বাচন করুন।
- আয়ের উৎসের বিবরণ প্রদান: আপনার আয়ের উৎস অনুযায়ী সঠিক তথ্য প্রদান করুন। যদি আপনার আয়ের একমাত্র উৎস বেতন হয়, তবে ‘স্যালারি’ অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন। অন্যান্য আয়ের উৎস থাকলে সেগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট অপশনে তথ্য প্রদান করুন।
- বিনিয়োগ ও ব্যয়ের তথ্য প্রদান: আপনার বিনিয়োগ, যেমন জীবন বীমা, ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদির তথ্য প্রদান করুন। এছাড়া, বার্ষিক ব্যয়ের বিবরণী প্রদান করুন, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে ব্যয়।
- কর ও পেমেন্ট তথ্য প্রদান: যদি আপনি পূর্বে কোনো উৎসে কর বা অগ্রিম কর প্রদান করে থাকেন, তবে তার তথ্য প্রদান করুন। সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কর নির্ণয় করবে এবং প্রদেয় করের পরিমাণ দেখাবে।
- রিটার্ন সাবমিশন ও রসিদ ডাউনলোড: সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করার পর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। সফলভাবে রিটার্ন দাখিল হলে একটি রসিদ ডাউনলোডের অপশন পাবেন। রসিদটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
দ্রষ্টব্য: আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা সাধারণত ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে, সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য NBR-এর ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট কর অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs): আয়কর রিটার্ন
১. আয়কর রিটার্ন কী?
আয়কর রিটার্ন হলো একটি আর্থিক বিবরণী, যা নির্দিষ্ট সময়ে আয়, খরচ এবং বিনিয়োগের হিসাব দিয়ে সরকারকে জমা দেওয়া হয়।
২. কেন আয়কর রিটার্ন ফাইল করা প্রয়োজন?
আয়কর রিটার্ন ফাইল করা দেশের আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক এবং এটি আপনার আয়ের স্বচ্ছতা প্রদর্শন করে। এছাড়া এটি ভবিষ্যতে ঋণ, ভিসা এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে সহায়ক।
৩. কারা আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে বাধ্য?
সাধারণত আয়ের একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি আয়কারী ব্যক্তিদের রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। ভিন্ন ধরনের করদাতার জন্য বিভিন্ন সীমা প্রযোজ্য।
৪.কীভাবে আয়কর রিটার্ন ফাইল করা যায়?
অনলাইনে etaxnbr.gov.bd সাইট থেকে ই-রিটার্ন সিস্টেমের মাধ্যমে রিটার্ন ফাইল করা যায় অথবা নিজ নিজ এলাকার কর অফিসে গিয়ে ম্যানুয়ালি ফাইল করা যায়।
৫. রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা কত?
প্রতি বছর সাধারণত ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায়। তবে সময়সীমা প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে।
৬. করমুক্ত আয়ের সীমা কত?
পুরুষদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩,৫০,০০০ টাকা, মহিলাদের জন্য ৪,০০,০০০ টাকা, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪,৫০,০০০ টাকা।
৭. অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে কী ধরনের তথ্য প্রয়োজন?
আয়ের উৎস, বিনিয়োগের বিবরণ, পূর্বের কর পরিশোধের তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরিচিতি সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন।
৮. আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী হয়?
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা এবং আইনি শাস্তি হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৯. কীভাবে রিটার্ন ফাইলের রসিদ পাওয়া যাবে?
সফলভাবে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার পর সিস্টেম থেকে একটি রসিদ ডাউনলোড করা যায়, যা প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
১০. রিটার্ন ফাইলের জন্য কী একজন পেশাদারের সহায়তা প্রয়োজন?
আয়কর রিটার্ন সহজ হলে নিজেই করতে পারেন, তবে জটিল আয়ের ক্ষেত্রে একজন পেশাদার আয়কর পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া উত্তম।
উপসংহার:
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা শুধু মাত্র আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের প্রতীক। আয়কর প্রদান এবং রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখা যায়। এটি অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা যেমন ব্যাংক ঋণ, ভিসা এবং বীমা গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রিটার্ন দাখিল করলে করের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় এবং অতিরিক্ত কর পরিশোধের ক্ষেত্রে রিফান্ড পাওয়ার সুযোগ থাকে।
বর্তমান সময়ে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগ করদাতাদের জন্য আরও সুবিধাজনক করেছে, যা সময় এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয় করে। তাই সকল করদাতার উচিত সময়মত রিটার্ন দাখিল করা এবং এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশীদারিত্ব পালন করা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিটার্ন ফাইল করলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব। অতএব, আয়কর রিটার্ন দাখিলের গুরুত্ব এবং উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থেকে সঠিক সময়ে রিটার্ন দাখিল করা উচিত।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔
প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-
মূল বেতন কত হলে আয়কর দিতে হবে? টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে? টিন সার্টিফিকেট খোলার নিয়ম চাকুরীজীবীদের জন্য ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জিরো অনলাইন আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇
- ইংলিশে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টিপস পেতে ভিজিট করুন – এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত টিপস পেতে ভিজিট করুন – এখানে ভিজিট করুন।
- ব্লগিং, ইউটিউবিং, ফেসবুকিং সম্পর্কিত টিপস পেতে ভিজিট করুন –এখানে ভিজিট করুন।
- বাংলা ই সার্ভিস সেবা সম্পর্কিত টিপস পেতে ভিজিট করুন – এখানে ভিজিট করুন
- ডিজিটাল অনলাইন প্রোডাক্ট কিনতে এবং জানতে ভিজিট করুন – এখানে ভিজিট করুন
↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇
➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।
➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন।
➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।
➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।
➡️IMO চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন।