শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কথা

Rate this post

শবে মেরাজের আমল-শবে মেরাজ মুসলমানদের জন্য বিশেষ একটি দিন। সবে মেরাজকে ঊর্ধ্ব গমনের রাত বলা হয়। কেননা এই রাতেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার ডাকে সাড়া দিয়ে ঊর্ধ্ব জগতে ভ্রমণ করেছিলেন যার ফলে এই রাতকে বলা হয় সবে মেরাজ। সবে মেরাজের আমল সম্পর্কে অনেক প্রচলিত কথা আমরা শুনি। শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কথার সাথে এইসব প্রচলিত কথার অনেক অমিল রয়েছে।

শবে মেরাজের আরবি শব্দ হচ্ছে লাইলাতুল মেরাজ। নিঃসন্দেহে লাইলাতুল মেরাজ কোরআন হাদিসের দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং মুসলমান জাতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই রাতের আমল সম্পর্কে ইসলামে কোনো ফরজ কিংবা সুন্নত আমলের বিধান নেই। তবে অন্যান্য দিনের মতো নফল আমল করা নিয়ে কোন বাধা নেই।

শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামী বিধান অনুসরণ করা জরুরি।আমাদের সমাজে শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে যে প্রচলিত কথা রয়েছে তার মধ্যে অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করা বেদায়াত। কাজেই শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কথাগুলো আমাদের জানতে হবে। প্রিয় মুসলমান ভাই-বোনেরা আজকের আর্টিকেলে শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেই বিষয়গুলোই আমরা তুলে ধরব। আশা করি শেষ পর্যন্ত আজকের ব্লগটি পড়ে সাথে থাকবেন।

শবে মেরাজ কি

শবে মেরাজ হলো লাইলাতুল মেরাজের ফারসি অর্থ। শবে মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন।শবে মেরাজের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সারা দিয়ে আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জগতে ভ্রমণ করেন যার কারণে ইসলামে এই রাতের গুরুত্ব অনেক। সবে মেরাজের রাতেই নবীর উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কে ফরজ করা হয়।শবে মেরাজ মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের সমাজে শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে যেসব প্রচলিত বাণী ছড়ানো হয় তা অনেকাংশেই সঠিক নয়।

শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামে বিশেষ কোনো ফরজ কিংবা সুন্নত আমলের কথা বলা হয়নি।অন্যান্য দিনের মতো শবে মেরাজের রাতে ও আমল করা যাবে তবে তা হবে নফল।আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রাতকে ঘিরে বিশেষ আমল করেনি এবং তার সাহাবে কেরামকেও এই রাতে বিশেষ কোন আমল করতে দেখা যায়নি।

শবে মেরাজের ঘটনা ইতিহাস

শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের বাণী শ্রেষ্ঠ বিধান।শবে মেরাজের রাতে প্রচলিত আমল গুলোকে ইসলামের বিধান বলে প্রচার করা বিদআত। শবে মেরাজের ঘটনা ও ইতিহাস ইসলামে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজে গমন করার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই রাতের আমল সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে। তাই চলুন জেনে নেই শবে মেরাজের ঘটনা ও ইতিহাস👇

হিজরতের পূর্বের কথা। এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন, চোখদুটো মুদে এসেছে। তবে হৃদয়-মানস ছিল জাগ্রত। এরই মাঝে আগমন করলেন হযরত জিবরাঈল (আ.)। তিনি নবীজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন জমজমের নিকট। একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনা হলো। তা ছিল ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ; তাতে জমজমের পানি। জিবরাঈল (আ.) নবীজির বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করলেন। বের করে আনলেন নবীজির হৃদয়। যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামত। ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ করে দেওয়া হলো নবীজির কলব।

এরপর আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারী। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়া থেকে ছোট। নাম বুরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে।

বাইতুল মুকাদ্দাসে মহানবী (সা.)

এভাবে নবীজি (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বুরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাঈল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের অপরটি শরাবের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আ.) বললেন, আপনি (দ্বীনের) স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন।

নবীজি মদের পেয়ালা নেওয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিবরীল (আ.) বলেন, আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৯৪)

প্রথম আসমানে প্রিয়নবী (সা.)

এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাঈল নবীজিকে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে দস্তক দিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? বললেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হলো, তার কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হাঁ। এরপর নবীজিকে সম্ভাষণ জানানো হলো- মারহাবা, উত্তম আগমনকারীর আগমন ঘটেছে! খুলে দেওয়া হলো নবীজির জন্য আসমানের দরজা।

নবীজি প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হযরত আদম (আ.)। জিবরাঈল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজি আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন- মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হযরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন।

নবীজি যখন দ্বিতীয় তৃতীয় আসমানে

এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানেও দরজা খুলতে প্রথম আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। এরপর নবীজিকে ইস্তেকবাল করা হলো। নবীজি সেখানে দেখতে পেলেন দুই খালাত ভাই হযরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সাথে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজিকে স্বাগত জানালেন- মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তারা নবীজির জন্য দোয়া করলেন।

এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেও দুই আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ হলো এবং নবীজিকে স্বাগত জানানো হলো। সেখানে গিয়ে দেখলেন হযরত ইউসুফ (আ.)। হযরত ইউসুফের সাথে নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। নবীজি (সা.) বলেন, হযরত ইউসুফকে যেন দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য ঢেলে দেওয়া হয়েছে!

চতুর্থ, পঞ্চম ষষ্ঠ শেষ আসমানে নবীজি

এরপর চললেন চতুর্থ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। স্বাগত-সম্মান জানানো হলো। সেখানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হযরত ইদরীস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন।

এরপর চললেন পঞ্চম আসমানের দিকে। সেখানে হযরত হারূন (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো।

এরপর চললেন ষষ্ঠ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের পর্বগুলোর মতো জিজ্ঞাসা করা হলো। নবীজিকে অভিনন্দন জানানো হলো। সেখানে দেখা হলো হযরত মূসা আ.-এর সাথে। হযরত মূসা আ. নবীজিকে খুব ইস্তেকবাল করলেন।

বাইতুল মামুর সিদরাতুল মুনতাহায় নবীজি

এরপর নবীজি সপ্তম আসমানের দিকে উঠতে থাকেন। সেখানে দেখা হলো হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে। জিবরাঈল আ. পরিচয় করিয়ে দিলেন- ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে সালাম বিনিময় করলেন।

নবীজি বলেন, হযরত ইবরাহীম আ. তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে ছিলেন। বাইতুল মামুর, যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসে। এরপর এই সত্তর হাজার আর ফিরে আসে না। এভাবে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে ফেরেশতাদের নতুন নতুন কাফেলা আসতে থাকে।

এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহার দিকে। সেই কুল বৃক্ষের একেকটি পাতা হাতির কানের মতো। আর একেকটি ফল মটকার মতো বড় বড়। যখন ওটাকে আল্লাহর বিধান আচ্ছন্ন করে নিল তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। সৃষ্টির কারো সাধ্য নেই তার সৌন্দর্যের বিবরণ দেবার। জিবরাঈল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদীদুটি কোনগুলো? জিবরাঈল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো নীল নদ ও ফুরাত নদী।

উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ

এরপর আল্লাহ তাআলা নবীজির প্রতি যে ওহী পাঠানোর পাঠালেন। দিনরাতে উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। নবীজি আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাতের এ হাদিয়া নিয়ে ফেরত আসছিলেন; এর মধ্যে দেখা হযরত মূসা আ.-এর সাথে। হযরত মূসা আ. জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের জন্য কী দিয়েছেন? নবীজি বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। হযরত মূসা বললেন, আপনার উম্মত রাত-দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে না। আপনার আগে আমি উম্মত চালিয়ে এসেছি। আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে কমিয়ে আনেন।

নবীজি সে মতে আল্লাহর কাছে গিয়ে কম করে দেওয়ার দরখাস্ত করলেন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। নবীজি তা নিয়ে ফেরত আসছিলেন। আবার হযরত মূসা আ.-এর সাথে দেখা হলো। বললেন, আপনার উম্মত তা পারবে না। আপনি আরো কমিয়ে আনুন। নবীজি আবার আল্লাহর কাছে গিয়ে আগের মতো দরখাস্ত করে আরো পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে আনলেন। নবীজি বলেন, এভাবে আমি আল্লাহ ও মূসার মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকি।

শেষবার আল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ! এই হলো দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে দশ নামাজের সাওয়াব। এভাবে বান্দা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। কেউ কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে কিন্তু করতে পারবে না, তার জন্যও নেকি রয়েছে; এক নেকি। আর যদি ভালো কাজটি করে তাহলে তার জন্য দশ নেকী। আর কেউ কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করলে কোনো গুনাহ লেখা হবে না। তবে তা করে বসলে একটি গুনাহ লেখা হবে।

নবীজি এ সওগাত নিয়ে ফেরত আসছিলেন। হযরত মূসার সাথে দেখা হলো। মূসা আ. এবার শুনে বললেন, আপনি যান, আরো কমিয়ে আনুন। আপনার উম্মত পারবে না। বনী ইসরাঈলের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে। নবীজি বললেন, আমার আর কিছু বলতে লজ্জা হচ্ছে! (বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস: ১৬২, ১৬৪)

নবীজিকে যখন বুরাকে তোলা হচ্ছিল তখন বুরাক ঔদ্ধত্য দেখাল। তখন জিবরাঈল আ. বললেন, মুহাম্মাদের ক্ষেত্রে এরকম করছিস! তোর উপর তো এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ কোনোদিন চড়েনি। এ শুনে বুরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। (তিরমিজি, হাদিস: ৩১৩১)

নবীজির জন্য হাউজে কাউসার

আল্লাহ তাআলা নবীজির জন্য যে বিশেষ উপহার হাউজে কাউসার রেখেছেন প্রথম আসমানে নবীজিকে তা দেখানো হয়। নবীজি সেই কাউসারের বিবরণও দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস: ৭৫১৭)

[9:12 pm, 20/10/2024] Lakhi Hasan: নবীজি (সা.) যখন প্রথম আসমানে যান- দেখেন এক ব্যক্তি, তার ডান পাশে কিছু রূহ আর বাম পাশে কিছু রূহের কাফেলা। তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন আর বাম দিকে তাকালে কাঁদেন। তিনি নবীজিকে সম্ভাষণ জানালেন। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল! ইনি কে? জিবরাঈল বললেন, ইনি আদম আ.। আর তার দুই পাশে তার সন্তানদের রূহ। ডানদিকেরগুলো জান্নাতী আর বামদিকেরগুলো জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডানদিকে তাকিয়ে হাসেন আর বামদিকে তাকিয়ে কাঁদেন। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪২)

জান্নাত-জাহান্নাম ভ্রমণে নবীজি

এ সফরে নবীজিকে জান্নাত-জাহান্নামের ভ্রমণও করানো হয়। নবীজি বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হলো মেশকের। (বুখারি, হাদিস: ৭৫১৭)

নবীজি এ সফরে একদল লোককে দেখলেন, তাদের নখগুলো তামার। নিজেদের নখ দিয়ে তারা নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে। জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল! এরা কারা?

বললেন, এরা ওই সমস্ত লোক, যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত। অর্থাৎ গীবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৩৪০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৭৮)

নবীজি এ সফরে মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর শারীরিক গড়নেরও বিবরণ দেন। নবীজি বলেন, আমি ইবরাহীমের আকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৯৪)

হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে মুলাকাত হলে তিনি নবীজিকে বলেন, আপনি আপনার উম্মতের কাছে আমার সালাম পৌঁছাবেন। আর তাদেরকে বলবেন, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও সুঘ্রাণযুক্ত, এর পানি সুমিষ্ট এবং এর ভূমি উর্বর ও সমতল। আর এর বৃক্ষ হচ্ছে-

سُبْحَانَ اللهِ وَالحَمْدُ لِلهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَر.

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬২)

মিরাজের সফরে নবীজিকে উপহার

এ সফরে নবীজিকে তিনটি উপহার দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে— তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম, হাদিস: ১৭৩)

এ সফরে নবীজির সাথে পূর্ববর্তী নবীগণের সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি নামাযে সকলের ইমামতি করেন। (মুসলিম, হাদিস: ১৭২)

এ সফরে নবীজি দেখলেন, একদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল বললেন, এরা বক্তৃতা করত বটে, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২২১১, ১২৮৫৬)

শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের বিধান

শবে মেরাজকে উপলক্ষ করে ইসলামে কোন ধরনের আমল করার কথা বলা হয়নি। শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামে কোন বিধান পাওয়া যায়নি।শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে আমাদের বিশ্বনবী এবং তার সাহাবায়ে কেরামের কোন বাণী হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। তাই শবে মেরাজকে ঘিরে কোন বিশেষ নামাজ কিংবা রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। বরং অন্যান্য রাতের মতোই এই রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ, নফল নামাজ পড়া জায়েয আছে।

মানুষের মুখে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শবে মেরাজে রাত জেগে আমল করা কিংবা আহার থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ রোজা রাখা নিষ্প্রয়োজন।

আমাদের সঙ্গে গুগোল নিউজে যুক্ত থাকুন –ফলো গুগোল নিউজ

শবে মেরাজের রোজা রাখা নিয়ে কোরআন হাদিসে কোন ধরনের বর্ণনা নেই।শবে মেরাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে কোন রোজা কিংবা বিশেষ নামাজ আদায় করেনি এবং তার সাহাবায়ে কেরামেও এই শবে মেরাজের রাতকে ঘিরে কোন আমল করতে দেখা যায়নি।সুতরাং শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামে কোন দলিল পাওয়া যায়নি।

শবে মেরাজের তাৎপর্য

শবে মেরাজ মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে আমাদের প্রিয় নবী মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমে ঊর্ধ্বজগতে গমন করেন এবং আল্লাহ তালার সাথে সাক্ষাৎ করেন।বিশ্বনবী তার উম্মতের জন্য এই রাতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হিসেবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে উপহার পান। সহীহ বুখারীর ৩৮৮৭ নং হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে শবে মেরাজের রাতে আমাদের বিশ্বনবী সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত জাহান্নাম  ঘুরে দেখেছিলেন ফেরেশতাদের মাধ্যমে। শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কোন বিধান না থাকলেও এই রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি।

রজব মাসের শবে মেরাজের ঘটনা ঘটে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রজব মাস থেকেই রমজান মাসের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু বলেন, ‘যখনই রজব মাস আসতো আমরা নবীজিকে আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।”

জিজ্ঞাসা উত্তর

মিরাজ কত খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়?

শবে মেরাজের রাতে আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করেন এবং আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই রাতে মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে আসেন। ৬২০ খ্রিস্টাব্দে শবে মেরাজ সংঘটিত হয়।

ইসরা মিরাজ কাকে বলে?

ইসরা শব্দের অর্থ হলো রাতে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ মেরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফরের কথা সূরা বনী ইসরাইলের উল্লেখ করা আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সফরকে বলা হয় ইসরা।

মেরাজ অর্থ সিঁড়ি বা ঊর্ধ্ব গমন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ হয়ে আরশের আজিম পৌঁছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করকে বলা হয় মেরাজ।

মেরাজের ঘটনা কোন সূরায় আছে?

আমাদের নবী করিম সাঃ এর শবে মেরাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সূরা নাজমের কয়েকটি আয়াতে । এছাড়াও সূরা বনি ইসরাইলের কয়েকটি আয়াতে ও ইসরা ও মেরাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

শেষ কথা –

শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কথা জানা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে যে বেদায়াত গুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত ছিল তা অবশ্যই আমাদের শুধরাতে হবে। শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামে কোন বিধানের কথা আলোচনা করা হয়নি। যার কারনে সবে মেরাজকে নিয়ে রোজা রাখা কিংবা নামাজ আদায় করা কোন ইসলামী শরীয়ত ভিত্তিক নয়। তবে কেউ যদি চায় শবে মেরাজের রাতে বিশেষ মনে করে আল্লাহর দরবারে নফল ইবাদত করতে পারে। শবে মেরাজের আমল সম্পর্কে ইসলামের কথাগুলো আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

প্রয়োজনীয় আরো পোস্ট সমূহ:-

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবীদের নাম জেনে নিন

মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম সমূহ  সম্পর্কে জেনে নিন

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণসহ

এশার নামাজ মোট কয় রাকাত ও কি কি? পড়ার নিয়ম এবং দোয়া

↘️ আমার আরো ওয়েবসাইট সমূহ👇

↘️ আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

➡️IMO চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

Assalamu Alaikum wa Rahmatullah. I am Md. Sanaul Bari a blogger and YouTube and Facebook content creator by profession.

Leave a Comment