আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত

3/5 - (2 votes)

বছরের ৩০ দিন ফরজ রোজা রাখা ছাড়াও সারা বছর প্রতি মাসে চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখলেও অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে আছে আইয়ামে বীজের রোজা অর্থাৎ প্রতিমাসের চাঁদের ১৩-১৪, ১৫ তারিখের রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সোয়াব পাওয়া যায়।তাই আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী। আমাদের প্রিয় নবী কখনোই এই রোজা গুলো ছাড়তেন না। তিনি প্রতিমাসে আইয়ামে বীজের রোজা রাখতেন।বিশ্বনবী তার সাহাবীদেরকেউ আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে উৎসাহিত করতেন।

বিশ্বনবী বলেন, “হে আব্দুল্লাহ, তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখবে। নেক আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশ গুণ নেকি। এভাবে সারা বছর রোজা হয়ে যায়। (মুসলিম ২৬১৯)

আজকের ব্লগে আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আইয়ামে বীজের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত, আইয়ামে বীজের রোজার হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অবশ্যই আমাদের আজকের ব্লগটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আইয়ামে বীজের রোজা নফল রোজার মধ্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল যা আমাদের প্রিয় নবী সর্বদা পালন করতেন। এতে করেই বুঝা যায় এই রোজার গুরুত্ব কতখানি। আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে এখন চলে যাব মূল আলোচনায়।

আইয়ামে বীজের রোজা কাকে বলে?

আইয়ামে বীজ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আইয়ামে বীজ শব্দ দুটি আরবি শব্দ। আইয়ামে শব্দের অর্থ হলো দিবসসমূহ, আর বীজ শব্দের অর্থ হলো নির্ভেজাল, সাদা,শুভ্র, খাঁটি।বছরের প্রতি হিজরী মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখকে বলা হয় আইয়ামে বীজ। অর্থাৎ চন্দ্র মাসের সবচেয়ে আলোকজ্জল তিনটি  রাতের সাথে সংশ্লিষ্ট দিনকেই বলা হয় আইয়ামে বীজ।

আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া আলাইহিস সালাম যখন বেহেস্তের নিষিদ্ধ ফল খায় তখন তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক চলে যায় এবং শরীরের রং কুৎসিত হয়ে যায়। এরপর তারা আল্লাহ তায়ালার হুকুমে চন্দ্র মাসের ১৩-১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখে এবং তাদের শরীরের রং পুনরায় উজ্জ্বল হয়ে যায় তাই চন্দ্র মাসের এই তিন দিনকে আইয়ামে বীজ বলা হয়।

আইয়ামে বীজের রোজা রাখা হয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।হিজরী মাসের বা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ হলো মাঝামাঝি সময় যে সময় চাঁদ বেশি শুভ্র থাকে তাই এই সময় আইয়ামে বীজের রোজা রাখা হয়। অনেকেই হয়তো আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না যার কারণে সঠিক তারিখে এই রোজা রাখতে পারেন না।

আইয়ামে বীজর রোজা কত তারিখ

আইয়ামে বীজের রোজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেনা এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। বিশ্বনবী তার জীবদ্দশায় আইয়ামে বীজের রোজা রাখতেন এবং সাহাবীদেরকেও রাখার জন্য তাগিদ করতেন। প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ হলো আইয়ামে বীজের রোজা রাখার তারিখ।আইয়ামে বীজের রোজা রাখার জন্য হিজরী মাসের ১২ তারিখ দিবাগত রাত্রে সেহরি করতে হবে। এভাবে যথাক্রমে তিনটি রোজা রাখতে হবে।

বিশ্বনবী প্রতিবছর প্রত্যেক চন্দ্র মাসের মধ্যভাগে অর্থাৎ ১৩, ১৪,১৫ তারিখের রোজা কখনো ছাড়তেন না। কাজেই তার উম্মত হিসেবে এই নফল ইবাদত আমাদের করাও অনেক ফজিলতের।

আইয়ামে বীজের রোজার সম্পর্কে হাদিস

আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে হাদিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা উল্লেখ আছে। আইয়ামে বীজের  রোজা রাখা অতিরিক্ত আমল কিংবা নফল আমল হলেও বিশ্বনবী নিয়মিত এই আমল করতেন বিধায় এর ফজিলত অনেক।  আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে হাদিসের কথাগুলো দেখুন 👇

১) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখবে-এটা তোমার জন্য ভালো। কেননা তোমার একটি সৎকাজ দশগুণ সমান; ফলে তুমি যেন পুরো বছরই রোজা রাখছো।’ (বুখারি)

২) হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখল; সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ অতঃপর এর সমর্থনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নাজিল করেন- ‘যে একটি নেকি নিয়ে আসে তার জন্য রয়েছে তার ১০গুণ।’ অতএব একদিন ১০ দিনের সমান।’ (তিরমিজি)

৩) হজরত ইবনু মিলহান আল-ক্বাইসি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আইয়ামে বিজের রোজার ব্যাপারে নসিহত করেছেন; আমরা যেন তা (মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ পালন করি। তিনি আরও বলেছেন, এটা সারা বছর রোজা রাখার মতোই।’ (আবু দাউদ)

৪)বিশ্বনবী বলেন, “প্রত্যেক মাসে কিছু (নফল) রোযা পালন করলে (চন্দ্র মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।”

(তিরমিযীঃ ৭৬১, নাসায়ীঃ ২৪২৪, শায়খ আলবানীর মতে হাসান সহীহ, তাহকীক রিয়াদুস সালেহীন)

৫) আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“প্রত্যেক মাসে কিছু (নফল) রোযা পালন করলে (চন্দ্র মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।”

(তিরমিযীঃ ৭৬১, নাসায়ীঃ ২৪২৪, শায়খ আলবানীর মতে হাসান সহীহ, তাহকীক রিয়াদুস সালেহীন)

৬) আবু দরদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমার প্রিয় বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এমন তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, যা আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ত্যাগ করব না। সেগুলো হচ্ছে: প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির না পড়ে ঘুমাতে না যাওয়া।”(সহীহ মুসলিমঃ ৭২২)

৭) আ’ব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা, সারা বছর ধরে রোযা রাখার সমান।”(সহীহুল বুখারীঃ ১১৫৯, ১৯৭৫)

আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত

আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা তার সাহাবাদের উৎসাহিত করতেন। কেননা বিশ্বনবী এই তিনটি রোজা হিজরী মাসে পালন করতেন। বিশ্ব নবী কখনোই চন্দ্র মাসের তিনটি রোজা ছাড়তেন না এমনকি সফরে যখন যেতেন তখনও তিনি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের রোজা রাখতেন। আইয়ামে বীজের রোজার রাখার জন্য তিনি সাহাবাদের তাগিদ দিতেন কিন্তু তার উম্মতদের জন্য এই রোজা বাধ্যতামূলক নয়।

প্রতি হিজরী মাস কিংবা চন্দ্র মাসে এই তিনটি রোজা রাখা মুস্তাহাব। যদিও আইয়ামে বীজের রোজা রাখা নফল ইবাদত কিন্তু তবুও এটি অনেক বেশি ফজিলত পূর্ণ। বিশ্বনবী বলেন, চন্দ্র মাসের তিন দিন রোজা রাখলে পুরো বছরের রোজার ছোয়াব পাওয়া যায়।

হাদিসে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি যদি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও তাহলে ১৩-১৪ এবং ১৫ তম দিনে রোজা রাখবে।( তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ)

আইয়ামে বীজের রোজা অক্টোবর ২০২৪

আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে ইতোমধ্যেই আমরা বলেছি চন্দ্র মাসের ১৩-১৪, ১৫ তারিখে আইয়ামে বীজের রোজা রাখার দিন ধার্য করা হয়। ২০২৪ সালের হিজরি ১৪৪৫ এর জিলকদ মার শুরু হয় ১০মে ২০২৪ শুক্রবার থেকে।এই বছরের প্রতি মাসে চাঁদ দেখার উপর হিসাব করে গর্ভবতী আইয়ামে বীজের রোজা রাখতে হবে।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদ দেখার উপর হিসাব করে মাসের বিশেষ দিনগুলোর ঘোষণা দেন। সেই হিসেবে অবশ্যই এই বছরের চন্দ্র মাসের হিসাব করে আইয়ামে বীজের রোজা রাখার দিনগুলো জানা যাবে।

প্রশ্ন উত্তর

আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত কি?

আইয়ামে বীজের রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার মতো সোয়াব পাওয়া যায়। চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ এই ৩ দিন আইয়ামে বীজের রোজা রাখার জন্য ধার্য করা হয়।এটি একটি নফল আমল।

সপ্তাহে কি কি বার রোজা রাখা যায়?

বিশ্বনবী সপ্তাহের দুই দিন রোজা রাখার জন্য বলেছেন। তিনি তার জীবদ্দশায় সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এ ব্যাপারে নবী সাঃ বলেন, এই দিন দুটিতে বান্দার আমল গুলো মহান আল্লাহর সামনে হাজির করা হয়।

আইয়ামে বীজ মানে কি?

আইয়ামে বীজ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আইয়ামে বীজ শব্দ দুটি আরবি শব্দ। আইয়ামে শব্দের অর্থ হলো দিবসসমূহ,আর বীজ শব্দের অর্থ হলো নির্ভেজাল, সাদা,শুভ্র, খাঁটি।বছরের প্রতি হিজরী মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখকে বলা হয় আইয়ামে বীজ।আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া আলাইহিস সালাম যখন বেহেস্তের নিষিদ্ধ ফল খায় তখন তাদের শরীর থেকে জান্নাতি  পোশাক চলে যায় এবং শরীরের রং কুৎসিত হয়ে যায়। এরপর তারা আল্লাহ তায়ালার হুকুমে চন্দ্র মাসের ১৩-১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখে এবং তাদের শরীরের রং পুনরায় উজ্জ্বল হয়ে যায় তাই চন্দ্র মাসের এই তিন দিনকে আইয়ামে বীজ বলা হয়।

শেষ কথা –

আজকে আর্টিকেলে আইয়ামে বীজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আইয়ামের বীজের রোজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যারা এতক্ষণ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়লেন সকলকে ধন্যবাদ।আজকের মতো এই পর্যন্তই।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবীদের নাম জেনে নিন

মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম সমূহ  সম্পর্কে জেনে নিন

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণসহ

এশার নামাজ মোট কয় রাকাত ও কি কি? পড়ার নিয়ম এবং দোয়া

↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇

↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️IMO চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

 

Welcome to our banking tips blog! I'm Sanaul Bari, a passionate financial educator and experienced banking professional dedicated to helping individuals and businesses navigate the complex world of finance. With over a decade of experience in the banking industry, I’ve held various positions, from customer service representative to financial advisor, gaining a comprehensive understanding of banking products, services, and strategies.

Leave a Comment