অবসর গ্রহণের পর এক ব্যক্তির আয়ের উৎস কমে যায়, এবং অনেক সময় তাদের জীবিকার সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। “সর্বজনীন পেনশন কি?” প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এবং এই স্কিমের সুবিধা, প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই ব্লগ পোস্টটি পড়ুন।
Also Read
সর্বজনীন পেনশন কি?
সর্বজনীন পেনশন একটি জাতীয় পেনশন স্কিম যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকেরা অবসর গ্রহণের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। এটি একটি সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা জনগণের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
বিশেষ করে, এই পেনশন স্কিমের লক্ষ্য হলো দরিদ্র ও প্রবীণ জনগণের জন্য একটি আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে তারা বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক সংকটে না পড়েন। সর্বজনীন পেনশন দেশের উন্নয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ইতিহাস
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মাধ্যমে প্রথম এই ব্যবস্থা চালু হলেও, বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশ এই ধরনের পেনশন স্কিম চালু করেছে।
ভারতে, “প্রধানমন্ত্রীর শ্রীঋণ পেনশন যোজনা” নামে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম ২০১৫ সালে চালু হয়। এটি দরিদ্র ও নিম্নআয়ের শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ পেনশন ব্যবস্থা যা তাদের অবসরকালীন সময়ের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে।
কিভাবে কাজ করে সর্বজনীন পেনশন?
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার মূলত তিনটি প্রধান ধাপ রয়েছে:
- অংশগ্রহণ: একজন নাগরিক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং তার অবসরকালীন আয়ের জন্য জমা শুরু করতে পারেন।
- অর্থ প্রদান: অংশগ্রহণকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্কিমে জমা দেন, যা সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যায়।
- পেনশন প্রাপ্তি: অবসরকালীন বয়সে, অংশগ্রহণকারী এই স্কিম থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক পেনশন পেতে থাকেন।
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা যা মানুষকে তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
সর্বজনীন পেনশন সুবিধা
১. আর্থিক সুরক্ষা: প্রবীণ বয়সে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী থাকার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২. সামাজিক সুরক্ষা: সর্বজনীন পেনশন দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যা দেশজুড়ে সামাজিক সমতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
৩. স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা: কিছু পেনশন স্কিমে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত সুযোগও থাকে।
৪. দারিদ্র্য বিমোচন: এটি দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে কম আয়ের জনগণের জন্য।
সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা
১. অর্থের অভাব: এই স্কিম কার্যকর করার জন্য সরকারের পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন, যা সবসময় নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
২. অবহেলা ও সচেতনতার অভাব: অনেকেই পেনশন স্কিমের বিষয়ে সচেতন নন বা এতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী নন।
৩. অর্থনৈতিক সংকট: জাতীয় অর্থনীতি সংকটে পড়লে, পেনশন সিস্টেমে অসুবিধা হতে পারে এবং পেনশনের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
সার্বজনীন পেনশন স্কিমা করতে যোগাযোগ
সার্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে, আপনি বাংলাদেশের বাংলাদেশ পেনশন কর্তৃপক্ষ বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমানে, স্কিমটি সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক এবং বিমা কোম্পানির মাধ্যমে এটি কার্যক্রমে আছে।
যোগাযোগের জন্য কিছু উপায়
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:
- বাংলাদেশ সরকার এবং পেনশন স্কিম সম্পর্কিত তথ্য পেতে সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (যেমন: http://www.mopa.gov.bd) ভিজিট করতে পারেন।
- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান:
- যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পেনশন স্কিমের সাথে যুক্ত, সেখানে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- পোস্ট অফিস
- যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পেনশন স্কিমের সাথে যুক্ত, সেখানে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
- টেলিফোন বা হটলাইন:
- পেনশন স্কিম সম্পর্কিত কোনও তথ্য জানতে আপনি সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর বা ব্যাংকের হটলাইনে কল করতে পারেন।
- স্থানীয় ব্যাংক শাখা:
- আপনার স্থানীয় ব্যাংক শাখায় গিয়ে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারবেন।
- মোবাইল অ্যাপ বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম:
- কিছু পেনশন স্কিমের জন্য নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টাল রয়েছে, যেখানে আপনি ডিজিটালভাবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
এভাবে আপনি সার্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে সাহায্য পেতে পারেন।
উপসংহার
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা যা দেশটির প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি শুধু ব্যক্তি বা পরিবারকে নয়, সমাজকে সার্বিকভাবে এক নতুন আশা এবং সুরক্ষা প্রদান করে। যদিও এটি কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, তবে সরকারের যথাযথ নীতিমালা এবং নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এটি আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
অবসরকালীন জীবনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পেনশন স্কিম ভবিষ্যতে একটি উন্নত সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: সর্বজনীন পেনশন কি সমস্ত মানুষের জন্য পাওয়া যাবে?
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সাধারণত সেই সকল নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য যারা শর্তগুলো পূরণ করে। তবে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব নীতিমালা অনুসারে কিছু শর্ত থাকতে পারে।
প্রশ্ন ২: এই পেনশন স্কিমে কত টাকা পাওয়া যাবে?
পেনশনের পরিমাণ নির্ভর করবে যে আপনি কতটুকু অর্থ স্কিমে জমা দিয়েছেন তার ওপর। সাধারণত, যারা বেশি সময় পর্যন্ত জমা প্রদান করেন তারা বেশি পরিমাণ পেনশন পেতে পারেন।
প্রশ্ন ৩: সর্বজনীন পেনশন কি সরকারি স্কিম?
হ্যাঁ, সর্বজনীন পেনশন একটি সরকারি উদ্যোগ। সরকারের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয় এবং জনগণের জন্য সুবিধা প্রদান করা হয়।
আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন